প্রযুক্তি শুধু আশীর্বাদই নয়, অভিশাপও। ব্যবহারের তারতম্যের কারণেই প্রযুক্তি অভিশাপ হিসেবে দেখা দেয়। তাই প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সাথে সাথে এর অভিশাপও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিবেচনায় নিতে হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার এখনো সীমিত হলেও দ্রুত প্রসারমান। ফলে ক্রমবর্ধমান হারে আমরা সাইবার ক্রাইম হুমকির মুখে পড়েছি। তার ওপর প্রযুক্তিগত দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অসুবিধায় ফেলছে। এরই ফলে প্রচলিত আইনকে অবজ্ঞা করে নৈতিক মূল্যবোধ-পরিপন্থী ও বিকৃত মানসিকতা সৃষ্টিকারী পর্নো ওয়েবসাইট বাংলাদেশে সম্প্রচার হতে পারছে। আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে ওয়েবসাইট বিশেষজ্ঞরা বিকল্প পথ তৈরি করে রাখেন।
সম্প্রতি দেশে পর্নো সাইটের ব্যবহার বেড়ে গেছে। দেশের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো বহু পর্নো ভিডিওচিত্র, স্থিরচিত্র ও যৌন বিকৃতির বিষয়-আশয় ও আকর্ষণীয় প্রস্তাব প্রচার করা হচ্ছে বিদেশী বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। এ ধরনের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশীদের নগ্ন উপস্থিতিও চোখে পড়ছে। এ এক নিষিদ্ধ নেশা। অনৈতিক নেশার টানে স্কুল-কলেজের বহু শিক্ষার্থী বিপথগামী হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্লাকমেইল করার কৌশল বা আপত্তিকর ভিডিওচিত্র ধারণ করার ঘটনা অহরহ ঘটছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও।
পুলিশের কাছেও তথ্য রয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের বহু নর-নারীর একান্ত জৈবিক সম্পর্কের ভিডিও ও স্থিরচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দেশের মেয়েদের আকর্ষণীয় ছবি পতিতাবৃত্তির জন্যও প্রচার করা হচ্ছে। ছবি সুপারইম্পোজ করে নগ্নভাবে উপস্থাপন, কুরুচিপূর্ণ চ্যাট, ব্লগ ও অসামাজিক সম্পর্কের সিন্ডিকেট ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে।
পুলিশ এ ধরনের ৮৪টি ওয়েবসাইট চিহ্নিত করে এগুলো বন্ধের আবেদন জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। গুরুত্ব বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে বিটিআরসি ওই ৮৪টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বিটিআরসি’র ওই পদক্ষেপের খবর আগেই ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সেসব ওয়েবসাইটের কর্ণধাররা টার্গেট ওয়েবপেইজের সাথে লিঙ্ক তৈরি করে ঠিকানা বদলে নেয়। ফলে বিটিআরসি যখন ওই সব ওয়েবসাইট বন্ধ করে, তখন লিঙ্কের মাধ্যমে নতুন ঠিকানায় চলে যেতে পারে ব্যবহারকারীরা। ফলে বিটিআরসি’র এ পদক্ষেপের কোনো সুফল পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এ প্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন সাইবার ক্রাইমের মতো অসামাজিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য অনলাইন সার্ভিস জোগানদাতাদের নিজস্ব ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ ইউনিট থাকা জরুরি। অন্যথায় প্রতিনিয়ত সাইবার ক্রাইমের কবলে পড়তে হবে। ই-কমার্স চালু করার পর বাংলাদেশের সাথে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক লেনদেনও ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হবে, তখন পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। তখন চাইলে উন্নত বিশ্বের মেধাবী হ্যাকাররা আমাদের দেশের বহু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অর্থ মুহূর্তেই হাতিয়ে নিতে পারবে।
সাইবার ক্রাইম এবং ক্রিমিনালরা আরো ভয়াবহ রূপে আবির্ভাবের আগে আমাদের প্রযুক্তিগত সতর্কতা ও আইনি ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। স্মরণে রাখতে হবে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছাড়া প্রযুক্তির অভিশাপ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঠেকানো সম্ভব নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ দিকটি নিয়ে আরো সতর্ক হতে হবে। উপায় উদ্যোগও বাড়াতে হবে।
বিষয় সমুহ...
বিভাগীও শহর তথ্য কনিকা

আরো কিছু গুরুত্তপূর্ণ বিষয়...
প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও আইনি রক্ষাকবচ জরুরি
শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১১অন্তরভুক্ত বিষয় লেখকের কলাম
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।