নারীর উন্নয়ন ও মর্যাদা বৃদ্ধির পদক্ষেপ চাই আন্তর্জাতিক নারী দিবস

মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১১

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ১০০ বছর পূর্ণ হলো আজ। ১৯১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজতন্ত্রীদের দ্বারা সূচিত এই দিবস পরবর্তীকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীনসহ পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে উদ্যাপিত হয়েছে। আজও রাশিয়া, চীনসহ অনেক দেশে এই দিনটিতে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। সমাজতান্ত্রিক দুনিয়া আজ আর নেই, কিন্তু আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই। কারণ, বিশ্বজুড়ে নারীর অগ্রগতি ও মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে অনেক পথ পাড়ি দেওয়া এখনো বাকি। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থানির্বিশেষে মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবি তাই সর্বজনীন।
অনেক বছর ধরে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিবসটি। এ উপলক্ষে নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন চলে, সংবাদমাধ্যমে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়। এসবের মধ্য দিয়ে আমাদের নারীসমাজের সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ ইত্যাদি ঘটে। তবে নারীর অবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে খুব আশাপ্রদ অগ্রগতি ঘটে না। উন্নত বিশ্বের নারীদের নারী দিবস উদ্যাপনের সঙ্গে আমাদের দেশে এই দিবস পালনের তফাত বিরাট। এখানে নারীসমাজ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক—সব দিক থেকেই অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এই পশ্চাৎপদতা অপসারণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা, দেশি ও আন্তর্জাতিক আইনকানুন, বিধিবিধান ইত্যাদি কোনো কিছুই যেন প্রত্যাশিত মাত্রায় পরিবর্তন আনতে পারছে না। নারী-পুরুষনির্বিশেষে সহিংসতার শিকার মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার সমান অধিকার নিশ্চিত করে এমন অনেক আইন এ দেশে রয়েছে; কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না। কয়েক বছর ধরে, বিশেষত গত এক বছরে আমরা নারীর প্রতি সহিংসতার উদ্বেগজনক বৃদ্ধি লক্ষ করছি। ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, যৌতুক ও অন্যান্য কারণে হত্যাসহ নানা রকমের সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিশোরী-তরুণীদের উত্ত্যক্ত করা। অনেক কিশোরী-তরুণী এ কারণে আত্মহত্যা করেছে; অনেকের আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক বখাটে উত্ত্যক্তকারীদের হাতে খুন হয়েছেন।
নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ইত্যাদি বেড়েছে এবং বাড়ছে। তবে এসব ক্ষেত্রেও অধিকারের সম্পূর্ণ সমতা আসেনি। চাকরিক্ষেত্রে নারী সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত; নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের মধ্যে মজুরির ক্ষেত্রে নারী পুরুষের থেকে কম পান। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নের চেষ্টা খুব ফলপ্রসূ হচ্ছে না তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। জাতীয় রাজনীতিতেও নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ, নীতিনির্ধারণ-প্রক্রিয়ায় নারীর গুরুত্ব বাড়ছে না। কিন্তু শিক্ষার সব পর্যায়েই দেখা যাচ্ছে, নারীরা পুরুষের সমান মেধার পরিচয় দিচ্ছেন।
এ বছরের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ‘শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিতে সমান সুযোগ: নারীদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ কাজের পথ’। বাংলাদেশের জন্য এই প্রতিপাদ্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশের নারীসমাজের প্রকৃত অগ্রগতি ও ক্ষমতায়ন ঘটতে পারে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে। সে জন্য আধুনিক প্রযুক্তিসহ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সব ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে


সুত্রঃ প্রথম আলো
তারিখঃ মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০১১

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য