বখাটের হাতে কলেজছাত্রী খুন

রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১১

ধাওয়া করে গলিতে নিয়ে লিপি আক্তার (২০) নামে এক কলেজছাত্রীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে এক বখাটে গতকাল শনিবার দিনদুপুরে ভাষানটেকে এ ঘটনা ঘটে লিপি আক্তার তিতুমীর কলেজের স্নাতক শ্রেণীর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন
স্থানীয় লোকজন রক্তমাখা ছুরিসহ বখাটে হযরত আলীকে আটক করে কাফরুল থানার পুলিশের কাছে দিয়েছে হযরতের দাবি, সে ট্যাক্সিক্যাবের চালক সে খুন করার কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে

লিপি আক্তার
লিপি আক্তার

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর দুইটার দিকে উত্তর ভাষানটেকের বাগানবাড়ী থেকে হযরত আলী কলেজছাত্রী লিপিকে ধাওয়া করে লিপি দৌড়াতে দৌড়াতে একপর্যায়ে উত্তর ভাষানটেকের কাঁচাবাজার-সংলগ্ন আহলে হাদিস মসজিদের গলিতে একটি ভবনের সামনে এসে পড়ে যান তখন হযরত তাঁকে জাপটে ধরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে মেয়েটির চিৎ কার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে হযরত আলীকে আটক করে লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় লিপিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যায় খবর পেয়ে স্বজনেরা সিএমএইচে যায় অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎ সক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন
ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজন লিপিকে চেনে প্রত্যক্ষদর্শী হাজি মো. শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বখাটে ছেলেটি পিঠে ঝোলানো ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে লিপির পেটে, বুকে ও মাথায় আঘাত করে এ সময় মেয়েটি বাঁচাও বাঁচাও চিৎ কার করছিল একপর্যায়ে মেয়েটি নিস্তেজ হয়ে লুটিয়ে পড়তেই আশপাশের লোকজন হযরত আলীকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে এ সময় হযরত বোতল থেকে তরলজাতীয় পদার্থ খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ভান করে পুলিশ এসে হযরতকে নিয়ে যায়
হাসপাতালে লিপির বাবা শামসুল আলম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, লিপির বিয়ের কথা চলছিল এ কারণে তিন দিন আগে লিপি গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার পরখান্দায় গিয়েছিলেন লিপির বড় ভাই সুমন আকন্দ জানান, দুপুর দেড়টার দিকে লিপি মুঠোফোনে তাঁকে জানান, কিশোরগঞ্জ থেকে তিনি ট্রেনে করে এসে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে নেমেছেন সেখান থেকে তিনি রিকশায় বাসায় ফিরছেন এর আধা ঘণ্টা পর ভাষানটেক বাগানবাড়ীর পরিচিত এক লোক লিপির ওপর হামলার কথা জানালে তাঁরা হাসপাতালে ছুটে যান
ঘটনাস্থলের পাশে উপস্থিত ভাষানটেক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মোস্তফা কামাল ভূঁইয়া বলেন, লিপি তাঁদের স্কুল থেকে ২০০৬ সালে মাধ্যমিক পাস করেন পশ্চিম ভাষানটেকের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম জানান, হযরত ফেনসিডিল ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এলাকায় তার একটি দল আছে এলাকার মোহাম্মদ আলম জানান, ট্যাক্সিক্যাব চালানোর আড়ালে সে মাদক সেবন ও মাদকের ব্যবসা করত
