ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য বিমোচনের একমাত্র হাতিয়ার নয়, এটা দিয়েই শুধু দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। তবে ক্ষুদ্রঋণ সমাজে অনেক পরিবর্তন এনেছে। নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম।
গতকাল রোববার প্রথম আলো আয়োজিত ‘ক্ষুদ্রঋণ ও দারিদ্র্য বিমোচন’ বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা আরও বলেন, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে এখন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি ক্ষুদ্রঋণের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তি নেই বলে মত দিয়ে তাঁরা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ গবেষণাভিত্তিক আলোচনার তাগিদ দেন। বৈঠকে ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার নিয়েও আলোচনা হয়।
প্রথম আলো কার্যালয়ে গতকাল ক্ষুদ্রঋণ ও দারিদ্র্য বিমোচন বিষয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়
প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ইনস্টিটিউট অব মাইক্রো ফাইন্যান্সের ড. সিদ্দিক ওসমানী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক ড. বাকী খলিলী, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মাহবুব হোসেন, ব্র্যাক ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক সৈয়দ এম হাশেমী, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী, ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের ড. সাজ্জাদ জহির, বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ। গোলটেবিল বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান এবং সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতারা। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু দরিদ্র মানুষ, যাঁরা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করছেন, তাঁদের বিদ্যমান ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্রঋণ দিয়েই শুধু দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। এর পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, বাজারসুবিধাসহ অন্যান্য আর্থসামাজিক বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। আর এগুলো করার দায়িত্ব মূলত সরকারের।
রেহমান সোবহান বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে সামগ্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ক্ষুদ্রঋণ হলো একজন দরিদ্র মানুষের দারিদ্র্যসীমার ওপরে ওঠার ন্যূনতম সুবিধা। ক্ষুদ্রঋণ-ব্যবস্থায় গ্রামীণ ব্যাংকের বিরাট অবদান রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দারিদ্র্য বিমোচনে বহুমুখী উদ্যোগ: হোসেন জিল্লুর রহমানের মতে, ক্ষুদ্রঋণ একাই দারিদ্র্য বিমোচন করে ফেলবে, এটা ঠিক নয়। দারিদ্র্য বিমোচন একটি প্রক্রিয়া বা সিঁড়ি। এটা ধাপে ধাপে পার হতে হয়। আবার ক্ষুদ্রঋণ কিছুই করতে পারেনি—উঁচু জায়গায় বসে এমন কথা বলা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে সমাজে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্ষুদ্রঋণ প্রচলনের আগে দরিদ্রদের জন্য আর্থিক সেবা পাওয়ার সুযোগ ছিল না। বহু মডেল হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। ক্ষুদ্রঋণ হলো দরিদ্রদের জন্য মহাসড়কের (হাইওয়ে) মতো, এটি অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম। ক্ষুদ্রঋণ না থাকলে দরিদ্র মানুষের কী হতো, তা-ও বিবেচনায় আনার পরামর্শ দেন তিনি।
সিদ্দিক ওসমানী বলেন, এত ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হলো, কিন্তু দারিদ্র্য দূর হচ্ছে না—এ রকম অভিযোগ হাস্যকর। এমন রাজনৈতিক বক্তব্য অনেকেই দিচ্ছেন। দারিদ্র্য বিমোচন শুধু ক্ষুদ্র অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয়। প্রতিবছর সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে, কই দারিদ্র্য তো দূর হলো না। তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। ক্ষুদ্রঋণ না পেলে দরিদ্ররা আকস্মিক বিপদাপদে তাদের সহায়-সম্বল বিক্রি করে দেয়। সে দারিদ্র্যের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়।
মাহবুব হোসেন জানান, আগে ১ শতাংশ হারে প্রতিবছর দারিদ্র্য কমত, এখন দেড় শতাংশ হারে কমছে। সারা দেশে ক্ষুদ্রঋণ ছড়িয়ে গেছে, দারিদ্র্য বিমোচন হলো কোথায়—এমন কথা হচ্ছে সরকারের উচ্চমহলে। এর দায়দায়িত্ব সরকারের ওপরও পড়ে। তারা যে প্রতিবছর এত টাকা খরচ করল, সেটা গেল কোথায়?
