ইরাক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে সমালোচনার মুখে পড়েছিল, লিবিয়ার ক্ষেত্রে সেই একই ভুল করতে চাইছে না ওয়াশিংটন। বিশ্লেষকেরা বলেছেন, হামলার একক দায় এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র এবার ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ন্যাটো বাহিনীকে সামনে ঠেলে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ার নীতি গ্রহণ করেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটসও বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে পরিষ্কার করেছেন।
ইতালির আভিয়ানো বিমানঘাঁটি থেকে লিবিয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান
রবার্ট গেটস গতকাল সোমবার রাশিয়ায় যাওয়ার পথে বিমানে তাঁর সহগামী সাংবাদিকদের বলেন, লিবিয়ায় হামলা চালানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অগ্রবর্তী ভূমিকা’ থাকবে না। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ ক্ষেত্রে মার্কিন বাহিনীর সীমিত ভূমিকা পালনের বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন।
রবার্ট গেটস বলেন, জোট বাহিনীর অংশীদার হিসেবে অভিযানে তাঁদের অংশগ্রহণ থাকবে, তবে তাঁরা নেতৃত্বে থাকবেন না। তিনি বলেন, তাঁরা ফ্রান্স-ব্রিটেন অথবা ন্যাটোকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর কথা ভাবছেন।
গেটস বলেন, কমান্ডের নেতৃত্ব হস্তান্তরের একাধিক বিকল্প আছে। একটা হচ্ছে ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের নেতৃত্ব, আরেকটি হলো ন্যাটো।
বিশ্লেষকেরা বলেছেন, তৃতীয়বারের মতো আরও একটি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর দায় থেকে ওবামা যুক্তরাষ্ট্রকে বাঁচাতে চাইছে। এ কারণে তিনি নিজে লিবিয়ার বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা দেননি। সেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ওপর। তবে তিনি বরাবরই বলে আসছেন, লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে সরে দাঁড়াতেই হবে।
বিশ্লেষকেরা বলেছেন, ২০০৩ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাকে অভিযান চালালে আরবসহ গোটা বিশ্বের মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের যে আগ্রাসী ভাবমূর্তি প্রকাশিত হয়, ওবামা সেটাকে নমনীয় অবস্থানে আনার চেষ্টা চালান। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে লিবিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এবার যথাসম্ভব পর্দার আড়ালে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৯ মার্চ মধ্যরাতে বহুজাতিক বাহিনী লিবিয়ার ওপর হামলা শুরু করে। লিবিয়ায় এই বিমান হামলার প্রতিবাদে রোববার যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মার্কিনরা। ইরাক ও আফগান যুদ্ধে বিরক্ত হয়ে ওঠা মার্কিন জনগণ নতুন করে আরেকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিপক্ষে। মুসলিম বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এখন আর আগ্রহী নয়।
প্রেসিডেন্ট ওবামা ইতিমধ্যে বলেছেন, যুদ্ধের জন্য লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থলবাহিনী পাঠানো হবে না। রোববার লিবিয়ায় বোমা হামলার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও বলেছেন, বোমা নিক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণও মনে করে, জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বশক্তিই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক। এএফপি, এপি ও পিটিআই অনলাইন।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।