কল সেন্টার : শতকোটি ডলার আয়ের স্বপ্ন

রবিবার, ২০ মার্চ, ২০১১

বিশ্বের বিশাল বাণিজ্যিক খাত 'কল সেন্টার' বাংলাদেশে এখনো প্রায় বিনা মূল্যে পাওয়া গুরুত্বহীন লাইসেন্স মাত্র। এ পর্যন্ত ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নিলেও ৪৫৬টিরই সেবা কার্যক্রম চালু হয়নি। দুই বছর আগে লাইসেন্স দেওয়া শুরু হলেও এতে আদৌ ভালো ব্যবসা হবে কি না_এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটেনি। অনেকেই হতাশ হয়ে বিটিআরসির কাছে লাইসেন্স সমর্পণ করেছেন। শর্ত মেনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেবা কার্যক্রম শুরু না করায় বিটিআরসিকেও বাতিল করতে হয়েছে শতাধিক লাইসেন্স। পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটায় বিদেশি প্রতারকচক্রও সক্রিয়। তবে কিছু কল সেন্টার প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট সফলতা দেখিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে তিন ধরনের মোট ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে কল সেন্টারের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে লাইসেন্স সমর্পণ করেছে ৫৫টি প্রতিষ্ঠান এবং ১২৬টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আর সেবা কার্যক্রম চালু রেখেছে মাত্র ৭০টি প্রতিষ্ঠান। সন্তোষজনকভাবে চালু রয়েছে ৩৫টি। এগুলোর মধ্যে ঢাকায় ৩০টি, চট্টগ্রামে চারটি ও সিলেটে একটি। তবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বিএসিসিও) তথ্য অনুযায়ী দেশে সচল কল সেন্টারের সংখ্যা মাত্র ৩৩টি; তাও সার্বক্ষণিক সচল নয়।

