গরমের শুরুতে বিদ্যুতের লোডশেডিং অসহনীয় হয়ে উঠেছে। রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় প্রতি ঘণ্টা অন্তর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো পিছিয়ে পড়ায় চলতি গরম মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাও শঙ্কিত। পল্লী বিদ্যুতের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। যে কোনো সময় বিদ্যুৎ অফিসে হামলার আশঙ্কা করছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান আলমগীর কবির সমকালকে বলেন, চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের উৎপাদন আরও কিছুটা বাড়বে। তবে চাহিদা বেশি হওয়ায় এবারের গ্রীষ্মে লোডশেডিং নিয়ে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। আগামী বছর গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আসবে বলে তিনি জানান।

সূত্র জানায়, এখন রাজধানীতে বহু এলাকায় ঘণ্টা অন্তর লোডশেডিং হয়। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকট শুরু হচ্ছে। আর গ্রামে গড়ে ৯-১০ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকে না। রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সেচের জন্য গ্রামে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। দিনে গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের দেখা কমই পান। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, সেচের কারণে এখন গ্রামের মানুষ যেটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছেন; সেচের পর তা পাবেন না। তখন শহরকে অগ্রাধিকার
দিতে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং আরও বাড়বে। টানা ৬-৭ ঘণ্টা করেও তখন লোডশেডিং হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই গ্রহণ করে মহাপরিকল্পনা। কিন্তু শুরুতে নানা পরিকল্পনা নিতেই প্রায় এক বছর কেটে যায়। তবে এরই মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১২শ' মেগাওয়াট। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের সময় নেওয়া উদ্যোগ থেকেই উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫শ' মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদা বাড়ছে ব্যাপক হারে। এ জন্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
পিডিবির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সাল নাগাদ নতুন মোট ১১ হাজার ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। গ্যাস সংকটের কারণে শুধু এ জ্বালানির ওপর নির্ভর না করে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, কয়লা, ডুয়েল ফুয়েল (দ্বৈত জ্বালানি) এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি এ বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বাড়াতে চায়। অন্যথায় বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। পিডিবির পরিকল্পনার আওতায় সরকারি ও বেসরকারি খাতে চলতি ২০১০ সালে ৬৯৫, ২০১১ সালে ১৬৯৮, ২০১২ সালে ২০৪৭, ২০১৩ সালে ১৮৫০, ২০১৪ সালে ১৬৭০ এবং ২০১৫ সালে ৩০৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী মে মাসের মধ্যে মোট ১ হাজার ৩৯৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার কথা। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ১৭০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র চালু হয়েছে। এর একটি সিদ্ধিরগঞ্জে দেশ এনার্জির ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটি চালু হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল গত অক্টোবর। তবে অন্য কেন্দ্রটি (এগ্রিকোর ৭০ মেগাওয়াট) নির্ধারিত সময়েই চালু হয়েছে। চলতি মাসে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘোড়াশাল ৭৮, মেঘনাঘাট ১০০ ও নওয়াপাড়া ১০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র চালু হওয়ার কথা। এর মধ্যে প্রথম দুটি কেন্দ্র মার্চে চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগামী এপ্রিল মাসে প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নতুন করে যুক্ত হওয়ার কথা। এর মধ্যে মদনগঞ্জ ১০২ মেগাওয়াট কেন্দ্র কিছু আগে এবং কেপিসিএল ১১৫ ও আশুগঞ্জের ৮০ মেগাওয়াট কেন্দ্র নির্ধারিত সময়ে চালু হবে। কেরানীগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি চালুর ব্যাপারেও সরকার এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আশাবাদী। তবে মেঘনাঘাট ১০০, আশুগঞ্জ ৫৩ ও ৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্র সময়মতো চালু হওয়া নিশ্চিত নয়। মে মাসে পাঁচটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের জুলডা ১০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের নির্মাণকাজ সময়মতো শেষ নাও হতে পারে। নওয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট কেন্দ্র আগেই চালু হওয়ার কথা থাকলেও সময় পিছিয়ে এপ্রিল করা হয়েছে। অন্য কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ এবং ৫০ মেগাওয়াট করে রাজশাহীর আমনুরা ও কাঁটাখালী কেন্দ্র মে মাসের মধ্যে চালু না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব কেন্দ্র সময়মতো উৎপাদনে আসার সম্ভাবনা কম। এ কারণে আসছে এপ্রিলেই লোডশেডিং অসহনীয় হতে পারে। তখন গরম বৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ মাত্রায় বাড়বে। কিন্তু উৎপাদন সেভাবে বাড়বে না। এ কারণে এপ্রিলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আড়াই হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন পিডিবির হিসাবেই গড়ে ১২/১৩শ' মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। বেসরকারি হিসাবে এর পরিমাণ ১৭-১৮শ' মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটি ও সংস্কারের কারণে বন্ধসহ গ্যাস সংকটে প্রায় ১৭শ' মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে।
লোডশেডিংয়ের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় চরম ব্যাঘাত ঘটছে। মিরপুর ১১ নম্বর এলাকার এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাফিজ উদ্দিন সমকালকে ফোনে বলেন, সারাদিন ৮-১০ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। সন্ধ্যায় যখনই পড়তে বসি তখনই বিদ্যুৎ থাকে না। এতে লেখাপড়ায় ক্ষতি হচ্ছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে বন্ধ হবে সিইউএফএল : বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করতে বন্ধ হবে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল)। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সিইউএফএল বন্ধ করা হতে পারে বলে বৈঠ।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।