আমাদের মহাবিশ্বের সৃষ্টি কেমন!

মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১১

মহাবিশ্বের সৃষ্টি কেমন করে হলো তা জানার আগ্রহ অনেকের আর এর জন্য অকান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বেশ কিছু গবেষক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কোনো রহস্যের ঘনীভূত কুয়াশার আড়ালে ঢেকে রয়েছে এই জন্মরহ্স্য ১৯৩০ সালে চেম্বারলেন ও ফুলটন দিলেন গ্রহাণুপুঞ্জের একটি তত্ত্ব তাদের মতে, সূদূর অতীতে নাকি সূর্যের সাথে মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো অজানা একটি নত্রের প্রচন্ড সংঘর্ষ হয় ফলে সূর্যের খানিকটা অংশ ছিটকে বেড়িয়ে এসে অসংখ্য ছোট-বড় গ্রহকণা বা গ্রহাণুপুঞ্জসে পরিণত হয় তারপর সময়ের সাথে সাথে সেই গ্রহকণাগুলো শীতল হয়ে জমে গিয়ে সৃষ্টি হয় সৌর জগতের গ্রহমণ্ডলীর এর বিশ বছর পর জিনম ও জেফরিস নামের দুজন বিজ্ঞানী বললেন, নত্রটি মহাকাশের বুকে বিচরণ করতে করতে যখন সূর্যের খুব কাছাকাছি এসে পড়েছিল সে সময় সূর্যের উত্তপ্ত শরীর থেকে খানিকটা অংশ গ্যাস হিসাবে ছিটকে বেরিয়ে আসে তারপর উত্তপ্ত অবস্থাতেই সৃষ্টি হয় গ্রহমণ্ডলীর এই দুটো তত্ত্ব সে সময় যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল কিন্তু আধুনিক কালে তা বাতিল হয়েছে

http://www.blog.techtodaybd.com/wp-content/uploads/2011/03/galaxy_2-300x225.jpg

বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিজ্ঞানী জে স্মিথ তার উল্কাতত্ত্ব প্রকাশ করলেন তার মতে, মহাকাশের বুকে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নত্র আর ছায়াপথ এমনি এক ছায়াপথ বা নত্রপুঞ্জের ভেতর দিয়ে যাবার সময় সূর্য নিজের শরীরের চারপাশে চাদরের মতো জড়িয়ে নেয় উল্কাজাতীয় জিনিস যা অনন্তকাল ধরে নত্রপুঞ্জের ভেতর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল তারপর সূর্যের মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে ঘুরতে ঘুরতে সেই উল্কাজাতীয় পদার্থ থেকেই জন্ম নিয়েছে এই গ্রহমণ্ডলী কালের বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বের প্রতিও আস্থা রাখেননি মহাবিশ্বের জন্মরহস্য সম্পর্কে এখন পযর্ন্ত যে সূত্রটি স্বীকৃত হয়ে আছে তা হলো বিস্ফোরণবাদ বা বিগ ব্যাং তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রায় দেড় হাজার থেকে দু’হাজার কোটি বছর আগে এক মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল এই মহাবিশ্বের ব্রক্ষ্মাণ্ড সৃষ্টির পূবর্মুহূতে বস্তু বলতে কিছু ছিল না ছিল শুধু শক্তি সে শক্তি ছিল পূঞ্জীভূত অবস্থায় প্রায় ১ হাজার ৫শ কোটি বছর আগে ঘটল অকল্পনীয় এক বিস্ফোরন জ্যোতিবিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছেন বিগ ব্যাং এর ফলে কিছু পরিমাণ শক্তি রুপান্তরিত হলো তারা প্রোটন এবং ইলেকট্রনে থাকে বিদ্যুতের আধান তাই তাদের ঘিরে থাকে বিদ্যুৎ ত্রে বেতার তরঙ্গ এই বিদ্যুৎ েেত্রর ভেতর দিয়ে বেশি অগ্রসর হতে পারে না আর বিগ ব্যাং-এর পর এভাবেই চলছিল প্রায় ৫’শ বছর তারপর প্রোটন এবং ইলেকট্রনের পারস্পরিক বিচ্ছিন্নভাবে বিচরণ বন্ধ হতে থাকল প্রোটন কণাগুলো ঘিরে পরিক্রমণ শুরু করল ইলেকট্রন কণা সুষ্ট হলো হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম পরমাণু পারমাণবিক অবস্থায় বিদ্যুৎ নিরপে বলে এবার তাদের চারপাশে বিদ্যুৎ ত্রে রইল না বিগ ব্যাং-এর সময়ে সৃষ্ট কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন-এর পথ বাধামুক্ত হলো
বিগ ব্যাং বা অতি নাত্রিক বিস্ফোরণ তো ঘটেছিল কত বছর আগে আজ থেকে ১ হাজার থেকে ২ হাজার কোটি বছরের মধ্যে কোনো এক সময় প্রচলিত তত্ত্ব অনুযায়ী বিস্ফোরণের পর স্বল্পকালের মধ্যেই ১০০০ থেকে ১০ হাজার কোটি নত্র তৈরি হয় একেকটি গ্যালাক্সি বা নত্রজগত হাইড্রোজেনের পরিব্যাপ্ত মেঘ ঘনীভূত হয়েই সৃষ্ট হয় তাবৎ নত্র, গ্রহ ও উপগ্রহ জ্যোতিবিজ্ঞানীদের ধারণা, এই কাজটি বিগ ব্যাং-এর পর কয়েকশ কোটি বছরের মধ্যেই শেষ হয়েছিল কিন্তু তাত্ত্বিকরা ভাবেন এক আর বাস্তব চিত্রটি দাঁড়ায় অন্য রকম

http://www.blog.techtodaybd.com/wp-content/uploads/2011/03/Universe_jf-300x227.jpg

