পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রাথমিক শিক্ষা পরিস্থিতির মূল্যায়নে দেখা গেছে, প্রায় সব সূচকেরই ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। সার্বিক সক্ষমতা বেড়েছে। ঝরে পড়া ও শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি কমেছে। তবে ইতিবাচক এসব পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নেট ভর্তি কমেছে। আর সবদিক থেকে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে আছে মেয়েরা।
সম্প্রতি প্রকাশিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০০৯ সালের শুমারির ফলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কমেছে ঝরে পড়া: সাম্প্রতিকতম এ শুমারি অনুযায়ী ২০০৯ সালে ঝরে পড়ার হার প্রায় ৪ শতাংশ কমেছে। এ শুমারি অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ। ছেলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ছেলে ও মেয়েদের ঝরে পড়ার হার যথাক্রমে প্রায় ৪৮ শতাংশ ও ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি গাইবান্ধা জেলায়, ৬১ দশমিক ৫ ভাগ। আর সবচেয়ে কম মেহেরপুরে, ২১ দশমিক ৯৭ ভাগ। ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি চতুর্থ শ্রেণীতে—প্রায় ১২ শতাংশ। প্রথম শ্রেণীতে তা ১১ শতাংশ।
এর আগের বছর (২০০৮) প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ। তারও আগের দুই বছরে (২০০৬ ও ২০০৭) ঝরে গিয়েছিল অর্ধেকের বেশি শিশু।
বেড়েছে বিদ্যালয়ে টিকে থাকা: বিদ্যালয়ে টিকে থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রেও মেয়েরা এগিয়ে। যত মেয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তাদের ৬২ ভাগ টিকে থাকে। অন্যদিকে ছেলেদের মাত্র ৫৭ ভাগ পড়াশোনা চালিয়ে যায়। এ হার এর আগের বছর ছিল যথাক্রমে ৫৭ ও ৫৩ ভাগ। তার আগের দুই বছরে আরও কম।
একবার ফেল করা, পরীক্ষা দিতে না পারা বা কোনো কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই সাধারণত ঝরে পড়ে। জরিপের ফল অনুযায়ী, এভাবে ঝরে পড়ার হার কমে আসছে। বাড়ছে পুনরায় ভর্তির হার। ২০০৯ সালে এ হার ১২ শতাংশে উঠেছে। ছেলেদের ১২ দশমিক ৩ এবং মেয়েদের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করার পর আবার ভর্তি হয়েছে। গত পাঁচ বছরে এটি সর্বোচ্চ।
নেট ভর্তি কমেছে: প্রাথমিক স্তরে নেট ভর্তির হার (বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী শিশুদের ভর্তির হার) ৯৩ দশমিক ৯ ভাগ। এর আগের বছর এ হার ছিল ৯৪-এর বেশি। প্রাথমিক স্তরে ভর্তিযোগ্য যেসব শিশু বিদ্যালয়ের বাইরে, তাদের বেশির ভাগ ছেলে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৯৯ ভাগ মেয়েশিশু স্কুলে ভর্তি হচ্ছে। ছেলেদের হার মাত্র ৮৯ শতাংশ।
নেট ভর্তি কমলেও বেড়েছে মোট ভর্তির হার। ২০০৯ সালের শুমারি অনুযায়ী প্রাথমিকে মোট ভর্তির হার ছিল ১০৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগের বছর এ হার ছিল ১০২ শতাংশ। বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী বয়সের বাইরেরও শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ায় মোট ভর্তির হার ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কমেছে অনুপস্থিতি: ২০০৫ সালে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির হার ছিল ২৩ ভাগ। তার পরের দুই বছর ছিল ২০। ২০০৮ সালে অনুপস্থিতির হার ছিল ১৯ শতাংশ। পরের বছর তা আরও কমে হয়েছে ১৮।
বেড়েছে সার্বিক সক্ষমতা: প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি, শেষ পর্যন্ত (পঞ্চম শ্রেণী) টিকে থাকা, ঝরে যাওয়া ও পুনরায় ভর্তির সংখ্যা—সব দিক বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে কো-এফিশিয়েন্ট অব এফিশিয়েন্সি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এটিকে প্রাথমিকের সার্বিক সক্ষমতা বলা যায়। এটি বাড়া সার্বিকভাবে ইতিবাচক লক্ষণ।’
শুমারি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মেয়েদের কো-এফিশিয়েন্ট অব এফিশিয়েন্সির হার প্রায় ৬৩ ভাগ, আর ছেলেদের ৫৯ ভাগ। এর আগের বছর এটি ছিল যথাক্রমে ৫৯ ও ৫৭ ভাগ।
শিক্ষা জরিপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘আমার মনে হয় এ শুমারিতে মোটামুটি বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। সার্বিকভাবে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা ভালো। এবার সরকার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করেছে। সে জন্য কিছু হলেও কাজ করেছে। এটি ইতিবাচক।’ উপবৃত্তি মেয়েদের ভালো করার অন্যতম কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিষয় সমুহ...
বিভাগীও শহর তথ্য কনিকা
আরো কিছু গুরুত্তপূর্ণ বিষয়...
ইতিবাচক পরিবর্তন প্রায় সব সূচকেই
রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১১অন্তরভুক্ত বিষয় অর্থ ও বাণিজ্য
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।