ইমরুলের বসন্তে শাহরিয়ার-ঝলক

মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০১১

সংবাদ সম্মেলন থেকে ফেরার পথে মাঠে ছোটখাটো একটা ভিড়ের মধ্যে মিশে গেলেন সাকিব আল হাসান। ভিড়টা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্রাউন্ডসম্যানদের। দুই মিনিট দাঁড়িয়ে হাত মিলিয়ে তাঁদের ধন্যবাদ দিলেন অধিনায়ক, ‘ভাই, আপনাদের ধন্যবাদ...অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

পেছনে পরাজিত ডাচরা। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছেড়ে এলেন ম্যাচ জয়ের নায়ক ইমরুল কায়েস।
পেছনে পরাজিত ডাচরা। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছেড়ে এলেন ম্যাচ জয়ের নায়ক ইমরুল কায়েস।

ড্রেসিংরুমে যাওয়ার সময় গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ছাদ থেকে তরুণীদের ডাক, ‘সাকিব...সাকিব...উই লাভ ইউ।’ হাস্যোজ্জ্বল সাকিব হাত নেড়ে উঠে যান সিঁড়ি বেয়ে। তবে ড্রেসিংরুমে ঢুকতে পারেন না। দরজায় দাঁড়ানো ভক্তদের ফুলের তোড়া নিতে হলো। তুলতে হলো ছবি।
সাকিব ড্রেসিংরুমে ঢুকে যান। মাঠের মধ্যে তখন বিসিবি সভাপতিকে ঘিরে ছবি তোলার আরও হিড়িক। বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা সুখের ছবি হয়ে থাকল কালকের বিকেলটা।
এমন নয় যে হল্যান্ডকে হারিয়ে সব জয় করা হয়ে গেছে। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে আরও অনেকটা পথ বরং বাকি। কালকের জয় সেই লক্ষ্যের দিকে হাঁটার টিকিটটাই শুধু দিল সাকিবদের হাতে।
হল্যান্ডকে ১৬০ রানে বেঁধে ফেলার পর যিনি মূলত জয়রথটা টেনে নিলেন, সেই ইমরুল কায়েসেরও সুখের ছবি আছে। ‘অপরিচিত কন্ডিশনে’ ব্যাট করার মতো ছবি তোলার আবদারও মেটালেন সদা লাজুক ইমরুলও!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইমরুলের বসন্তের শুরু, মানিয়ে তো তাঁকে নিতেই হবে! এত দিন তামিম ইকবালের ছায়াতলে থাকা ইমরুল, যাঁর এক বছরে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করার গৌরবটিও বড় খবর হয়নি, বিশ্বকাপে পর পর দুই ম্যাচে তিনিই ম্যান অব দ্য ম্যাচ!
তামিম মারকুটে। ওপেনিংয়ে ইমরুল চাইলেও অনেক সময় হাত খুলে খেলতে পারেন না। উইকেট ধরে রাখার দায়িত্ব নিতে হয়। কাল তামিম প্রথম ওভারেই আউট হয়ে যাওয়ার পর এই বাঁহাতিই হলেন বাংলাদেশ-ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। ওপেনিংয়ে নেমে অপরাজিত ৭৩ রান, দলকে জিতিয়ে ফেরার আনন্দ যোগ হলো মাঠ ছাড়ার সময়। পর পর দুই ম্যাচে ম্যাচ জয়ের নায়ক হতে পেরে লাজুক ইমরুলের মুখে বিস্তৃত হাসি, ‘আগের ম্যান অব দ্য ম্যাচটা শফিউলের পাওনা ছিল। তবে আজ (গতকাল) ভালো খেলেছি, শেষ পর্যন্ত উইকেটে ছিলাম। সব সময়ই ভাবতাম, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কবে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হব। পর পর দুই ম্যাচে সেটা হতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট বেশির ভাগ সময়ই ব্যাটিংবান্ধব নয়। ১১৩ বলে অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংসে ইমরুলকেও কষ্ট করতে হয়েছে অনেক। তবে টিকে থাকার প্রতিজ্ঞা এর মধ্যেও ছিল, ‘উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো ছিল না। তামিমের আউটের পর জুনায়েদ এসে শট খেলছিল। আমি ভাবলাম, টিকে থেকে ভালো কিছু করব।’
ইমরুলের মতো নয়, তবে সুসময়ের হাতছানি দেখলেন শাহরিয়ার নাফীসও। চার নম্বরে নেমে ৬০ বলে ৩৭ রান বড় কিছু নয়, কিন্তু অনুপ্রাণিত ইনিংস তো বটেই। আগের চার ম্যাচে ড্রেসিংরুমের দর্শক ছিলেন। অপেক্ষা করছিলেন সুযোগের অপেক্ষায়। চার নম্বরে ক্রমাগত ব্যর্থ রকিবুল হাসানের জায়গায় দলে ঢুকে হল্যান্ড ম্যাচে সেটা পেলেন। নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে না পারলেও জানালেন, প্রায় পাঁচ মাস দলের বাইরে থেকেও ব্যাটে মরচে ধরেনি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ অনভ্যস্ততায় কিছুটা সমস্যা তো ছিলই, ‘পাঁচ-ছয় মাসের গ্যাপের কারণেই বোধ হয় শুরুতে একটু নার্ভাস ছিলাম। উইকেট-আউটফিল্ডও একটু স্লো ছিল। মানিয়ে নিতে একটু তো কষ্ট হয়েছেই।’
ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি বলে শাহরিয়ারের একটু অতৃপ্তি আছে, ‘আফসোস একটু আছে...দল জিতিয়ে ফেরার সুযোগ কমই পাওয়া যায়। তার পরও এত দিন পর ফিরে মোটামুটি একটা রান করতে পেরে ভালো লাগছে।’ ম্যাচ শেষে জেমি সিডন্সের অভিনন্দন পেয়েছেন। পিঠ চাপড়ে কোচ বলেছেন, ‘আজ (গতকাল) উইকেটের সঙ্গে খুব ভালো মানিয়ে নিয়েছ। আমি খুশি। তবে তুমি তোমার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংটাই করবে।’
ছায়া থেকে ইমরুলের বেরিয়ে আসাটা যেমন, কালকের ম্যাচে দিয়ে যাওয়া শাহরিয়ারের ঝলকটাও হয়তো বিশ্বকাপের একটা প্রাপ্তি বাংলাদেশ দলের জন্য।

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য