ব্যবসায়ীরা যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কোনো হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে, তা ঠিক করবেন রাজনীতিবিদেরা; তবে ব্যবসায়ীরা আর হয়রানির মুখে পড়তে রাজি নন। ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির নামে ব্যবসায়ীদের ঢালাওভাবে হেয় করা যাবে না।
এফবিসিসিআই সভাপতি প্রশ্ন করেন, পাঁচ বছর সরকার দেশ চালাতে পারলে কেন নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে না। ভারতের মতো বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে, গ্রহণযোগ্য করতে হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর শেরাটন হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কে আজাদ এসব কথা বলেন।
আইবিএফবির সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। অন্য বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ও মেট্রোপলিটান চেম্বারের সভাপতি আমজাদ খান চৌধুরী।
এ কে আজাদ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের হয়রানি-নির্যাতন করার অভিযোগ তুলে বলেন, সে সময় জোর করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আর তাই বেশ কয়েকজন সৎ ব্যবসায়ী দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সে সময় চাপ দিয়ে ৫০০ কোটি টাকা নিয়েছে, অথচ ব্যবসায়ীরাই সরকারকে কর-রাজস্ব দিয়ে থাকেন। তিনি এনবিআরের মামলা করার ক্ষমতা কর্তন এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে নেওয়া অর্থ দ্রুত ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
এ কে আজাদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে নিতে হলে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর তা দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাই করবেন। কিন্তু বিনিয়োগের নিরাপত্তা না থাকলে বড় বিনিয়োগ আশা করা যায় না। বর্তমানে বিদ্যুতের সমস্যা বিনিয়োগে বড় বাধা উল্লেখ করে তিনি সরকারকে দ্রুত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এ কে আজাদ দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করারও তাগিদ দিয়ে বলেন, দেশে জমির দাম দ্রুত বাড়ছে। কারা এসব জমি কিনছে, তা দুদককে দেখতে হবে। শেয়ারবাজারের বিপর্যয়ে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতেও দুদকের ভূমিকা থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির ভাষণে মরিয়ার্টি বলেন, দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশে ব্যবসা করার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগ শ্লথ হয়ে পড়ছে, বাজারব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অর্থনীতিও আক্রান্ত হচ্ছে।
মরিয়ার্টি আরও বলেন, দুর্নীতি দ্বিমুখী রাস্তার মতো। এর চাহিদাও যেমন আছে, তেমনি জোগানও আছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে দুর্নীতি দমনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও কাজ করতে হবে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বেসরকারি খাত যেমন দুর্নীতির শিকার হয়, তেমনি দুর্নীতিতে অবদানও রাখে। প্রায়ই উৎকোচ দেওয়া ও নিয়মিত কর না দেওয়ার মাধ্যমে এই খাত দুর্নীতিতে অবদান রাখছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
মরিয়ার্টির মতে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেকেই দুর্নীতি দমন কমিশনের ব্যাপারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন এই বলে যে এতে করে দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা দুর্বল হয়ে পড়বে। এই সমালোচনা দুর্নীতি দমনে সরকারের অঙ্গীকারের প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির ওপরও প্রভাব ফেলবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আইবিএফবি বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি হ্রাসে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উল্লেখ্য, আইবিএফবির সম্মেলন আয়োজনে সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড। সংস্থাটির সুশাসন, দায়বদ্ধতা, স্বচ্ছতা ও সততার অগ্রগতি সাধন প্রকল্পের (প্রগতি) আওতায় এই সহায়তা দেওয়া হয়।
বিষয় সমুহ...
বিভাগীও শহর তথ্য কনিকা

আরো কিছু গুরুত্তপূর্ণ বিষয়...
এফবিসিসিআই সভাপতির প্রশ্ন: সরকার নির্বাচন পরিচালনা কেন করতে পারবে না
সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১১অন্তরভুক্ত বিষয় বিশাল বাংলা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।