বাকী খলিলী বলেন, ক্ষুদ্রঋণ-ব্যবস্থা একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এত দিন আলোচনায় ছিল, ক্ষুদ্রঋণ কতটা দারিদ্র্য দূর করতে পারল। এতে সরকারের দায়িত্ব কিছুটা দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাই সরকার ও ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজের সমন্বয় করা দরকার। তিনি জানান, ২০০৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি নিট সঞ্চয় হয়েছে।
বিনায়ক সেন বলেন, অনেকেই বলে থাকেন, এত ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার পর কেন দারিদ্র্য বিমোচনে নাটকীয় পরিবর্তন হয়নি? দারিদ্র্য বিমোচনের জন্যই শুধু ক্ষুদ্রঋণ প্রবর্তিত হয়নি। মহাজনি ব্যবসার বিকল্প হিসেবে ক্ষুদ্রঋণসুবিধা এসেছে। এটি দরিদ্র মানুষের বিকল্প আয়ের উৎস। দারিদ্র্য বিমোচন কেন হলো না—একই অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধেও উঠতে পারে। কেননা, দারিদ্র্য বিমোচনের নামে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।
সাজ্জাদ জহির বলেন, ক্ষুদ্রঋণ হলো সেবা বিতরণের উদ্ভাবনী উদ্যোগ। কিন্তু এটিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে না।
সুদের হার: সিদ্দিক ওসমানী আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার চড়া বলা হয়, কিন্তু সুদের হার নির্ণয়ে মাপকাঠি কী, তা বলা হয় না। যখন ক্ষুদ্রঋণ ছিল না, তখন বাণিজ্যিক ব্যাংক কোথায় ছিল? তারা কেন ক্ষুদ্রঋণ দেয়নি? তারা তো চেষ্টা করলেও ক্ষুদ্রঋণ দিতে পারবে না। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৫০০ বা এক হাজার টাকা ঋণ দিতে যে খরচ হবে, তাতে ৪০ শতাংশ সুদ নিয়েও পোষাবে না। আর ক্ষুদ্রঋণ প্রচলনের আগে মহাজনেরা ১০০-১৫০ শতাংশ সুদে টাকা দিত।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্ষুদ্রঋণের বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি এর উদ্দেশ্যকে কিছুটা ব্যাহত করছে। ক্ষুদ্রঋণের সেবামাশুল সহনীয় পর্যায়ে আনা দরকার। এ জন্য ক্ষুদ্র অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়াতে হবে। যদিও বাংলাদেশে এই ফি অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম।
এম এম আকাশের মতে, পরিচালকদের পাজেরো গাড়ি, বিদেশে ঘোরাঘুরিসহ ঋণ তহবিলের উচ্চ ব্যয় মেটাতে গিয়ে সুদের হার বেড়ে যায়। কিছু দেশে স্টক মার্কেট থেকে টাকা নিয়ে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণ একটি লোভনীয় ব্যবসায় রূপ নিচ্ছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখন ক্ষুদ্রঋণ দিতে আগ্রহী হচ্ছে। এসব কারণে সুদের হার বাড়ছে।
বাকী খলিলী বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্রঋণে সুদের হার ২৩ শতাংশের কম হওয়া সম্ভব নয়। এর মধ্যে ১৬ শতাংশ হলো পরিচালন ব্যয়। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার সবচেয়ে কম।
বিনায়ক সেনের মতে, ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন ব্যয় কমিয়ে সুদের হার কমানোর সুযোগ রয়েছে কি না, তা দেখতে হবে। তবে খুব বেশি কমানোর সুযোগ নেই বলেই মনে হয়।
সাজ্জাদ জহির বলেন, ক্ষুদ্রঋণের বড় অংশীদার হিসেবে সুদের হার নিয়ন্ত্রণে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) প্রভাব ফেলতে পারে।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও উত্তরণকাল: বিনায়ক সেন জানান, ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতাদের ৮ শতাংশ এখন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তাঁরা অল্প পুঁজির ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। মজুরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন। ক্ষুদ্রঋণ-ব্যবস্থায় একধরনের উত্তরণকাল চলছে।
সিদ্দিক ওসমানীর মতে, ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতারা একটি ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে চার-পাঁচজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন। এভাবে এই খাত থেকে পল্লি অঞ্চলে ২০ শতাংশ শ্রমশক্তি যোগ হচ্ছে।
মাহবুব হোসেন জানান, ক্ষুদ্রঋণের নেতিবাচক দিক নিয়ে প্রতিবেদন, আলোচনা হয়। কিন্তু ৮ শতাংশ ঋণগ্রহীতা যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করে সফল হলেন, তা গণমাধ্যমে আসে না।
মোস্তফা কে মুজেরীর মতে, ক্ষুদ্রঋণ এখন ব্যবসায় বিনিয়োগ হিসেবেও দেওয়া হচ্ছে। এটি ক্ষুদ্রঋণকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করছে। ক্ষুদ্রঋণ মডেলে একটি বড় পরিবর্তন হচ্ছে।
