অঘটন কিংবা অভাবিত কিছু ঘটেনি। উত্থান থেকে আবার পতনের পথে পিছলে যায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেট। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গতকাল সোমবার বাংলাদেশের জয়ের নির্যাসটা এমনই। তবে আতশকাচে ধরা পড়ছে ওই শটটা না খেললেও পারতেন সাকিব আল হাসান। প্রস্তুতি ম্যাচসহ বিশ্বকাপ ময়দানে চতুর্থবারের মতো।
সাকিবের আল হাসান
একইভাবে তামিম ইকবালের আউট হওয়া দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ, কি হলো নায়কের! এ ছাড়া কালকের ম্যাচে ইমরুল কায়েস দেখিয়েছেন ধৈর্যের সঙ্গে আত্মবিশ্বাসের পরিমিতিবোধ মিশিয়ে কি করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নিতে হয়। খটখটে মরা উইকেটেও যে প্রাণ আনা যায়, তার প্রদর্শনী শফিউল ইসলামের দুর্দান্ত পেস বোলিং। এ দুয়ে মিলে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে পল্লবিত আত্মবিশ্বাসের কথা শুনিয়েছেন সাকিব আল হাসান_লক্ষ্য এবার কোয়ার্টার ফাইনাল!
সিরিজ কিংবা ট্রফি নিয়ে আগাম কিছু বলতে চায় না বাংলাদেশ দল। পরের ম্যাচটাতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন তাঁরা। নেদারল্যান্ডসকে হারানোর পরও তাই। নজর ১৯ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ওপর। যে ম্যাচটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার শেষ সিঁড়িও। পারবেন? 'আমার মনে হয় না নেট রান রেট দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া সম্ভব। কারণ আমরা খুব বেশি রান করিনি। তাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর একমাত্র পথ। এর চেয়ে সহজ কিছু আমার জানা নেই', অধিনায়কের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাসের সুর। ওদিকে ডাচ অধিনায়ক পিটার বোরেনের কণ্ঠে একাধারে হতাশা আর বিরক্তি, 'এই উইকেট খুবই স্লো। এখানে ব্যাটিং করা কঠিন। তবু চার-চারটা রান আউট এবং কয়েকজন বাজে শট খেলে আউট হওয়ায় আমরা ভালো স্কোর করতে পারিনি।'
নেদারল্যান্ডস পারেনি। তবে পেরেছেন বাংলাদেশের ইমরুল কায়েস এবং এবারের বিশ্বকাপে প্রথম সুযোগ পাওয়া শাহরিয়ার নাফীস। উইকেটের গতিমন্থরতার বিষয়টি সাকিবও মানছেন। সে কারণেই ইমরুলের জন্য আরো কিছু বেশি বিশেষণ ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'ইমরুল খুবই ভালো ব্যাটিং করেছে। এই উইকেটে যেকোনো ব্যাটসম্যানেরই সমস্যা হতো। তাই শুরুতে একটু সময় নিয়েছে। তবে বেশি রানের চাপ ছিল না। তাই আমি মনে করি ইমরুল ঠিক কাজটাই করেছে।' দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের জন্য ব্যাট ধরা শাহরিয়ার নাফীসের ওপরও সন্তুষ্ট অধিনায়ক, 'ভালো ব্যাটিং করেছে। আগেই বলেছি যে এই উইকেটে স্ট্রোক খেলা কঠিন। তাই পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করেছে।' কিন্তু আপনি যে ওভাবে আউট হলেন? এ প্রশ্নেও সাকিব কিন্তু মানছেন না যে তাঁর ব্যাটিংয়ে কোনো সমস্যা আছে, 'আমার মনে হয় আমি ভালোই ব্যাটিং করছি। যখন নামি, তখন জেতার জন্য ৬ রান দরকার ছিল। ভেবেছিলাম তাড়াতাড়ি খেলা শেষ করে দেব। সেটি আর হয়নি'।
তবে স্পিনাররা তাঁদের কাজটা ঠিকভাবেই করেছেন। তিন বাঁহাতি স্পিনার মিলে বল করেছেন ২৯ ওভার। তাতে ৯৮ রান দিয়ে ৫ উইকেট মন্দ মনে হচ্ছে না নেদারল্যান্ডসের চার ব্যাটসম্যান রান-আউট হওয়ায়। তবে স্পিনারদের ছাপিয়ে এ ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিং হিরো সেই শফিউল ইসলাম। চট্টগ্রামের উইকেট এবং নিজেদের ব্যর্থতা নিয়ে তিতিবিরক্ত পিটার বোরেনের মনে ধরেছে এ ম্যাচের একজনকেই। তিনি বাংলাদেশের শফিউল, 'ও খুব ভালো বোলিং করেছে। খেয়াল করে দেখবেন এই উইকেটেও প্রথম স্পেলে সে বল সুইং করিয়েছে। শেষেও দুর্দান্ত বোলিং করেছে। সারা দিনে একটা বাজে বলও করেনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল নতুন বলে যতটা সম্ভব রান তুলে নেওয়া। কিন্তু শফিউল মারার বলই দেয়নি। উইকেট না পাওয়ায় ওর জন্য সত্যিই দুঃখ হচ্ছে।' প্রতিপক্ষ অধিনায়কের এ দুঃখের সঙ্গে সম্ভবত বাংলাদেশের সাকিবও একমত, 'আমাদের প্রথম দুটা জয়েই শফিউলের অবদান ছিল। আজও খুব ভালো বোলিং করেছে। আমার বিশ্বাস ভারত ম্যাচ থেকে অনেক কিছু শিখেছে ও।'
বিদেশি সাংবাদিকরা আবার সাকিবের কাছ থেকে অন্য কিছু শিখতে (জানতে) চান। কালকের একাদশে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই বাঁহাতি! বাংলাদেশ অধিনায়ক ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন, 'পাঁচ না, লোয়ার অর্ডারে আরো দুজন আছে!' দলে আকস্মিক এ বাঁহাতির ছড়াছড়ি কারো অনুকরণে নয় বলে জানিয়েছেন সাকিব, 'সাঈদ আনোয়ারের ব্যাটিং ভালো লাগত। তবে তাঁকে ফলো করার জন্য আমি বাঁহাতি না। অন্যদের ক্ষেত্রেও তাই। মিডল অর্ডারে স্থিতি আনতে আজ একজন বাঁহাতি (শাহরিয়ার) বেশি খেলেছে। তিন বাঁহাতি স্পিনার খেলিয়েছি নেদারল্যান্ডস দলে ডানহাতি ব্যাটসম্যান বেশি হওয়ায়। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় পরের ম্যাচে একাদশে আবার পরিবর্তন আসতে পারে।' তবে শুধু প্রতিপক্ষ নয়, দলের সেরা কম্বিনেশনও একাদশ নির্বাচনে বিবেচিত হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
টানা দু'ম্যাচ জিতে যখন কোয়ার্টার ফাইনাল স্বপ্ন পূরণ শেষ ধাপে, তখন অবধারিতভাবে এসে যায় সমর্থকদের বিষয়টি। নিজেদের চেয়ে উত্তাল সমর্থকদের স্বপ্নের পরিধি যে বড়, সেটিও জেনে গেছেন সাকিব। তাই ভীষণ সতর্ক অধিনায়ক, 'আমরা জানতাম যে একটা জয়ই সব বদলে দেবে। কারণ গত কিছু দিন আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। বিশ্বাস ছিল একটা বাজে ম্যাচই শেষ নয়। আমরা ঠিক পথেই আছি।'
এ পথ যেন শেষ না হয়!
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।