দাগি সন্ত্রাসীরা যেন মুক্তি না পায়

রবিবার, ২০ মার্চ, ২০১১

বর্তমান সরকারের এক বছরে ১৪ হাজার হাজতি-কয়েদির মুক্তির খবরে শুরুতেই প্রশ্ন উঠবে, প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ছিল কিনা। দেশের কারাগারগুলোয় ৭০ হাজারের বেশি বন্দি থাকার খবর রয়েছে। তার মধ্যে এক বছরে ১৪ হাজার মুক্ত হওয়ার ঘটনা অনুলে¬খযোগ্য নয়। একটি পাইলট প্রকল্পের অধীনে কয়েকটি কারাগার থেকে তিন হাজার গরিব হাজতি-কয়েদিকে মুক্তিদানের খবর তাৎপর্যপূর্ণ।

ছোটখাটো অপরাধে তাদের অনেকে নাকি দীর্ঘদিন কারাগারে ছিল। আমাদের ধারণা, তাদের অধিকাংশেরই বিচার ঝুলে ছিল। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ না হওয়ার সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। সরকারের দিক থেকে সে প্রচেষ্টা রয়েছে বলেও মনে হয় না। কারাগারগুলোয় ধারণক্ষমতার তিনগুণ বন্দি রয়েছে বলে আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন।

প্রথম কথা, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যায় না তাদের সবই অপরাধী। দ্বিতীয়ত, অপরাধী বলে চিহ্নিতরাও কারাগারে কিছু স্বাভাবিক সুযোগ-সুবিধার দাবিদার। কেন্দ্রীয়সহ প্রায় প্রতিটি কারাগারে তাদের থাকতে হচ্ছে গাদাগাদি করে। সঙ্গে রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা।

আমাদের কারা কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রশিক্ষণেরও ঘাটতি রয়েছে। এত বন্দিকে যারা দেখাশোনা করছেন, তাদের প্রশিক্ষণ জরুরি। অনেককে মানবিক আচরণের প্রশিক্ষণও দেয়া প্রয়োজন। বিদেশী সাহায্যপুষ্ট একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব বন্দিদের কারামুক্তিতে সহায়তার উদ্যোগটি এর মধ্যে উৎসাহব্যঞ্জক। অবশ্য দেখতে হবে, গরিব হলেও এ প্রক্রিয়ায় দাগী কোন অপরাধী যেন ছাড়া পেয়ে না যায়।

প্রাথমিক সাফল্যের পর আরও কয়েকটি কারাগারে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করব, দ্বিতীয় পর্যায়ে এবং বাস্তবায়ন আরও সুষ্ঠুভাবে করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির সঙ্গে সংশি¬ষ্ট বলে অনেকে প্রশ্ন তুলবেন, এক্ষেত্রেও দলীয়করণ হচ্ছে কিনা।

এখানে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সরকার এমনভাবে মিলেমিশে থাকে যে, তাদের আলাদা করা কঠিন। প্রায় সব ক্ষেত্রে এর কিছু না কিছু প্রতিফলন ও প্রমাণ দেখতে পাওয়া যায়। তিন হাজার বাদে বাকি যে বিপুল সংখ্যক বন্দি গত এক বছরে ছাড়া পেল, তাদের ক্ষেত্রে ওই প্রশ্ন আরও জোরালোভাবে উঠবে। তারা গরিব বা অসহায় নয়। কিসের ভিত্তিতে ও কি প্রক্রিয়ায় তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। মামলা প্রত্যাহার বা সাজা মওকুফ করেও কাউকে মুক্তি দেয়ার সুযোগ রয়েছে সরকারের। রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে সেটা করা হলে প্রশ্ন উঠত না। প্রশ্ন ওঠে তার বিপরীতটি হওয়াতেই।

চারদলীয় জোট শাসনামলে রাজনৈতিক বিবেচনায় হাজার হাজার চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছিলেন এখনকার ক্ষমতাসীনরা। ক্ষমতায় এসে তারা একই কাজ করবেন না বলেই সবার প্রত্যাশা। সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে মুক্তিদানের কাজটি করলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কম। লঘু অপরাধের জন্য দায়ীদের রেহাই দেয়া হলে বিচার বিভাগের ওপর কাজের চাপও কমবে। কারা কর্তৃপক্ষের ওপর তো কমবেই। কিন্তু এর নামে দাগী সন্ত্রাসীরা মুক্তি পেয়ে গেলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় চাপ বাড়বে জনগণের ওপর। পুলিশও এতে হতাশ হয়ে পড়বে, যারা এক সময় তাদের আটকপূর্বক বিচারে সোপর্দ করেছিল। রাজনৈতিক বিবেচনায় মুক্তি পাওয়া সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠলে তাদের সামলানো কঠিন হয়ে পড়তে পারে সরকারের জন্যও। অতীতে আমরা এটা দেখেছি।

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য