একসঙ্গে নাচছেন কয়েকজন তরুণ। কারও গায়েই জামা নেই। জামার জায়গা দখল করে বুক আর পিঠে আছে লাল-সবুজের পতাকা। কারও কারও হাতে ভুভুজেলা। পোঁ পোঁ শব্দে চারপাশ গমগম করছে। নৃত্যরত তরুণদের চারপাশে গিজগিজ করছে মানুষ আর মানুষ—কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে। মাঝে মাঝেই ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ চিৎ কারে কেঁপে উঠছে বাতাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পাশে রাজু ভাস্কর্য মোড়ের চিত্র এটি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী খেলাটি চলছিল তখন। এখানে বেশ কয়েকটি বড় পর্দায় সরাসরি দেখানো হয় বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খেলা।

বাংলাদেশের খেলা থাকলে টিএসসি মোড়ে ছড়িয়ে পড়ে দর্শকদের হল্লা।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের টিকিট যেন সোনার হরিণ। রাত-দিন লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাননি অনেকে। বাধ্য হয়ে এখন মাঠের বাইরে বসে খেলা দেখতে হচ্ছে। এমনই একজন মোহাম্মদপুরের ওবায়েদ হাসান। তিনি বলেন, ‘টিকিট ছাড়ার আগের দিন থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও কাজ হয়নি। তবু ঘরে বসে না থেকে টিএসসিতে এসেছি বড় স্ক্রিনে খেলা দেখতে। এত্ত মানুষ দেখে তবু কিছুটা গ্যালারির আনন্দ পাওয়া যাচ্ছে।’
ঘরের অন্দরে বসে খেলা দেখার আনন্দ আর শত শত মানুষের সঙ্গে খেলা দেখার আনন্দ সব সময়ই আলাদা। যেমন পরিবারসুদ্ধ চলে এসেছেন ধানমন্ডির ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ মিয়া। স্ত্রী আর ছেলেমেয়েকে নিয়ে বসেছেন বড় পর্দার সামনে। বাংলাদেশের চার কি ছক্কা হলেই লাফিয়ে উঠছেন অন্যদের মতোই। সঙ্গে ছেলেমেয়েরাও সমানতালে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘ঘরে বসে কি আর এই আনন্দ পাওয়া যাবে? তা ছাড়া বাংলাদেশের খেলা চলছে। তাই সবাই মিলে চলে এসেছি।’
টিএসসিতে যে শুধু আশপাশের লোকজন এসেছে, তা-ই নয়। অনেক দূর থেকেও কেউ কেউ এসেছে খেলা দেখতে। উত্তরা টাউন ডিগ্রি কলেজের চার বন্ধু মিলে একসঙ্গে এসেছেন টঙ্গী থেকে। তাঁরা জানান, প্রতিদিন লোডশেডিং হচ্ছে। খেলা চলার সময় যদি লোডশেডিং হয়। তাহলে সব আনন্দ বিফলে যাবে। মেজাজ উঠবে চরমে। তাই মেজাজ চরমে ওঠার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুর আমন্ত্রণে এখানে চলে এসেছেন খেলা দেখতে।
শুধু টিএসসি এবং এর আশপাশেই পাঁচটি বড় পর্দা বসানো হয়েছে বিশ্বকাপের খেলাগুলো দেখানোর জন্য। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর টেলিভিশন কক্ষে খেলা শুরুর এক ঘণ্টা আগে থেকেই জায়গা ভরে যায়। ছোট্ট কক্ষে আর কয়জনই বা খেলা দেখতে পারবে। এ জন্য হল কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেছে বিকল্প ব্যবস্থার। জিয়া হল, জসীমউদ্দীন হলে দেখা গেছে প্রজেক্টরের মাধ্যমে খেলা দেখতে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, নগরের বিভিন্ন জায়গায় এখন চলছে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর ব্যবস্থা। পুরান ঢাকার সিক্কাটুলী মাঠেও চলছে এমন আয়োজন। নয়াবাজার প্রসন্ন পোদ্দার লেনের কয়েকজন তরুণ খেলা দেখার জন্য চাঁদা তুলে প্রজেক্টর কিনেছেন। উদ্যোগী তরুণদের দলপতি ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখন সবাই মিলে খেলা দেখি। প্রথমে কোনো মাঠ না পেয়ে ছাদের ওপরেই প্রজেক্টর বসাই। পরে মহল্লার রাস্তার পাশে জায়গার ব্যবস্থা হয়েছে।’
নতুন ঢাকায়ও দেখা যায় এমন আয়োজন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ব্রিজের কাছে ও গুলশান-২-এর ঢাকা সিটি করপোরেশন মার্কেটের সামনে খেলা দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ধানমন্ডি ও গুলশানে খেলা দেখানো হচ্ছে একটু ভিন্ন কায়দায়। একটি সুসজ্জিত ট্রাকের ওপর একটি প্লাজমা টেলিভিশন ও সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে খেলা দেখানো হচ্ছে। এই আয়োজনটা করেছে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড। এ বিষয়ে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের ব্র্যান্ড ম্যানেজার মোহাম্মদ ফরহাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের অফিস দৈনিক বাংলা মোড়ে। আমি অফিস থেকে দেখতে পাই প্রস্তুতি ম্যাচের টিকিটের জন্য কত বড় লাইন। এই লাইনের অধিকাংশ লোকই ফিরে যায় টিকিট না পেয়ে। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, তারা সবাই একসঙ্গে খেলা দেখার জন্য মূলত এখানে এসেছে। এদের কয়েকজন আমাকে টিকিটের জন্য অনুরোধ করে। তখন আমরা এ ধরনের একটি আয়োজনের কথা চিন্তা করি।’
গুলশান-২-এর ডিসিসি মার্কেটের সামনে খেলা দেখে মূলত মার্কেটের দোকানি, শিক্ষার্থী, অপেক্ষমাণ যাত্রী আর রিকশাচালকেরা। এমনই একজন রিকশাচালক মোস্তাদুল বলেন, ‘আমার টিভি নাই। তাই আমি এখানে খেলা দেখি।’
সুত্রঃ প্রথম আলো
তারিখঃ মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০১১
তারিখঃ মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০১১

0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।