প্রযুক্তিকে নিয়ে গেছেন ফসলের মাঠে

রবিবার, ২০ মার্চ, ২০১১

পেশায় কৃষিবিদ তিনি কাজ করতে চান কৃষকের মাঠে তাই তো তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকের মাঠে পৌঁছে দেন দরকারি তথ্য কাশফিয়া আহমেদ ২০০৯ সালে পেয়েছেন ‘মন্থন পুরস্কার দক্ষিণ এশিয়া’মুঠোফোনের মাধ্যমে কৃষি-তথ্য দিয়ে উন্নয়নকাজে অবদান রাখার জন্যসামনে ই-ইন্ডিয়া রুরাল ইনফো, এম-মিলিওনথ এবং জাতীয় ই-তথ্য—এ তিনটি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তিনি

http://amaderitaly.com/wp-content/uploads/2010/07/2010-07-20-17-40-42-034762600-projukti.jpg

কৃষি আর তথ্যপ্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়ে কাশফিয়া আহমেদ সফল নারী উদ্যোক্তা হওয়ার ধাপগুলো পার করেছেন বেশ দ্রুতই সেগুলোর ধরনটা একটু দেখা যাক
রিং হচ্ছে মুঠোফোন ধরে অপেক্ষা করছেন এক কৃষক ওপাশে ‘হ্যালো’ বলতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি মনে দ্বিধা সৃষ্টি করা প্রশ্নটি করা যাবে এখন কিছুক্ষণ পরই সেটটি রেখে দিলেন হাসিমুখে যাক, পাওয়া গেল সমাধানটি
‘প্রতিদিন চার হাজারের মতো ফোন আসে কৃষকেরা তো আছেনই শিক্ষার্থী এবং আরও অনেকে করে থাকে এসব ফোন বহু দূরে বসেই কৃষিসংক্রান্ত অনেক সমস্যার সমাধান পেয়ে যাচ্ছে ফোন করা মানুষগুলো’ বলছিলেন কাশফিয়া আহমেদ উইন ইনকরপোরেট নামে কৃষিতথ্য সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তিনি প্রযুক্তির সঙ্গে কৃষকের মাঠের এই মিলন ঘটানোর ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছেন তিনি
কৃষকদের অবদান অনেক তবে বাংলাদেশের কৃষকেরা প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেকটাই পিছিয়ে বিশেষ করে ইন্টারনেট, কম্পিউটার কিন্তু মুঠোফোনের ব্যবহারে তাঁরা বেশ পটু প্রত্যেক কৃষক, যাঁরা কাজ করছেন মাঠে, সবারই এ যন্ত্রটি আছে এই ঘটনা উৎসাহ দেয় কাশফিয়াকে প্রযুক্তির আর কৃষির সমন্বিত প্রয়োগ ঘুরপাক খেতে থাকে তাঁর চিন্তায় ‘কৃষিক্ষেত্রে একটি নতুন সম্ভাবনা দেখেছিলামপাশাপাশি স্বাধীনভাবে কাজ করার ইচ্ছেটাও ছিল অনেক আগে থেকেই এ চিন্তা থেকেই ২০০৬-এর শেষে এসে আমার স্বাধীনভাবে কাজ করা শুরু গড়ে তুললাম উইন ইনকরপোরেট শুরু হলো কৃষির সঙ্গে প্রযুক্তির সেতুবন্ধ,’ কাশফিয়া বলেন
২০০৭ সালে গ্রামীণফোনের তথ্যকেন্দ্রগুলোর (টেলিসেন্টার) জন্য তাঁর প্রতিষ্ঠান তৈরি করে কৃষিকাজের নানা রকম তথ্যে সমৃদ্ধ বাংলা ওয়েবসাইটটি তখন শুধু গ্রামীণফোনের ৭০০টির মতো টেলিসেন্টার থেকেই এ সাইটটি দেখা যেত তবে এখন যেকোনো টেলিসেন্টার থেকে যে কেউ এ সুবিধা পেতে পারে
২০০৮ সাল থেকে মোবাইল ফোন সেবাদাতা বাংলালিংকের গ্রাহকদের জন্য কৃষিবিষয়ক সব তথ্য বাংলায় সরবরাহ করছে উইন ইনকরপোরেট ৭৬৭৬ নম্বরে ফোন করলেই যে কেউ জেনে যাবে মনে দ্বিধা জাগানো প্রশ্নটির উত্তর এ কাজের সাফল্যস্বরূপই অর্জন করেছেন মন্থন পুরস্কার দক্ষিণ এশিয়া এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি নিয়েছেন আরেকটি উদ্যোগ
