হাইকোর্টে লিফশুলজ- জিয়ার একক সিদ্ধান্তেই তাহেরের ফাঁসি হয়

মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০১১

সামরিক আদালতে কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার এবং পরে তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানো ছিল একটি পরিকল্পিত ও পূর্বনির্ধারিত হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের মধ্যে যদি একজনের নাম বলতে হয়, তিনি হলেন জিয়াউর রহমান। জেনারেল জিয়ার একক সিদ্ধান্তেই তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জিয়াউর রহমান একজন জটিল মানুষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। এসব কথা হাইকোর্টে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ।

http://www.dailykalerkantho.com/admin/news_images/460/thumbnails/image_460_137737.jpg

গতকাল সোমবার ঢাকায় হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন হংকং থেকে প্রকাশিত ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউয়ের সাবেক দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রতিনিধি লরেন্স লিফশুলজ। জিয়াউর রহমানের এ পরিকল্পনার কথা তাঁকে জানিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সে সময়কার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মঞ্জুর। তিনি তাঁর লিখিত বক্তব্য গতকাল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেনের বেঞ্চে উপস্থাপন করেন।
সামরিক আদালতে কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানিতে লিফশুলজ ঢাকায় এসেছেন। কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা নিয়ে করা একটি রিট আবেদনে হাইকোর্ট তাঁর বক্তব্য শুনতে চেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান চলে। এরই একপর্যায়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নেওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এম এ তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক আদালতে গোপন বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তাহেরের গোপন বিচার ও ফাঁসির সময় এ সাংবাদিককে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
গত ২০ জানুয়ারি লিফশুলজকে হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিতে অনুরোধ করেন আদালত। আদালতের এ অনুরোধ রাষ্ট্রপক্ষ ই-মেইলের মাধ্যমে লিফশুজকে জানান। কিন্তু ছেলের অসুস্থতার কারণে আদালতে উপস্থিত হতে না পারলেও তিনি তখন একটি লিখিত বক্তব্য পাঠান, যা গত ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। তবে ওই লিখিত বক্তব্যে তিনি সুযোগ পেলে ঢাকায় এসে আদালতে উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। তারই অংশ হিসেবে গত রবিবার তিনি ঢাকায় আসেন। ঢাকা এসেই তিনি অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি আদালতে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। গতকাল তিনি আদালতে বক্তব্য দেন।
কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার পর তাঁর বিচার নিয়ে লিফশুলজের তিনটি প্রতিবেদন ১৯৭৬ সালের ২৩ ও ২৪ জুলাই ডেইলি স্টার প্রকাশ করে। লিফশুলজ ১৯৭৬ সালে কর্নেল তাহেরের বিচার পর্যবেক্ষণ এবং এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরির জন্য ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার সম্পর্কে আগে থেকেই জেনারেল মঞ্জুরের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছিলেন। মঞ্জুর তাঁকে তাহেরের বিচার নিয়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ করেন। কিন্তু তৎকালীন সামরিক কর্মকর্তারা তাঁকে বিচারের সংবাদ সংগ্রহ করতে দেননি। তাঁকে কারাগারের সামনে আটক করে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর এ কারণেই আদালত লিফশুলজের বক্তব্য শুনতে চান।
গতকাল দুপুর ২টা ২২ মিনিটে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে আদালতে হাজির হন লিফশুলজ। এরপর বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করার অনুরোধ জানান। শুরুতেই আদালত তাঁকে বাংলাদেশ সফর নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। সে বিষয়ে উত্তর দেওয়ার সময় অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, লিফশুলজ লিখিত বক্তব্য পেশ করবেন। এরপর আপনার কোনো কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাসা করতে পারবেন। পরে লিফশুলজ লিখিত বক্তব্য দেন।
লিফশুলজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, সামরিক ট্রাইব্যুনালে কথিত বিচারের আগেই জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগতভাবে লে. কর্নেল এম এ তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যে কারণে আদালতে সাজানো বিচার করে তড়িঘড়ি ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কর্নেল তাহেরসহ অন্যদের বিচার ছিল একটা অসাংবিধানিক ব্যবস্থা। এটা একটা রাষ্ট্রীয় অপরাধ।
লিফশুলজ বলেন, তাহেরের বিচার ও ফাঁসি ঠেকানোর চেষ্টা করেও সফল হননি জেনারেল মঞ্জুর। সব আইনকানুন ও বাংলাদেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে তাহেরকে ওই বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এ বিষয়ে তিনি জিয়াউর রহমানের একটি সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জিয়া তাতে রাজি হননি।
