একাত্তরের অগি্নঝরা মার্চের এ দিনেও মুক্তিপাগল মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে মুখর ছিল রাজপথ। স্বাধীনতার জন্য বাঙালির প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রস্তুতি আরও তীব্র হয়। এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমণ্ডির বাসভবনে দফায় দফায় বৈঠক করেন স্থানীয় ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। বৈঠক হয় জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান ও পাঞ্জাবের কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা পীর সাইফুদ্দিনের সঙ্গেও। এসব বৈঠকের ফাঁকে বারান্দায় এসে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মিছিলের উদ্দেশে হাত নেড়ে সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানান। প্রত্যেককে যার যার এলাকায় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহ্বান জানান তিনি। বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির বাসভবন তখন রূপ নিয়েছে মুক্তিপাগল বাঙালির একমাত্র ঠিকানায়। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ আসছে। চলছে সভা। স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে চারপাশ। কখনও বারান্দায় দাঁড়িয়ে, কখনও নিচে নেমে এসে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন হাস্যোজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু। সকাল গড়িয়ে দুপুর, তারপর বিকেল থেকে রাত_ যেন ঘুম নেই বাড়িটির।
এদিন আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য পাঠানো খাদ্যবোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদল করে করাচি নেওয়ার ঘটনায় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা প্রকাশ করেন। জাতীয় শ্রমিক লীগের জরুরি সভায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সভায় সব ইউনিট ও ইউনিয়নকে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। পূর্ববাংলা রেলওয়ে কর্মচারী এবং চারু ও কারুশিল্পীরা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহির উদ্দিন পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব বর্জন করেন। চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা চলমান অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেন সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার । বগুড়া জেলখানা ভেঙে পালিয়ে যান ২৭ জন কয়েদি।
রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। গণঐক্য আন্দোলন প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'পাকিস্তানকে রক্ষা করতে এখন একটাই পথ খোলা রয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।'
লারকানা থেকে লাহোর যাওয়ার পথে মুলতান বিমানবন্দরে পিপলস পার্টি চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, 'পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষার জন্য আমার দল সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।' লাহোরে ন্যাপ মহাসচিব সিআর আসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, 'শক্তি প্রয়োগের নীতি অব্যাহত থাকলে পূর্ব পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতার মনোভাব শক্তিশালী হবে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উচিত অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর চার দফা দাবি মেনে নেওয়া।' লাহোরের স্থানীয় বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিকসহ ছাত্র-শ্রমিক-পেশাজীবী সংগঠন নেতারা যুক্তবিবৃতিতে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান। রেডিও পাকিস্তান করাচি কেন্দ্রের বাংলা খবর পাঠক সরকার কবীর উদ্দিন বেতারে বঙ্গবন্ধুর খবর প্রচারের নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রতিবাদে রেডিও পাকিস্তান বর্জন করেন।
বিষয় সমুহ...
বিভাগীও শহর তথ্য কনিকা

আরো কিছু গুরুত্তপূর্ণ বিষয়...
বঙ্গবন্ধুর বাসভবন মুক্তিপাগল বাঙালির একমাত্র ঠিকানা
শনিবার, ১২ মার্চ, ২০১১অন্তরভুক্ত বিষয় ইতিহাস
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।