বল বাকি ৬২টি, রান দরকার ৫৭। হাতে মাত্র ২ উইকেট। আবদুর রাজ্জাক মাত্রই সাজঘরে ফিরে গেলেন। তবে মাহমুদউল্লাহ আছেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন শফিউল ইসলাম। উইকেটে আসার পর শফিউলকে কী বললেন মাহমুদউল্লাহ?
টিম হোটেলে পাশাপাশি বসে পরশু রাতের বিজয় নির্মাণের কাহিনি শোনালেন শফিউল ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহ
শফিউল: চিন্তা করে দেখলাম, রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ভাইয়ের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলে ম্যাচ জিতে যাব। রিয়াদ ভাই ম্যাচ বের করতে পারবেন। আমাকে উনি শুরু থেকেই বলেছেন সোজা ব্যাটে খেলতে। শেষ পর্যন্ত থাকলে ম্যাচ বের করতে পারব—এই বিশ্বাস নিয়েই খেলেছি।
শফিউল মাহমুদউল্লাহর কথা বলেন, মাহমুদউল্লাহ বলেন শফিউলের কথা। আসলে ইংল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার কাজটা করেছেন দুজন মিলেই। তবে কাল এই দুজনের সংবাদ সম্মেলনটা হয়ে দাঁড়াল পারস্পরিক প্রশংসা বিনিময়ের।
মাহমুদউল্লাহ: সুহাস (শফিউল) ক্রিজে আসার এক ওভার পর বলল, রিয়াদ ভাই, ইনশা আল্লাহ ম্যাচটা জিতব। আমিও ভেতর থেকে অনুভব করেছি, ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারলে জিতে যাব। মুখে বললাম বিশ্বাস...তা না। যখন সুহাস এসে বলল, রিয়াদ ভাই, আমরা জিতব, আমার বিশ্বাস তখন আরও দৃঢ় হয়। সুহাসের কৃতিত্ব, সোয়ানের ওভারে সেই প্রথম স্টেপটা নেয়।
দুজনের মধ্যে মাহমুদউল্লাহ বয়স-অভিজ্ঞতায় বড়। শফিউল আসার আগেই উইকেটে ছিলেন, সবচেয়ে বড় কথা—তিনি একজন ব্যাটসম্যান। দুজনের জুটিতে মাহমুদউল্লাহর হাতেই নেতৃত্ব থাকা স্বাভাবিক। যদিও মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘পরিকল্পনা ছিল আমি শেষ পর্যন্ত থাকব। সুহাস সুযোগ নিচ্ছিল, ভালো ব্যাটিংও করছিল। আমার যেটা পরামর্শ দেওয়ার দরকার দিচ্ছিলাম। ও তার কাজ করেছে। আমি আমার কাজ করেছি।’
মাহমুদউল্লাহর জন্য ইংল্যান্ড ম্যাচটা ছিল ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জেরও। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের পরই দলের বাইরে চলে যান। ইংল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে দলে ফেরার পর চেষ্টা ছিল নিজেকে প্রমাণের, ‘সাত নম্বরে ব্যাটিং করতে হয় বলে আমাকে ভালো ইনিংস-খারাপ ইনিংসের মধ্য দিয়েই যেতে হবে। অনেক সময় ভালো করে ব্যাটিংয়ের সুযোগও পাওয়া যায় না। কালকে (পরশু) সুযোগ ছিল দলকে কিছু একটা দেওয়ার, নিজেকে প্রমাণের। সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে।’
নিজে পেসার, তবে ‘ব্যাটসম্যান’ শফিউলের প্রিয় পছন্দ স্পিন বল। গ্রায়েম সোয়ানকে খেলার ব্যাপারে অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা থাকলেও শফিউল বেছে নিলেন সোয়ানকেই, ‘আমি স্পিন খেলতে পছন্দ করি। ভেবেছিলাম, সোয়ানের ওভার পেলে রানের পার্থক্যটা কমিয়ে আনব। শেষ বলে ছক্কা মারলাম, বুঝতে পারছিলাম সে ওই বলটা ঝুলিয়ে দেবে। বলটাকে একদম আয়ত্তের মধ্যে পেয়ে গিয়েছিলাম মারার জন্য।’
সোয়ানের ওই ওভারে এল ১৬ রান। মাহমুদউল্লাহও বলছেন, তার করা ৪২তম ওভারটাই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। এর পর থেকে একটাই চিন্তা ছিল তাঁর, ম্যাচটা যেন শেষ ওভারে না যায়, ‘একটা পর্যায়ে ৯ বলে ৩ রান দরকার ছিল। দুটি বল ডট যাওয়ার পর ভাবলাম, ম্যাচ শেষ ওভারে নেওয়াটা ঠিক হবে না। সুযোগ নিতে হবে, নিলামও। সেটাতেই কাজ হয়ে গেছে।’
ম্যাচ শেষে খুব সীমিত উদ্যাপনই করেছে বাংলাদেশ দল। তামিম ইকবালের ‘ভাইয়েরা, খুব জোরে গাইতে হবে’ আহ্বানে সাড়া দিয়ে কোরাসে ‘আমরা করব জয়...’ গানটা চলল কিছুক্ষণ। মাঝখানে জয়ের তিন নায়ক শফিউল, ইমরুল ও মাহমুদউল্লাহ। ড্রেসিংরুমেই টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দনও পেল বাংলাদেশ দল।
কিন্তু এত কিছুর পরও শফিউলের মনের কোণে কি একটুও জমেনি হতাশার মেঘ? আয়ারল্যান্ড ম্যাচের পর ইংল্যান্ড ম্যাচেও যে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া থেকে বঞ্চিত হলেন তিনি! না, এ নিয়ে একদমই নাকি আফসোস নেই তাঁর, ‘ম্যাচ জেতার চেয়ে বড় আনন্দ ম্যান অব দ্য ম্যাচেও নেই। দেশের মানুষ আমাকে যেভাবে অভিনন্দন জানিয়েছে, আমার মনে হয়, এটা ম্যান অব দ্য ম্যাচের চেয়েও বড় পাওয়া।’ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাফল্যটাকে ভবিষ্যতের পাথেয় হিসেবে দেখছেন শফিউল, ‘ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স করতে সবারই ভালো লাগে। পরের ম্যাচগুলোতেও চেষ্টা করব এ রকম খেলতে।’
ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে বোলিং কোচ ইয়ান পন্ট একটা ভিডিও দেখিয়েছেন খেলোয়াড়দের। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ক্রিকেট দলের অনেক সাফল্যের মুহূর্ত তাতে ধরা। খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতে একটি ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করেছে এই ভিডিও। খেলোয়াড়েরা সেটা দেখে কতটুকু উজ্জীবিত হলেন কে জানে, তবে ইংল্যান্ড ম্যাচ তাদের মনে এনে দিয়েছে একটা বিশ্বাস। অজেয়কে জয় করার সাহস।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।