একটু পেছন ফিরে দেখা যাক কাশফিয়া আহমেদের জন্ম ঢাকায় তবে শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন ময়মনসিংহে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন এরপর মমিনুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের পাট চুকিয়ে ভর্তি হন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ’৯৮ সালে জাপান সরকারের মনবুশো বৃত্তি পেয়ে পাড়ি জমান টোকিও ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে পিএইচডি শেষ করে কিছুদিন চাকরি করেন সেখানেই ভালোবাসার টানে ফিরে আসেন বাংলাদেশে ২০০৫ সালে আইসিটি পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন একটি প্রতিষ্ঠানে তবে সে চাকরিতে থাকেননি বেশিদিন
গ্রামের নারীরা কৃষিক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ কাজ করে থাকেন কিন্তু তাঁদের কাজের স্বীকৃত নেই তেমন গ্রামীণ নারীদের কাজের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই নতুন প্রচেষ্টায় নেমেছেন কাশফিয়া আহমেদ প্রথম পর্যায়ে চাঁদপুরের মতলব, গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকা থেকে ২৫ জন করে আগ্রহী নারীকে নেওয়া হয়েছে, যাঁরা কৃষিকাজের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে চান তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিতে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ানোই এ উদ্যোগটির লক্ষ্য পাঁচটি অর্গানিক ফসল (ক্যাপসিকাম, ব্রোকোলি, শিম, মরিচ, টমেটো) উৎপাদন করার পাশাপাশি টেলিসেন্টারগুলো চালাবেন নারীরা খেত থেকে দোকান—কৃষি পণ্য বাজারে আনার পুরো প্রক্রিয়াটাই হবে এ নারীদের হাত দিয়ে এ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এ ছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ দেবেন নারী কৃষকদের যোগাযোগের সুবিধার্থে টেলিসেন্টারগুলোতে সব দরকারি যন্ত্রপাতির জন্যও অর্থ সরবরাহ করবে জাইকা তাদের পাশাপাশি কাজ করে যাবে উইন ইনকরপোরেট গ্রামীণ টেলিসেন্টারগুলোতে বাংলায় তথ্য প্রদান করা, যেকোনো সমস্যার সমাধান দেওয়া, তিনটি এলাকার কাজ পর্যবেক্ষণ করা এবং বাজারজাত করাতেও উইন ইনকরপোরেট সহায়তা দিয়ে যাবে বলে জানালেন কাশফিয়া
‘অনেক উন্নত দেশ থেকে আমাদের দেশের মেয়েরা অনেক এগিয়ে গ্রামীণ নারীদের কাজ করার আগ্রহ ছিল দেখার মতো কিন্তু বেছে নিতে হয়েছে মাত্র ১৫ জন করে সঠিকভাবে এগোলে তারা অবশ্যই সফলতা অর্জন করবে,’ বললেন কাশফিয়া আহমেদ
২০০৬ থেকে ২০১০—খুব বেশি সময় নয় কিন্তু কাশফিয়া আহমেদ এরই মধ্যে পাড়ি দিয়ে এসেছেন অনেকখানি পথ
তিনি বলেন, ‘আমি যে কাজগুলো করেছি সেগুলো ব্যতিক্রম করতে চেষ্টা করেছি কোনো রকম প্রভাব বা ভুল ছাড়া আমি আমার তরফ থেকে কাজটি পুরোপুরি করার চেষ্টা করেছি আমি সফল বলার চেয়ে বলব যে আমি তৃপ্ত

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য