জ্যোতির্বিজ্ঞানী রিকরিদো গিওভানের্লি এবং হেনেস জানিয়েছেন, পৃথিবী থেকে সাড়ে ছয় কোটি আলোকবছর দূরে অতিকায় একটি মেঘের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে হাইড্রোজেনের এই মেঘ আবর্তন করছে খুবই ধীরগতিতে তাদের মনে হয়েছে, গ্যালাক্সি সৃষ্টির গোড়ায় ব্রক্ষ্মাণ্ডে এ ধরনের মেঘই বিরাজ করত এই মেঘই পরববতীর্কালে সৃষ্টি করেছে একেকটি নত্র নব আবিষ্কৃত এই মেঘটির চেহারা ডিমের মতো যেন মনে হয় একটি খাম তার ভেতরে রয়েছে অতিকায় দুটি গ্যাসের পিণ্ড কোনো একসময় হয়তো তারা পরস্পর মিশে যাবে সৃষ্টি করবে পূণার্ঙ্গ গ্যালাক্সি যতদূর মনে হচ্ছে, গ্যালাক্সিটি একবার আবতর্ন করতে সময় নেয় ১ হাজার কোটি বছর তার গ্যাস আমাদের মিলকি ওয়ে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ নত্র জগতের ব্যাসের দশ গুণ আর ভর সূর্যের ভরের ২ হাজার ১ শ কোটি গুণ বেশি জ্যোতিবিজ্ঞানীদের এতকাল সীমা ছিল কেবলমাত্র দৃশ্যমান বস্তুসামগ্রীরই ওপর দৃশ্যমান আলোর মাধ্যমে তারা দেখে এসেছেন গ্রহ, উপগ্রহ, নত্র এবং গ্যালাক্সি জানা গেছে, এক একটি গ্যালাক্সিতে রয়েছে কম করেও দশ কোটি নত্র কোয়াসার, পালসার, ব্ল্যাকহোল, নাত্রিক জেটথ এমন কত রকম বস্তুর কথাই না বলছেন জ্যোতিবিজ্ঞানীরা এক্সে-রে, রেডিও? তরঙ্গ, গামারশ্মি প্রভৃতি অদৃশ্য রশ্মির মাধ্যমে ধরা পড়েছে, দৃশ্যমান আরো অনেক নত্র

http://www.blog.techtodaybd.com/wp-content/uploads/2011/03/wallpaper_creation_universe-300x225.jpg

ধারণা, ওই কালো অঞ্চলগুলোর মধ্যে বিরাজ করছে ব্রক্ষ্মাণ্ডের মোট বস্তুসামগ্রীর ৯০ শতাংশ কিভাবে বিরাজ করছে সেটাই রহস্য বিগ ব্যাং বা বিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল এই মহাবিশ্ব সেই সৃষ্টির বড় রকমের অংশ নিয়েই ওই সব ঘন কালো অঞ্চল ওই অঞ্চলগুলোর স্বরুপ উদঘাটনে প্রয়াসী হয়েছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা ক্যানারিজ দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ লা-পামা সেখানে তারা বসিয়েছেন ৪.২ মিটার ব্যাসের একটি দপর্ণ দুরবিন আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীতে এটির স্থান এখন তৃতীয় দুরবিনটির নাম দেয়া হয়েছে উইলিয়াম হাশের্ল এটির সাহায্যে ২শ কোটি আলোকবছর দূরত্বের ছবি তোলা সম্ভব হবে জ্যোতিবিজ্ঞানীদের আশা, এই দুরবিনটির সাহায্যে তারা উদঘাটন করবেন এই ঘন কালো অঞ্চলগুলোর রহস্য আর যদি তা সম্ভব হয়, তা হলে জানা যাবে মহাবিশ্বের সঠিক ভর



ব্রক্ষ্মাণ্ডের বয়স কত? কোনো কোনো জ্যোতিবিজ্ঞানীদের মতে ১হাজার ৩শ কোটি বছর শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সে তার জন্মের জানান দেয় কান্না হিসাবে কান্না তার জন্মমুহূতের সঙ্কেত বিকিরণের মাধ্যমে বিকিরণবাহিত সেই সঙ্কেত এখনও পৃথিবীতে এসে পৌঁছাতে পারেনি ফলে সৃষ্টি মূহুর্তে ব্রক্ষ্মাণ্ডের স্বরুপটি কেমন ছিল সে ব্যাপারে জ্যোতিবিজ্ঞানীরা অন্ধকারের থেকে গেছেন সম্ভবত অন্ধকার এবার হয়ত দূর হবে ক্যামব্রিজ ইনস্টিটিউট অব অ্যাসট্রোনমির জ্যোতির বিজ্ঞানীরা রিচার্ড ম্যাকরমোহন, রয়েল গিনিচ অবজারভেটরির মাইকের আরউইন এবং পিটাস বার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরিল হ্যাজারড নতুন একটি কোয়াসারের সন্ধান পেয়েছেন তাদের দাবি, এ পর্যন্ত যতগুলো কোয়াসার দেখা গেছে এটি তাদের মধ্যে দূরতম এটি আমাদের মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথ গ্যালাক্সি থেকে ১০ হাজার গুন উজ্বল বয়স এক হাজার দুইশত কোটি বছর যার অর্থ এই কোয়াসারটি থেকে যে বিকিরণ এসে পৌঁচ্ছে বয়সের দিক থেকে সেটা প্রচীনতম সৃষ্টির ১শ কোটি বছর পর কি এই বিকিরণ তার সঙ্কেত বয়ে আনছে।


সূত্রঃ টেক টিউনস

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য