জীবন্ত কিংবদন্তি শচীনের হাতে শিরোপা দিয়েই কথা রাখল মহেন্দ্র সিং ধোনির!

রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১১

বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘আমরা শচীনের জন্যই এবার বিশ্বকাপ জিততে চায়’। কথা রেখেছেন ধোনির ছেলেরা। অন্যদিকে মুরালিধরনের জন্য শ্রীলঙ্কাও এমন ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু পারলেন না সাঙ্গাকারা বাহিনী।

http://rtnn.net/newsimage/sec_4/subsec_11/130173919320110402.jpg

ঘরের মাঠে এশিয়ার আরেক ক্রিকেট পরাশক্তি শ্রীলঙ্কাকে ১০ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করল ভারত। এ জয়ে ক্রিকেট জীবন্ত কিংবদন্তি শচীনের দুহাত ষোল আনায় পূর্ণ করল। আর শেষটা হতাশায় বিষাদময় হলো আরেক গ্রেট মুত্তিয়া মুরালিধরনের।

অর্জুনা রানাতুঙ্গার ১৫ বছরের নিঃসঙ্গতা যেমন অধরাই থাকল। তেমনি ২৫ বছরের নিঃসঙ্গতা ভেঙে সঙ্গী পেল কপিল দেব। ১৯৮৩ সালে কপিল দেব ভারতকে বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিয়েছিলেন। আর ১৯৯৬ সালে অর্জুনা রানাতুঙ্গা দেন দ্বীপ রাষ্ট্রটির জন্য বিশ্বজয়ের মুকুট।

অথচ শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ব্যাটে ২৭৪ রানের পর বল হাতে শুরুটা খারাপ হয়নি শ্রীলঙ্কার। শূন্য রানেই সাজঘরে যেতে বাধ্য কন মারকুটে শেবাগকে। এরপর দলীয় ৩১ রানে বিদায় নেন শচীন টেন্ডুলকার। দুটি আঘাতই হানেন লাসিথ মালিঙ্গা। কিন্তু ভারত যে পণ করেছে শিরোপা দেবে শচীনের হাতেই। এজন্যই ঘুরে দাড়ানো। এ যাত্রায় গৌতম গম্ভীর সঙ্গী করেন বিরাট কোহলিকে।

দুজনে মিলে গড়েন প্রাথমিক ধাক্কা সামলানো ৮৩ রানের জুটি। দলীয় ১১৪ রানে দিলশানের দুর্দান্ত এক ফিরতি ক্যাচে বিদায় নেন কোহলি (৩৫)। এরপর ক্রিজে আসেন ইতিহাসের বরপুত্র মহেন্দ্র সিং ধোনি। ব্যাটকে তুলি বানিয়ে একের পর এক রচনা করেন মহাকাব্য।

চলতি আসরে রানখরায় ভুগতে থাকা ধোনি প্রথমে গৌতম গম্ভীরকে সঙ্গে নিয়ে ১০৯ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। এরই মধ্যে দুর্দান্ত ইনিংস খেলা গম্ভীর (৯৭) শতক বঞ্চিত হন পেরেরার বলে বোল্ড হয়ে। ১২২ বলের ইনিংসটি গম্ভীর সাজান ৯ চারে। আর বাকি কাজটুকু নিপুণভাবে সারেন ধোনি নিজেই। একের পর এক বলকে সীমানা ছাড়া করে দলকে এনে দেন আনন্দ উদ্‌যাপনের মহেন্দ্রক্ষণ।

বীরোচিত ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন ধোনি। মাত্র ৭৯ বলের ইনিংসে ভারতীয় পূরাণের নতুন নায়ক করেন ৯১ রান। যাতে ৮টি চার আর ২টি ছয় দেদীপ্যমান। আর ২টি ছয়ের শেষটি তো তিনি দলের জয়সূচক রান সংগ্রহে মারেন। সঙ্গে সঙ্গে জনতার বিজয় ঢেউ খেলে স্টেটেডিয়াম জুড়ে।

অবশ্য তাকে শেষ দিকে ভালো মতোই সঙ্গ দেন পুরো আসরে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা যুবরাজ সিং। ২৪ বলে ২১ রান করতে যুবরাজ বলকে দুবার সীমানাছাড়া করেন। অধিনায়কের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি গড়ে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিয়ে তিনিও মাঠ ছাড়েন। অনবদ্য ইনিংস খেলার জন্য ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আর পুরো আসরে দুর্দান্ত খেলা ম্যান অব দ্যা সিরিজ হন যুবরাজ সিং। মাঠ ছাড়েন বলতে ভুল বলা হয়!

বিজয়ী ভারতীয় দল পুরো মাঠ চক্কর দিয়ে নেচে-গেয়ে শিরোপা জয়ের আনন্দ উদ্‌যাপন করেন। আর তাদের এই উন্মাতাল উন্মাদনায় সঙ্গী ১২০ কোটি মানুষের দেশ ভারত। স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকের কথা না হয় বাদই দিলাম। অন্যদিকে রাজ্য হারানো রাজার মতো শীর নিচু করে মাঠে দাড়ানো লঙ্কান অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা ও তার ছেলেরা।

মাঝখানে অস্ট্রেলিয়ান কোচ ট্রেভর বেলিস এসে যেন সান্ত্বনায় পিঠ চাপড়ে দিলেন সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনে-মুরালি-মালিঙ্গার। হয়তো বললেন- পরপর দুবার হয়নি তো কি, আগামীবার তোরাই জিতবি এই শিরোপা! কে বোঝে কার সান্ত্বনা! নিশ্চিত শিরোপা যেন হাত ফসকে বিরিয়ে গেছে- এমন বিষন্নতা সবার চোখে-মুখে।

আর ভারতীয় কোচ গ্যারি কাস্টেনের কথা না হয় বাদই থাক। নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার ‘চোকার্স’ অপবাদ খেলোয়াড়ী জীবনে না ঘুচাতে পারায় স্বর্ণালী এই শিরোপা ছুয়ে দেখা হয়নি কখনো। এবার অন্য ভূমিকায় তা চিরন্তন করে নিলেন কারস্টেন। কারণ ইয়ান চ্যাপেলের ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হওয়া ভারতকে যে তিনিই এক ছাতার নিচে এনে জয় করলেন বিশ্বসেরার এই মুকুট।

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য