ক্রিকেট বড় অনিশ্চয়তার খেলা

শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১১

পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ আছে এক দল মিরপুরে থাকে, অন্য দল মিরপুরে থাকে না আবার মিরপুরবাসীও দুই ভাগে বিভক্ত এক ভাগ সিমু নাসেরকে চেনে, আরেক ভাগ চেনে না আমি মিরপুরে থাকি এবং সিমু নাসের আমার বিশেষ পরিচিত
ছুটির দিনে, দুপুরবেলায় বিনা নিমন্ত্রণে কেউ বাসায় আসতে পারে, এটা আমার ধারণার বাইরে ছিল বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচে সিমু দুপুরবেলায় আমার বাসায় এসে উপস্থিত আমার দীর্ঘদিনের লালিত ধারণা নিমেষেই ধুলোয় মিশে গেল ‘রবি ভাই, আপনি খেলার টিকিট চেয়েছিলেন, বহু কষ্টে একটা টিকিট ম্যানেজ করেছি তবে আপনারটা ম্যানেজ করতে পারি নাই



আমি হেসে বললাম, খুব ভালো কথা তুমি কী এই খবর দেওয়ার জন্য এই দুপুরবেলায় আমার বাসায় এসেছ?
‘না, রবি ভাই আসছি আপনার গ্যারেজে মোটরসাইকেল রাখতে, স্টেডিয়ামে মোটরসাইকেল রাখার ব্যবস্থা নেই তো মোটরসাইকেলটা রইল, মিতু আপাকে বলেন চা দিতে, চা খেয়ে বিদায় হই
আমার ঘাম দিয়ে জ্বর সারল সিমুকে চা খাওয়ালাম, এরপর নেহাত ভদ্রতার বশে বললাম, ‘দুপুরে লাঞ্চ করে যাও’ অবশ্য খেলা তো আড়াইটায় শুরু, লাঞ্চ করতে গেলে তোমার দেরি হয়ে যেতে পারে (কথাটা আমি খুব ক্ষীণ স্বরে বলেছিলাম এত ক্ষীণ স্বরে যে আমি নিজেই কী বলেছি, ঠিকমতো শুনতে পাইনি)
কিন্তু সিমু ঠিকই কথাটা ক্যাচ করল বলল, ‘আরে, আপনার বাসা থেকে স্টেডিয়ামে যেতে লাগে দুই মিনিট আপনি বড় ভাই মানুষ, আপনার বাসায় না খেয়ে যাওয়াটা খারাপ দেখায়...ফ্রিজে মুরগি আছে না...’
মুরগি খেয়ে সিমু জানাল, লাঞ্চের পর ওর নাকি চা না খেলে ঘুম ঘুম লাগে এরপর সে একটা বিকট হাই তুলল কেলেঙ্কারির হাত থেকে বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসেবে তড়িঘড়ি আবার চায়ের ব্যবস্থা করা হলো
চা খাওয়ার পর সিমু শুধাল, ‘রবি ভাই, স্টেডিয়ামটা কোন দিকে যেন...একটু এগিয়ে দিয়ে আসবেন নাকি? আমি মিরপুর এলাকাটা ভালো চিনি না
‘এলাকা না চিনলে আমার বাসা চিনলা কীভাবে?’
‘ভুলেভালে কেমনে কেমনে জানি চলে আসছি
অতএব সিমুকে এগিয়ে দিতে গেলাম স্টেডিয়ামে ঢোকার আগে সে একটা দোকান দেখিয়ে বলল, ‘আপনার বাসার চায়ের চিনি কম ছিল মুখ তিতা হয়ে গেছে আসেন, দুই ভাই মিলে কোক খাই মুখ শুকায়েন না, বিল আমি দিব
কোক পানের পর যথারীতি আবিষ্কার হলো তার কাছে ভাংতি টাকা নেই ওকে স্টেডিয়ামে ঢুকিয়ে দেওয়ার পর মনে হলো যাক, আপদ গেছে
বাসায় ফিরে দম নিচ্ছি খেলা মাত্র পাঁচ ওভার গড়িয়েছে এমন সময় সিমুর ফোন, ‘রবি ভাই, আপনি কই? নিচে গিয়ে দেখে আসেন তো মোটরসাইকেল আছে, নাকি চোরে নিয়া গ্যাছে?’
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম পরপর দুই দিন শেভ না করলে আমার চেহারায় একটা চাকরবাকর ভাব চলে আসে, এটা আমি জানি তাই বলে এত? আবার পাঁচ তলা ভেঙে নিচে নামলাম মোটরসাইকেল জায়গামতো আছে
