নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর চরে কাজের বিনিময়ে টাকা—কাবিটা কর্মসূচির টাকা দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বারইপাড়া ফেরিঘাটের এই রাস্তা নির্মাণে শুকনো মৌসুমে মানুষের উপকার হলেও, বর্ষায় খরস্রোতা এ নদীর পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হবে, যার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদেরা। এই রাস্তা নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোনো পরামর্শ কিংবা অনুমতি নেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে ঘুরে ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বারইপাড়া বাজার সংলগ্ন ফেরিঘাট এলাকায় দুই বছর আগেও নদী পারাপারে ফেরি ও খেয়া চলাচল করত। এখন সেখানে চর জেগে ওঠায় ফেরিঘাটটি পূর্ব দিকে ও খেয়াঘাটটি দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খেয়াঘাট দিয়ে লোক পারাপারের জন্য গত বছর জেগে ওঠা চরে পায়ে হেঁটে চলার মতো মাটির সরু রাস্তা তৈরি করা হয়। এবার সেই সরু রাস্তাটি কাবিটার টাকায় বৃহৎ পরিসরে নির্মাণ করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এখানে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। চরের বালি কেটেই রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। রাস্তা করতে কোনো মাটি কিনতে হচ্ছে না। বর্ষাকালে পানির তোড়ে এই বালির রাস্তা ধসে যাবে।
কালিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কাবিটার ছয় লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৭৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ১২ মিটার প্রস্থ এবং আড়াই মিটার উচ্চতার মাটির রাস্তাটির কাজ ৩০ জানুয়ারি শুরু হয়েছে। দৈনিক ৬৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। ৪ এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা।
বাজেবাবরা গ্রামের মনিরুজ্জামান (৪০) বলেন, রাস্তাটি নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে সাময়িক সুবিধা হবে। তবে বর্ষা মৌসুমে এই রাস্তা এলাকার মানুষের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে। রাস্তা নির্মাণ না করে বরং ফেরি পারাপারে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ক্যানেল করা যেত।
নড়াইল পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আলী হাওলাদার বলেন, রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি তিনি জানেন না। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাঁদের কোনো পরামর্শ চায়নি, এমনকি যোগাযোগও করেনি। কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ত ম আব্দুলহেল বাকি বলেন, রাস্তাটি যাতে নদী-তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের কারণ না হয় সে জন্য শিগগিরই পাউবোর সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্লক ফেলা কিংবা অন্য উপায়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হবে।
পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, পাউবোর সঙ্গে সমন্বয় না করে নদীর চরে অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ ঠিক হচ্ছে না। এতে বর্ষার মৌসুমে নদীভাঙন দেখা দিতে পারে। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে পরিবেশের ওপর। সরকারি অর্থের অপচয় হবে।
নদী বাঁচাও আন্দোলনের নড়াইলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মুনশি হাফিজুর রহমান বলেন, জেগে ওঠা চরের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের আগে এর ক্ষতিকর বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত ছিল। এ রাস্তার কারণে বর্ষা মৌসুমে প্রবল স্রোতের তোড়ে সংলগ্ন এলাকার বসতবাড়ি, গাছপালা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। কাজেই বর্ষা আসার আগেই ভাঙন প্রতিরোধমূলক প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
বিষয় সমুহ...
বিভাগীও শহর তথ্য কনিকা

আরো কিছু গুরুত্তপূর্ণ বিষয়...
কাবিটার টাকায় নবগঙ্গার চরে অপরিকল্পিত রাস্তা
শনিবার, ১২ মার্চ, ২০১১অন্তরভুক্ত বিষয় লেখকের কলাম
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।