http://amaderitaly.com/wp-content/uploads/2010/08/call-center.jpg

২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে তিন ধরনের ২১টি কল সেন্টারের লাইসেন্স দিয়ে বাংলাদেশে বিশাল বাণিজ্যিক সম্ভাবনার এ সেবা খাতটির উদ্বোধন করে। সেদিন বলা হয়, 'আমরা বিশ্বে ৬৪০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারের কল সেন্টার ব্যবসার ১ শতাংশও যদি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি, তাহলে ২০০৯-১০ সালে এ খাত থেকে বছরে প্রায় সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে আসবে।' অথচ ২০১০ সাল পার হতে চললেও সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
বিশ্বে এ ব্যবসার পরিমাণ ৮৮ হাজার ১৮০ কোটি ডলারে পেঁৗছলেও বাংলাদেশে গত দেড় বছরে এ খাতে আয় হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি টাকা। অথচ বছরে ৬৫০ কোটি ডলার আয়ের স্বপ্ন নিয়ে এ ব্যবসা শুরু হয়েছিল।
বিএসিসিওর সাধারণ সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন মোশাররফ কল সেন্টার ব্যবসার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অনেকে কল সেন্টারের লাইসেন্স নিয়েছিলেন বিষয়টি না বুঝেই। এ জন্য সরে পড়তেও তাঁরা দেরি করেননি। আবার যারা সব জেনে-বুঝেই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছিলেন, তাঁরাও অনেক ক্ষেত্রে প্রতিকূলতার সম্মুখীন। দুই বছর আগে এর শুরুতে কল সেন্টার পরিচালনা খরচ প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক কম ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে গিয়ে ওই ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। কল সেন্টারগুলো একই জায়গায় না হওয়ার কারণেও অন্যান্য দেশের মতো সুবিধা মিলছে না। পাকিস্তানে কল সেন্টারের জন্য কতগুলো সরকারি ভবন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কমন জেনারেটর ও ব্যান্ডউইড্থের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা বাংলাদেশে হলে অনেক কম খরচে কল সেন্টার পরিচালনা সম্ভব।'
রিয়াজউদ্দিন জানান, এজেন্ট সংকটও একটি বড় সমস্যা। ইংরেজি মাধ্যমের পাঁচ-ছয় হাজার ছাত্রছাত্রীই বর্তমানে সম্বল। এজেন্টই হচ্ছে কল সেন্টারের কাঁচামাল। দেশে এজেন্টের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য তথা ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী করে দক্ষ জনশক্তি দ্রুত না বাড়াতে পারলে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসবে না। বাংলাদেশে এ খাতে যে পরিমাণ ব্যবসা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা ফিলিপাইনের নিয়ন্ত্রণে চলে যতে পারে। ফিলিপাইনে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ভিত্তি করে কল সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে।
রিয়াজউদ্দিন আরো বলেন, 'বাংলাদেশ মাত্র একটি সাবমেরিন কেব্লের সঙ্গে যুক্ত। এটিও কল সেন্টারগুলোর জন্য একটি নেতিবাচক দিক। আমাদের বিদেশি গ্রাহকরা এ পরিস্থিতিকে কল সেন্টারের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে।'
রিয়াজউদ্দিন মোশাররফ জানান, ভারত, যুক্তরাজ্য ও পাকিস্তানের কিছু প্রতারকের প্রতারণার শিকার হয়েছে কয়েকটি কল সেন্টার। প্রতারকদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যাই বেশি। এরা বিদেশে ক্লায়েন্ট জোগাড় করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কল সেন্টার থেকে টাকা নেয়। অভিজাত হোটেলে থাকা-খাওয়ার সুবিধা নেয়। পরে লাপাত্তা হয়ে যায়।
তবে এসব ঘটনা একেবারে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন না রিয়াজউদ্দিন মোশাররফ। তিনি জানান, দেশে গার্মেন্ট ব্যবসা যখন শুরু হয়, তখন বিদেশি ক্রেতা জোগাড় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এখন গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা সচেতন হওয়ায় এবং বহির্বিশ্বে তাঁদের যোগাযোগ বেড়ে যাওয়ায় প্রতারণার ঘটনা তেমন ঘটে না।
বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশে কল সেন্টার খাতের উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে লন্ডনভিত্তিক 'আউটসোর্স' পত্রিকায় সেপ্টেম্বর সংখ্যায় বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। বার্মিংহামে কল সেন্টার মেলায় অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কল সেন্টারগুলোর জন্য আইপি ব্যান্ডউইড্থ ও ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজ সার্কিট সংযোগের চার্জ ৬০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কল সেন্টার লাইসেন্স বাতিল ও সমর্পণ সম্পর্কে বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কনসালট্যান্ট মেজর (অব.) এম এ কাশেম কালের কণ্ঠকে জানান, দুই বছর আগে যখন এ লাইসেন্স দেওয়া শুরু হয়, তখন যাঁরা চেয়েছেন তাঁদেরই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। যোগ্যতা যাচাই করে লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় যাঁরা লাইসেন্স নিয়েছেন, তাঁরা এটাকে মূল ব্যবসা হিসেবেও নেননি। এ ব্যবসা থেকে লাভ করার জন্য যে ধরনের বিনিয়োগ ও শ্রম প্রয়োজন, তা অনেকে দিতে চাননি। বিটিআরসির শর্ত ছিল, ছয় মাসের মধ্যে সেবা কার্যক্রম শুরু করতে না পারলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। শর্ত লঙ্ঘনের জন্যই অনেক লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ বছরও কল সেন্টারের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তবে যোগ্যতা সম্পর্কে জেনেই তা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, কল সেন্টারের লাইসেন্সধারী কেউ কেউ 'ই-ওয়ান' ভাড়া নিয়ে ভিওআইপির অবৈধ কারবারের সঙ্গে যুক্ত। এ সম্পর্কে এম এ কাশেম বলেন, 'প্রতি সাত দিন পরপর কল সেন্টারগুলো তাদের কল সম্পর্কে বিটিআরসিতে প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে এবং বিটিআরসি ওই কল পরীক্ষা করে দেখছে। এ ব্যবস্থায় ভিওআইপির অবৈধ কারবারের কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।'

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য