লিপির ভাই সুমন জানান, তাঁরা আগে পশ্চিম ভাষানটেকে সিদ্দিক সাহেবের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তখন প্রতিবেশী নাজমুল হোসেনের শ্যালক হযরত তাঁর বোনকে উত্ত্যক্ত করত হযরতের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁরা দুই মাস আগে ওই বাসা ছেড়ে অন্য বাসায় ওঠেন এর পরও হযরত বিভিন্নভাবে লিপিকে উত্ত্যক্ত করত দেড় মাস আগে কাফরুল থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়
গতকাল বিকেলে পশ্চিম ভাষানটেকের (দেওয়ানবাগ) ভাড়া বাসায় লিপির মা রহিমা আক্তার জানান, আট-নয় মাস আগে হযরত তার ভগ্নিপতি নাজমুলকে নিয়ে তিতুমীর কলেজের সামনে থেকে লিপিকে জোর করে গাড়িতে তুলে ভাষানটেকে নিয়ে আসে এরপর মাইক্রোবাসে তুলে তাঁকে কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে নিয়ে যায় ওই বাসে হযরতের সাঙ্গপাঙ্গরাও ছিল তারা লিপিকে ভয় দেখিয়ে বলে, হযরতের সঙ্গে বিয়েতে রাজি না হলে তাঁর মা-বাবা-ভাইদের মেরে ফেলা হবে এরপর একজন কাজির উপস্থিতিতে জোর করে বিয়ে পড়ানো হয় বিয়ের কথা পরিবারের কাউকে জানাতে নিষেধ করে দেয় তারা এর পর থেকে লিপি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন তবে সবার চাপের মুখে লিপি অপহরণ ও তাঁর সই নেওয়ার ঘটনা খুলে বলেন এরপর কলেজে যাওয়া বন্ধ হয় তাঁর কিছুদিন আগে বখাটে হযরতকে তালাকনামা পাঠানো হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের উপস্থিতিতে হযরত আলী দাবি করে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর গাজীপুরের কালীগঞ্জের কাজি অফিসে লিপিকে সে গোপনে বিয়ে করে সম্প্রতি লিপি তাকে তালাক দেন এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে লিপিকে হত্যার পরিকল্পনা নেয় লিপিকে হত্যার জন্য সব সময় সে ছুরিটি সঙ্গে রাখত হযরতের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী থানার খালিয়াবাদ গ্রামে বাবার নাম গিয়াসউদ্দিন খান
তদন্তকারী কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল আলম জানান, হযরত মাদকসেবী লিপিকে খুন করার পর হযরত বোতল থেকে সিনোথিনজাতীয় বিষাক্ত পদার্থ পান করে
লিপির বাবা নির্মাণশ্রমিক লিপি মা-বাবার একমাত্র মেয়ে তাঁর বড় ভাই সুমন আকন্দ বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবসা করেন আরেক ভাই রাজন কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন
রহস্যজনক মৃত্যু: মগবাজার এলাকায় নাজমা আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে গতকাল সকালে রমনার মীরবাগের ভাড়া বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফার্মগেটের মণিপুরিপাড়ার মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে নেওয়া হয় অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎ সক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন
নাজমার বাবা মুজিবুর রহমানের অভিযোগ, ১০ লাখ টাকা যৌতুক না পেয়ে নাজমার স্বামী আইনুল তাঁকে হত্যা করেছেন তিনি জানান, ২০০৮ সালে বরিশালের বানারীপাড়ার চান্দু মাস্টারের ছেলে আইনুল জামানের সঙ্গে নাজমার বিয়ে দেন এরপর আইনুল তাঁর মেয়েকে নিয়ে রমনার ১৫/ডি মীরবাগের ভাড়া বাসায় থাকতেন কিছুদিন না যেতেই আইনুল যৌতুকের জন্য তাঁর মেয়েকে নির্যাতন শুরু করেন
নাজমার চার মাসের একটি মেয়ে আছে তাঁর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি উপজেলার পাশা বাইল্যা গ্রামে যোগাযোগ করা হলে মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালের চিকিৎ সক কিবরিয়া প্রথম আলোকে জানান, ৭ মার্চ নাজমাকে তাঁর স্বামী এই হাসপাতালে ভর্তি করান গতকাল সকালে তাঁর অবস্থার হঠাৎ অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য