ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে হবে পশ্চিমাদের স্থান: গাদ্দাফি

শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১১

লিবিয়ায় পশ্চিমা জোটের হামলা শুরুর পর গত মঙ্গলবার রাতে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে আসেন দেশটির নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি। সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনো উপায়ে পশ্চিমা শক্তিকে পরাজিত করব। কখনোই তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করব না। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে পশ্চিমাদের স্থান হবে।’
লিবিয়ার বিদ্রোহীরা মাহমুদ জিবরিলকে প্রধানমন্ত্রী করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে।

সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি
সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি

এদিকে মঙ্গলবার রাতেও লিবিয়ার বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে পশ্চিমা জোট। বিদ্রোহীদের দখলে থাকা মিসরাতা শহরে প্রথমবারের মতো হামলা চালানো হয়েছে। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও মিসরাতা ও জিনতান শহরে বিদ্রোহীদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে গাদ্দাফির অনুগত সেনারা।
জনসমক্ষে গাদ্দাফি: লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে গাদ্দাফির বাসভবন ও অন্যতম সামরিক ঘাঁটি বাব আল-আজিজিয়া চত্বরে মঙ্গলবার রাতে সমর্থকদের সামনে আসেন গাদ্দাফি। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই জয়ী হব। যুদ্ধ স্বল্পমেয়াদি হোক বা দীর্ঘমেয়াদি হোক, তারা আমাদের পরাজিত করতে পারবে না।’ গাদ্দাফি বলেন, ‘আমি আমার বাসভবনেই আছি। এখানেই থাকব...এখানে আমার থাকার অধিকার আছে।’
যেকোনো হামলা থেকে গাদ্দাফিকে বাঁচাতে মানবপ্রাচীর তৈরি করে বাব আল-আজিজিয়ার চারপাশে অবস্থান নিয়েছে তাঁর প্রায় ২০০ সমর্থক। মূলত এদের উদ্দেশেই বক্তৃতা করেন গাদ্দাফি। পরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তা সম্প্রচার করা হয়।
গত শনিবার লিবিয়ায় বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরুর পর বাব আল-আজিজিয়া চত্বরে দুবার হামলা চালানো হয়। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: আল-জাজিরা টেলিভিশনে গতকাল বুধবার প্রচারিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, লিবিয়ার বিদ্রোহীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে। এতে মাহমুদ জিবরিলকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে। সরকারে কারা স্থান পাবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। মাহমুদ জিবরিল বিদ্রোহীদের পক্ষে বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব পালন করছেন।
বিদ্রোহীদের মুখপাত্র নিশান গৌরিয়ানি বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট ছিল, তা হলো “একক লিবিয়া”। লিবিয়ার নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসন চালানোর জন্য নির্বাহী পরিষদের প্রয়োজনে এই সরকার গঠন করা হয়েছে।’ তবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে সরকার বা পশ্চিমা জোটের কোনো প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
পশ্চিমা জোটের হামলা চলছে: মঙ্গলবার রাতে ত্রিপোলির পশ্চিমে অবস্থিত মিসরাতা শহরে প্রথমবারের মতো বিমান হামলা চালায় পশ্চিমা বাহিনী। মিসরাতার স্থানীয় একজন বাসিন্দা টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে টেলিফোনে জানান, আজ (বুধবার) সকালেই মিসরাতায় দুবার বিমান হামলা চালিয়েছে পশ্চিমা জোট। গাদ্দাফি বাহিনী ও একটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে পৃথক এই দুটি হামলা হয়।
গতকাল সকাল হওয়ার আগেই ত্রিপোলিতে কয়েক দফা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাতেও বিমানবিধ্বংসী গোলা ও ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তবে পশ্চিমা জোটের পক্ষ থেকে ত্রিপোলিতে নতুন করে বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
লিবিয়া অভিযানে ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এয়ার ভাইস মার্শাল গ্রেগ ব্যাগওয়েল দাবি করেছেন, জোট বাহিনীর হামলায় গাদ্দাফির বিমানবাহিনী ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন জোট বাহিনীর হামলায় বাধা দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। এখন সেনাবাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা গাদ্দাফি বাহিনীকে পর্যবেক্ষণ করছি। কোনো স্থানে সাধারণ জনগণের প্রতি হুমকি দেখলে সেখানেই হামলা চালানো হবে।’
লিবিয়ায় হামলা শুরুর পর এ পর্যন্ত অন্তত ১৬২টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ৩০০ যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলা চালানো হয়।
গাদ্দাফি বাহিনীর হামলা: গাদ্দাফির অনুগত সেনারা মিসরাতা শহরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা রয়টার্সকে টেলিফোনে জানান, শহরের কেন্দ্রস্থলে গোলাগুলি হচ্ছে। গতকাল সকালের দিকে তাঁর সামনে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
বিদ্রোহীদের দখলে থাকার কারণে শহরটি কয়েক সপ্তাহ ধরে অবরোধ করে রেখেছে গাদ্দাফি বাহিনী। ফলে সেখানে খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, একদিকে ওষুধ নেই, অন্যদিকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় গোলাগুলির জন্য চিকিৎসকেরা হাসপাতালে যেতে পারছেন না। সব মিলিয়ে চিকিৎসাব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে এসেছে।
গাদ্দাফি বাহিনী মঙ্গলবার তিউনিসিয়া সীমান্তের কাছের শহর জিনতান ও ত্রিপোলির দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর ইয়াফরানে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, এসব হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়।
ন্যাটোর ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ওবামার আশা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আশা প্রকাশ করে বলেন, লিবিয়া অভিযান নিয়ে ন্যাটোর অবস্থান শিগগিরই স্পষ্ট হবে। ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রগুলো অভিযানের গুরুত্ব বুঝতে পারবে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ এল সালভাদর সফরের সময় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, অভিযানের ‘নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ’ ন্যাটোর কাছে থাকবে। ‘কয়েক দিনের’ মধ্যেই এ ব্যাপারে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স চায়, লিবিয়া অভিযানে ন্যাটো নেতৃত্ব দিক। কিন্তু ন্যাটোর অনেক সদস্যরাষ্ট্রই লিবিয়ায় সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করে আসছে। লিবিয়ার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রগুলো ব্রাসেলসে এক বৈঠক করে। কিন্তু তারা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, গাদ্দাফি ও তাঁর সহযোগীরা পালানোর পথ খুঁজছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তাঁদের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগও বাড়ানো হয়েছে। তবে ওয়াশিংটন এ ব্যাপারে সতর্ক আছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস লিবিয়া অভিযানকে ‘জটিল পরিস্থিতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই অভিযানে নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে। গেটস বলেন, ‘লিবিয়া অভিযান কবে শেষ হবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।’
লিবিয়া অভিযানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও দেশটির বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার ব্যাপারে একমত হয়েছে ন্যাটো। এ জন্য ভূমধ্যসাগরে ১৬টি যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজ মোতায়েন করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে লিবিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নো ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠাসহ ‘প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ’ নেওয়ার প্রস্তাব পাস হয়। শনিবার রাত থেকে ‘অপারেশন ওডিসি ডন’ নামে অভিযান শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ সালে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসেন সেনা কর্মকর্তা গাদ্দাফি। তাঁর প্রায় ৪২ বছরের শাসনের অবসানের দাবিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিদ্রোহীরা বেনগাজি ও ত্রিপোলির পশ্চিমের শহর জাবিয়াহসহ বেশ কিছু এলাকা দখল করে নেয়। সূত্র: এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য