আইনি কাঠামো: সালেহউদ্দিন আহমেদের মতে, ক্ষুদ্রঋণের বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এর উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে টাকা এনে ক্ষুদ্র অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দিচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামোর মধ্যে আনা উচিত। ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকিবিষয়ক আন্তর্জাতিক মানক্রমে (ব্যাসেল) ক্ষুদ্রঋণকে আনার চেষ্টা চলছে। এটা ঠিক হবে না। কেননা, ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থাপনা আর বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা এক নয়। ক্ষুদ্রঋণের একটি রূপকল্প থাকে। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকের মুনাফামুখী চেষ্টা থাকে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) যেন ক্ষুদ্র অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে না রাখে, যাতে এর সৃজনশীলতা নষ্ট হয়।
সৈয়দ এম হাশেমী বলেন, ভবিষ্যতে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে যাচ্ছে। তবে ভর্তুকি হিসেবে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হলে সবাই পাবেন না। বাণিজ্যিকীকরণের দিকে গেলেই তা সম্ভব হবে। এ জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক আইন ও প্রযুক্তি দরকার। তাঁর মতে, আর্থিক খাতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।
সিদ্দিক ওসমানী বলেন, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করতে গিয়ে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় কোনো গরিব মানুষ, সে জন্য একটি আইন থাকা দরকার। ঋণখেলাপি বড়লোক হলে তাঁদের রক্ষার জন্য ‘দেউলিয়া আইন’ আছে। কিন্তু গরিবের জন্য সে রকম আইন নেই। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কেউ খেলাপি হলে এর দায় চাপিয়ে দেওয়া হয় ক্ষুদ্রঋণের ওপর।
মাহবুব হোসেন জানান, নব্বইয়ের দশক থেকে এ দেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি শুরু হয়েছে। কিন্তু এটা তাদের মূল লক্ষ্য নয়। এভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যের বিচ্যুতি হচ্ছে।
এম এম আকাশ বলেন, কেউ যদি বলে, আমি ব্যবসা করে মুনাফা করব, তবে তাকে কর দিতে হবে। কে কী করতে চায়, তা আগে ঠিক করতে হবে। তারপর আইন ঠিক করতে হবে।
মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলে ক্ষুদ্রঋণকে বাইরে রাখছি। সামষ্টিক নীতিনির্ধারণে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না।’
স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সামাজিক উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণ: আলোচকেরা সবাই একমত পোষণ করেন যে, ক্ষুদ্রঋণ দরিদ্র মানুষের শুধু আয় বাড়াচ্ছে না, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসসহ অন্যান্য আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসসহ বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করছে ক্ষুদ্রঋণ। এ ধরনের উদ্যোগ বজায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি জানান, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে পল্লি অঞ্চলের মানুষের মধ্যে দারিদ্র্য জয় করার আস্থা বাড়ছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের অধিকাংশই ক্ষুদ্রঋণ প্রক্রিয়ার পটভূমি থেকে এসেছেন। ক্ষুদ্রঋণ শুধু দারিদ্র্য বিমোচন নয়, নানা মাত্রার সামাজিক পরিবর্তন আনছে।
বিনায়ক সেনের মতে, শুধু আয়বৈষম্য হ্রাস নয়, সামাজিক উন্নয়নেও ক্ষুদ্রঋণের তাৎপর্য রয়েছে। বিশেষ করে, নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্রঋণ ভূমিকা রাখছে।
মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ক্ষুদ্রঋণ মাঠপর্যায়ে গিয়ে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। এটাকে খাটো করে দেখলে হবে না।
অন্যান্য প্রসঙ্গ: হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এখন ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে লক্ষ্যগুলো পুনর্নির্ধারণ করা উচিত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ এত দিন প্রশাসনিক উদ্যোগে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে এগুলো যুক্ত করা উচিত, যা মুহাম্মদ ইউনূসের ধারণায় অনেক আগেই ছিল।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনূস যেভাবে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীকে সমবেত করে এত শৃঙ্খলাবদ্ধ কর্মকাণ্ড করেছেন, এর আগে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এটা হয়নি। এটি আমাদের সামাজিক মূলধন (সোশ্যাল ক্যাপিটাল)।’
বিনায়ক সেন বলেন, সম্প্রতি ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু গবেষণালব্ধ ফলাফলে তা পাওয়া যায়নি। ক্ষুদ্রঋণ কোনো ভুঁইফোড় বিষয় নয়। এটা পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।