১০ ওভার পার হলো সিমুর ফোন, ‘মুরগি কি বাসি ছিল? পেট কেমন গুড়গুড় করতেছে আপনের বাসায় দুপুরে খাওয়াটা ঠিক হয় নাই আচ্ছা মোটরসাইকেলের খবর কী?’
১৫ ওভার আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম, আবারও সিমুর ফোন ‘রবি ভাই, একটু খোঁজ নেন তো মোটরসাইকেল গ্যারেজে ঠিকঠাক আছে কি না নিজের মোটরসাইকেল হলে কোনো সমস্যা ছিল না অফিসের গাড়ি তো
খেলার বাকি সময়টা আমি গ্যারেজে সিমুর মোটরসাইকেলের ওপর বসে ঝিমাতে লাগলাম বাই এনি চান্স যদি মোটরসাইকেল চুরি যায়, তাহলে দেশ ছেড়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমানো ছাড়া আমার কোনো উপায় থাকবে না
২.
আমার ধৈর্য কম বলে আজ অবধি কোনো ক্রিকেট ম্যাচ পুরোটা দেখতে পারিনি দীর্ঘ এই খেলা দেখতে গিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়ি এমনিতেই আমার ঘুম খুব পাতলা, কিন্তু কোনো এক বিচিত্র কারণে সেই ঘুম খুব গাঢ় হয় এর মধ্যে এক কাণ্ড হলো একটা টিকিট হাতে পেলাম বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ স্টেডিয়ামের হই-হুল্লোড়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার কোনো চান্স নেই কাজেই পুরো একটা ম্যাচ আগাগোড়া দেখার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে স্টেডিয়ামে গেলাম আমার মতো ধৈর্যহীন মানুষদের জন্য অত্যন্ত আদর্শ একটি ম্যাচ বলাই বাহুল্য কোনো প্রকার ঝিমুনি ছাড়াই খেলার প্রায় পুরোটা দেখে ফেললাম, একটানা অল্প একটু বাকি আছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং মাঝপথে গ্যালারি মোটামুটি জনশূন্য, সুনসান নীরবতা পাছে ঘুমিয়ে পড়ি এ জন্য একটু নিচে নামলাম সামনেই খাবারের দোকান বার্গার দেড় শ, স্যান্ডউইচ ৮০, পেপসি ৪০ ও বিরিয়ানি ২০০ টাকা কোনটা খাব, ভাবছি ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে শেয়ারবাজারের মতো খাবারের দরপতন হতে শুরু করল বার্গারের দাম টপ করে নেমে এল ২৫ টাকায় স্যান্ডউইচ ২০ টাকায় আবার চারটা বার্গার কিনলে একটা স্যান্ডউইচ ফ্রি খাবারের দরপতনের পেছনে কোনো সিন্ডিকেটের কারসাজি নেই খেলা চলার কথা রাত ১০টা পর্যন্ত পাঁচটার মধ্যে গ্যালারি ফাঁকা খাবার যাতে নষ্ট না হয়, এ জন্য এই বিশেষ ডিসকাউন্ট অবশ্য পেপসির দাম স্থির আছে ওটা পচবে না, ফ্রিজে রাখা যাবে আমি এই সুযোগে চারটা বার্গার খেয়ে ফেললাম
এই বার্গার খাওয়াটাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল একটুর জন্য পুরো একটা ম্যাচ একটানা দেখার বিরল সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হলাম গ্যালারিতে এসে দেখি, খেলা শেষ
তবু আরও আধা ঘণ্টা বসে রইলাম ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, যদি কিছু হয়!

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য