অসহায় বৃদ্ধদের শেষ বিকালের আশ্রয়স্থল হিসাবে দেশের অন্তত: প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে সরকারী বৃদ্ধাশ্রম স্থাপনের উদ্যোগ নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন নারায়নগঞ্জের মুন্সিরবাগ, মালেকনগর এলাকার মো: মিজান।
সংবাদপত্রের চিঠির মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। বাস্তবিক পক্ষে আমাদের দেশে বাবা মায়েরা দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রক্ত পানি করে সন্তান মানুষ করেন। সন্তান বড় হয় । তাদেরও স্ত্রী সন্তান হয়। তারপরেই শুরু হয় বৃদ্ধ বাপ মায়ের ঝড়ের রাত। কেউ লাথি গুতা খেয়ে চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে পরিবারের বোঝা হয়েই থাকেন । অনেককে দেখা যায় বৃদ্ধ বয়সে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে। রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ঘাটের খালি জায়গায় শুয়ে বসে থাকা বৃদ্ধ বৃদ্ধার সাথে কথা বলে নিষ্ঠুর নির্মম যে কাহিনী বেরিয়ে আসে অনেক সময় তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হয় না।
শহর কিংবা গ্রামে প্রচলিত প্রবাদ আছে , বিচার মানিব তবে তালগাছটি আমার। বৃদ্ধ বাবা মায়ের বেলায়ও “বিচার মানিব তয় ভাত দিতাম না,” এই শর্তে অনেক গ্রাম্য সালিশ, দরবার বিচার ভেঙ্গে যায়। বৃদ্ধ বৃদ্ধার ভাঙ্গা কপাল ভাঙ্গাই থাকে। সরকার বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি করে এবং পরিধি বাড়িয়ে বয়¯কদের সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির শুভ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন । তবে সে সাথে প্রাথমিকভাবে অন্তত: বিভাগীয় শহরগুলিতে সরকারী উদ্যোগে অসহায় বৃদ্ধাশ্রম স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
আমাদের দেশে অসহায়ত্বের আরো নিধারুন শিকার স্বামী পরিত্যক্ত অথবা বিধবা মহিলারা। যে মহিলাদের নিজের কোন ঘর বাড়ী নেই, বিয়ের আগে বাপের বাড়ী বিয়ের পর শশুরবাড়ী আর পরিত্যক্ত হলে সবার বাড়ী।
ঝি চাকরানী বা ক্ষণিকের রানী এবং এভাবেই তিরস্কারের জীবন তিলে তিলে শেষ পরিনতির দিকে দ্রুত এগিয়ে যায়।
তুষারের মেলা বসে মাথার কাজল চুলে। জন্মই যেন আজন্মের পাপ নিয়ে নিশ্চিত অনিশ্চয়তার যাত্রী হন আমাদের বৃদ্ধরা। পরিত্যক্তরা। অসহায় বিধবারা।
খোঁজ নিয়ে যে সমস্ত বৃদ্ধাশ্রম, প্রবীণ হিতৈষী হোস্টেল, প্রবীণ নিবাসের কার্যক্রমের মোটামুটি বিস্তারিত জানা গেছে তার অধিকাংশ বাসিন্দাই মানসিকভাবে অসহায় হলেও আর্থিক ভাবে অসহায় নয়। কেউবা পরিবারের আচরণে অভিমান করে প্রবীণ নিবাসে আশ্রয় নিয়েছেন। সকল প্রকার বিল পরিশোধ করার আর্থিক সামর্থ্য তার নিজেরই আছে। আবার কেউ কেউ থাকেন সন্তান পুত্রবধুর প্রতিদিনের ঝগড়া ঝাটি থেকে উপদ্রপমুক্ত শেষ বয়সে একটু শান্তির জন্য। তারা এটা করেন পরিবার পরিজনের সাথে সমঝোতা করেই।
ব্যবসা নির্ভর প্রবীণ আশ্রয় কেন্দ্রের পাওনা পরিশোধ করে যান কোন পুত্র কন্যা, নাতি নাতনী বা নিকট আতœীয় পরিজন।
অনেকে থাকেন মোটামুটি ভিআইপি মর্যাদায় । ছেলেরা বউকে লুকিয়ে ভালো ফলমূল সহ উপাদেয় খাদ্যের উপহার আনে, এমন ঘটনাও আছে। সম্পতি হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত এমন আদরের শেষ নেই।
অসহায় বৃদ্ধদের সরকারী আশ্রয়স্থল স্থাপনের উদ্যোগে বাধা থাকার কথা নয় ।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।