আপনি কি ভেবেছিলেন, বাংলাদেশ ম্যাচটা জিততে পারবে? না ভেবে থাকলেও লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। এমনকি ১৬৯ রানে ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর যাঁরা গ্যালারি খালি করে চলে গেলেন, যারা হতাশা আর বিরক্তিতে চ্যানেল বদলে দিলেন টেলিভিশনের, তাঁদেরও বিব্রত হওয়ার দরকার নেই। খোদ বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও যে ভাবতে পারেননি, অবিস্মরণীয় একটা জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর দল!
গত কয়েকটা দিন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন, সঙ্গে ছিল ম্যাচ খেলার ক্লান্তি; কী মলিন চেহারা হয়ে পড়েছিল সাকিবের! কিন্তু জয়ের দিনে এমন মালিন্যেও মিশে থাকে ঔজ্জ্বল্য। সাকিবের স্মিত হাসিতেই বিজয়ের অট্টহাসি শোনা গেল সংবাদ সম্মেলনে। তবে ১৬৯ রানে ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরের মনের যে অবস্থা ছিল, সেটি লুকালেন না অধিনায়ক, ‘ভেবেছিলাম হেরে যাচ্ছি। যখন রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) উইনিং শটটা খেলল...আসলে এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, আমরা ম্যাচ জিতেছি! বুঝে উঠতে সময় লেগেছে আমরাই জিতেছি...।’ তার আগের সময়টা ড্রেসিংরুমে ফিজিওর টেবিলে গা এলিয়ে কথা বলছিলেন তামিম ইকবাল আর আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে। আলোচনার বিষয় আত্মসমালোচনা, ‘ফিজিওর বেডে শুয়ে শুয়ে ম্যাচ দেখছিলাম আর তামিম-রাজ্জাকের সঙ্গে কথা বলছিলাম কতটা বাজে শট খেলে আউট হয়েছি, সেসব নিয়ে।’
অসম্ভবও যখন সম্ভব হয়ে যায়, আবেগ আটকে রাখা কঠিন। ম্যাচ শেষে দুই বীর মাহমুদউল্লাহ-শফিউলকে বরণ করে নিতে মাঠে ছুটে আসা সাকিবও হলেন আবেগাক্রান্ত, জার্সিতে চোখ মুছতে মুছতে ফিরলেন ড্রেসিংরুমে। এমন অসম্ভবকে সম্ভব করার অনেকটা কৃতিত্বই শফিউল ইসলামের। অধিনায়কের প্রশংসা পেলেন তরুণ ক্রিকেটার, ‘আমি ভেবেছিলাম, শফিউল স্পিনারদের বলে দু-একটা বাউন্ডারি মারলেও মারতে পারে। তবে পেসারদের বিপক্ষে ওভাবে ব্যাট করবে ভাবতে পারিনি। সে আমাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। দারুণ কাজ করেছে দলের জন্য।’ প্রশংসা আছে ইমরুল কায়েস, নাঈম ইসলাম আর আবদুর রাজ্জাকের জন্যও।
জয়টা শেষ পর্যন্ত নাটকীয় হলেও ইংল্যান্ড ২২৫ রানে অলআউট হওয়ার পর জয়টাই দেখছিলেন সাকিব, ‘ওরা ২২৫ রান করার পর ভেবেছিলাম, ভালো ব্যাটিং করলে জিতব। কয়েক দিন ধরেই এখানে রাতে শিশির পড়ছে। এই কন্ডিশনে তাদের পক্ষে বল করাটা কঠিন হবে। জানতাম, ভালো ব্যাটিং করলে ম্যাচটা জিতব। শেষ পর্যন্ত তা-ই হলো।’ তবে শুধু আনন্দের কথাই নয়, ২২৬ রানের টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে ব্যাটসম্যানদের বাজেভাবে আউট হওয়ারও সমালোচনা করেছেন অধিনায়ক, সমালোচনা করেছেন নিজেরও, ‘দুইটা রানআউটসহ কিছু বাজে ভুল হয়েছে আমাদের। এসব ভুলে ম্যাচ ছুটে যেতে পারত। আমার উইকেটটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওই শট খেলার সময় ছিল না ওটা। যে উইকেটে সেট হবে, তাকে বড় রান করতে হবে।’
ইমরুল কায়েস সে কাজ কিছুটা করতে পেরেছেন। শুধু বিশ্বকাপ নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার উঠল তাঁর হাতে। ইমরুল তাতে খুশি, তবে বলেছেন, ‘আমি মনে করি, ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার শফিউলেরই প্রাপ্য ছিল। কিন্তু ওনারা আমাকে দিয়েছেন। কিছু বলার নেই।’
ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটা পারলে শফিউলের হাতেই তুলে দেন ইমরুল। সাকিব যেমন বিজয়ের অংশীদার করলেন গোটা দেশের মানুষকে, ‘এই জয় আর দশটা জয়ের মতো স্বাভাবিক জয় নয়। পুরো দেশের পরিস্থিতি চিন্তা করলে এটা আমাদের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্যও অনেক বড় জয়।’
বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে আরও দুটি ম্যাচ আছে বাংলাদেশের। সাকিব কি দেশবাসীকে আরও বড় কোনো উপহার দেওয়ারই অপেক্ষায় আছেন?
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।