
জলই তাদের জমিন, জলেই তাদের বসত। বরিশাল সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে বানারীপাড়া বাজারের পেছনে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় তাদের বসবাস। স্থানীয় নাম বানারীপাড়া লঞ্চঘাট। প্রায় ৫০টির মতো জেলে-পরিবার ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় এভাবে ভাসমান জীবন যাপন করছে।
স্থানীয় লোকজন এদের বেদে হিসেবে চেনে। পেশা তাদের মাছ ধরা। বরিশালের সন্ধ্যা, সুগন্ধা, শৌলা, আড়িয়াল খাঁ, জাফরুল নদী এবং এই নদীসংলগ্ন খালে তারা সারা বছর মাছ ধরে।
নদীর উত্তাল তরঙ্গের সঙ্গে এখানে চলে তাদের প্রতিমুহূর্তের সংগ্রাম। কিন্তু এই সংগ্রামী জীবনের মূল্য কোথাও মেলে না। এদের চাওয়া-পাওয়ার কথাও কেউ ভাবে না। তাদের দাবির কথা কেউ কখনো উত্থাপন করে না। সমাজ, সভ্যতার আলো কিংবা সরকারি কোনো সুবিধাও তারা পায় না।
বেদে শিশুরা তাদের বাবা-মায়েদের সঙ্গেই মাছ ধরে দিন কাটায়। নৌকাই তাঁদের মাছ ধরার সহায়ক বাহন।
খালের পাড়ে আইলায় আধভাঙা একটা কাঠের ঘরের পাশে গোড়ালি-সমান পানিতে তখন দাঁড়িয়ে আছি। দেখি হন্তদন্ত হয়ে একজন নারী জনা সাতেক শিশুকে সঙ্গে নিয়ে বেদে-বহরের খাল পাড় থেকে বের হচ্ছেন। অনেক পরে তাঁর পরিচয় জানা গেল। নাম তাঁর স্বর্ণা ঘোষ। পাশেই তাঁর বাড়ি। তিনি বেদে শিশুদের স্কুলে পড়ান। এখানে কোথায় সেই স্কুল? প্রশ্ন করতেই স্বর্ণা সুগন্ধা নদীর পাড়ঘেঁষা একটা কাঠের বেড়ার ঘর দেখিয়ে বললেন, ‘ওই তো ওইখানে।’
কেমন চলছে বেদে শিশুদের পড়াশোনা? জিজ্ঞেস করতেই শিক্ষিকা স্বর্ণা ঘোষ প্রথম আলোকে বললেন, ‘ওদের পড়াশোনার আগ্রহ প্রবল; কিন্তু নৌকায় ওদের পড়ার পরিবেশ নেই। সারা দিন মাছ ধরার কাজে মা-বাবাকে সাহায্য করাই ওদের কাজ। বিকেলে ডাঙায় ফিরে যেটুকু সময় পায়, সেটুকুতেই চলে ওদের বর্ণচর্চা ও গণনা শেখানোর চেষ্টা। আজ যা শেখানো হয়, কালই তারা সেটা ভুলে যায়। এর মধ্যে ভালো একটা বিষয় হলো, এসব শিশুর অনেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এক-দুই গুনতে শিখে ফেলেছে। বর্ণমালাও মনে রাখতে পারে।’
শিক্ষিকার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন মাছ ধরার অভিযান শেষে খাল পাড়ে ফিরে এসেছেন বৃদ্ধ আলী সর্দার বললেন, হেই মাস্টার মোগো ছাওলপাওলের লায় শিক্ষা দিতাছে। হ্যাগো একখান ঘর দিয়েন।’
জানা গেছে, এই বৃদ্ধ বেদে সর্দার মোহাম্মদ আলী তাঁর একমাত্র জ্বালানি কাঠ রাখার ঘরেই শিশু শিক্ষার স্কুল চালাতে দিয়েছিলেন। সাইক্লোন আইলায় সে ঘরটিরও অর্ধেকটা ভেঙে গেছে। আর এই আধভাঙা ঘরেই চলছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এই স্কুল। অবশ্য এখানে সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থার তেমন কোনো সহযোগিতাই নেই। সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার যত্সামান্য সহযোগিতা পাওয়া গেছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই নগণ্য।
বাবুগঞ্জেরই একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক তপন ঘরামি জানালেন, সভ্যতার প্রতি নিরাসক্ত এই ভাসমান বেদেদের মৌলিক অধিকার পূরণের জন্য রাষ্ট্রের উন্নয়ন খাত খেকে কোনো বরাদ্দ নেই। রাষ্ট্রের না থাকুক, বিবেকবান নাগরিকের দায় কিন্তু রয়েছে।
ওপেন মিডিয়া লাইন
প্রথম আলোর সাথে সাথে আমরাও যথাযথ কতৃপক্ষে দৃষ্টি আকরশন করছি।
সুত্রঃ প্রথম আলো
তারিখঃ মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০১১
তারিখঃ মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০১১
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।