আইভরি কোস্টের রাজধানী আবিদজানে দুই পক্ষের লড়াইয়ে এখন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ পুলিশের ১২০ জন সদস্য। আইভরি কোস্টের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রেসিডেন্ট আলাসেন ওয়াতারা আবিদজানের যে হোটেলে আছেন, তার খুব কাছেই একটি ক্যাম্পে আছেন বাংলাদেশের এসব পুলিশ। তবে এখনো পর্যন্ত তাদের উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা।

আবিদজানে আটকে পড়া পুলিশের এএসপি আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন, শহরে মিছিল ও দাঙ্গা দমনের জন্য অস্থায়ীভাবে তাঁদের সেখানে নেওয়া হলেও বর্তমানে তাঁরা যুদ্ধের মধ্যে পড়েছেন। এরই মধ্যে ক্ষমতাহীন প্রেসিডেন্ট লরা বাগবো বাহিনীর হামলায় বাংলাদেশি চিকিৎসক (মেডিকেল অফিসার) মহিবুল হাসান গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ অবস্থায় দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে না গেলে যে কোন সময় বড় রকমের বিপদের আশঙ্কা করছেন তারা।
ওই পুলিশ কর্মকতা আরো জানান, ‘ক্যাম্পে আমাদের তাঁবুগুলো প্লাস্টিকের। এমন ক্যাম্পে আমরা নিরাপদ নই। ইতিমধ্যে আমাদের সঙ্গে থাকা চিকিৎসক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, কয়েকটি গাড়ি ধ্বংস হয়েছে। তবু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পে থাকতে হচ্ছে। আমাদের এই শহরে আনা হয়েছিল মিছিল ও দাঙ্গা দমনের জন্য। যুদ্ধ করা পুলিশের কাজ নয়, আমাদের ভারী অস্ত্রশস্ত্রও নেই। ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে আমাদের দুরবস্থার কথা জানিয়েছি।’
আবিদজানের গালফ হোটেল লাগোয়া ক্যাম্পটিতে বাংলাদেশ পুলিশের চারজন এএসপি, আটজন পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর), ১৪ জন উপপরিদর্শক (এসআই) আছেন। ১২০ সদস্যের এ দলের বাকিরা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও হাবিলদার।
আরেক পুলিশ কর্মকতা হুমায়ুন কবির টেলিফোনে জানান, অন্যান্য দেশের বেশির ভাগ পুলিশ সদস্যকে ইতিমধ্যে হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যেভাবে রকেট-মর্টার শেল মারা হচ্ছে, তাতে যেকোনো সময় আমাদের চরম বিপদ হতে পারে। আপনারা সরকারকে বলুন আমাদের সরিয়ে নিতে।’
ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মুশফিকুর রহমান বলেন, আইভরি কোস্টের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। গলফ হোটেল এলাকায় প্রেসিডেন্ট ওয়াতারা ও বাগবোর সমর্থকদের মধ্যে গুলিবিনিময় হচ্ছে। এর মধ্যে পড়ে বাংলাদেশি একজন চিকিৎসক আহত হন। তাঁকে দ্রুত হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তিনি আশঙ্কামুক্ত। একইভাবে গোলাগুলির মধ্যে পড়তে পারেন বাংলাদেশি পুলিশ সদস্যরাও। তাঁদের নিরাপদ স্থানে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে আবেদন জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আইভরি কোস্টে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুই হাজার এবং পুলিশের ৩৬১ জন সদস্য আছেন।
আইভরি কোস্টে নির্বাচনে পরাজিত লরা বাগবো ক্ষমতা ছাড়তে রাজী না হলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। দু’পক্ষের মধ্যে সেখানে তুমুল লড়াই চলছে। ক্ষমতা আকড়ে থাকা প্রেসিডেন্ট লরা বাগবো প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের মাটির তলায় লুকিয়ে আছেন। আর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আছেন গালফ হোটেলে। সেখানে সেনেগাল ও ফ্রান্সের সেনারা বাগবো সমর্থকদের হামলার জবাব দিচ্ছেন।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।