লিফশুলজ আরো বলেন, 'আমার অভিমত, ১৯৭৬ সালের জুন ও জুলাই মাসে ঢাকায় একটি হৃদয়বিদারক অপরাধ (ট্র্যাজিক ক্রাইম) ঘটানো হয়েছিল। আমিই ছিলাম এ ঘটনার একমাত্র নিরপেক্ষ সাক্ষী।' তিনি বলেন, '১৯৭৬ সালের ২৮ জুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেছি। তাহেরের বিচারকে কেন্দ্র করে সেখানে একটি যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল। দেখে মনে হয়েছিল যেন সেনাবাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেখানে কারাগারের দেয়াল ঘেঁষে মেশিনগান বসানো হয়।'
লিফশুলজ বলেন, '১৯৭৬ সালের জুনের প্রথম দিকে কাঠমাণ্ডু থেকে ঢাকায় আসি। এর আগে ১৯৭৫ সালের আগস্টে বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করেছি। একই বছরের ৭ নভেম্বরের ঘটনা সম্পর্কেও রিপোর্ট করেছি।'
লিফশুলজ আরো বলেন, 'আমি ঢাকায় নেমে মেজর জেনারেল মঞ্জুরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। মঞ্জুর একসময় সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ছিলেন। এর আগে ১৯৭৪ সালে নয়াদিলি্লতে তাঁর সঙ্গে পরিচয়। তখন মঞ্জুর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়ে ভারতে দায়িত্বরত ছিলেন। সে সময় তাঁর কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা শুনেছি।' তিনি, 'কর্নেল তাহের ও মেজর জিয়াউদ্দিন একসঙ্গে পাকিস্তান থেকে কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। কর্নেল তাহের মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ইকোনমিক রিভিউর বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কারণে বাংলাদেশের অনেক সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে আমার আগে থেকেই জানাশোনা ছিল।'
লিফশুলজ বলেন, 'আমার ঢাকায় আসার কথা শুনে মঞ্জুর খুব খুশি হয়েছিলেন। তিনি আমাকে একদিন সেনাসদরে ডাকলেন। এক রাতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সে সময় তিনি (মঞ্জুর) তাঁকে কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার সম্পর্কে তথ্য দেন এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট করার অনুরোধ জানান। ওই সময় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি সেনাবাহিনীতে প্রভাব বিস্তার করছিল।'
লিফশুলজ বলেন, 'আমি জেনারেল জিয়ার একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেষ্টা করি। এ জন্য জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আমাকে প্রশ্নের তালিকা তৈরি করতে বলেন। আমি তালিকা করি। সেখানে ফারাক্কা সমস্যাসহ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করি। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সম্পর্কেও প্রশ্ন লিখি। সেখানে লিখি, কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে আপনার জীবন রক্ষা করা হয়েছিল। কেন তাহেরকে গ্রেপ্তার করা হলো, কেন তাঁকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না, কেন তাঁকে আটক রাখা হয়েছে? এসব প্রশ্ন লিখি। কিন্তু আমাকে সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলো না। এতে আমি আশ্চর্য হইনি। কারণ ওই জেনারেলের অন্য পরিকল্পনা ছিল।'
লিফশুলজ আরো বলেন, আমি ব্রিটেনের ক্যামব্রিজে বসবাস করছিলাম। তখন মঞ্জুর আমাকে বলেছিলেন, তিনি (মঞ্জুর) তাহেরের বিচার বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর তৃতীয় ব্যক্তি হওয়ার পরও তখন তিনি ছিলেন ক্ষমতাহীন।
লিফশুলজ বলেন, আধুনিক সভ্যতার বড় সম্পদ হচ্ছে স্মৃতিশক্তি। আমি পুরনো স্মৃতির বর্ণনা দিতে এসেছি। তিনি বলেন, সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, কর্নেল তাহেরের বিচারের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হয়নি। ওটা ছিল একটা অপরাধ। যাঁরা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা আমাদের মতো সাধারণ কোনো লোক নন। মানব ইতিহাসে এ ধরনের লোকের জন্ম আগেও হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।
আদালত লিফশুলজকে জিজ্ঞাসা করেন, তখন বাংলাদেশে অনেক ঘটনা থাকার পরও কেন কর্নেল তাহেরের বিচারের বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে এসেছিলেন? জবাবে লিফশুলজ বলেন, ওই ঘটনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জড়িত ছিল।
আদালত জিজ্ঞেস করেন, সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু অভিযোগ করেছেন, জিয়াউর রহমান বিচারের নামে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনাকর্মকর্তাকে হত্যা করেছেন। এ বিষয়ে আপনি কী বলেন?
জবাবে লিফশুলজ বলেন, জানি না।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কারা সুবিধাভোগী_আদালতের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক সুবিধাভোগীর একজন জিয়া। কর্নেল রশিদ ও ফারুক বক্তব্য দিয়েছে যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার আগে জিয়ার সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, জিয়া ছায়ার মতো নেপথ্যে ছিলেন। পেছন থেকে সুর বাজিয়েছেন। জিয়া একজন জটিল মানুষ ছিলেন। মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের কাছ থেকে মুক্তির জন্য কর্নেল তাহেরের সাহায্য চেয়েছিলেন জিয়া। অথচ জিয়াই তাহেরকে ফাঁসি দিলেন।
আদালত বলেন, আপনি (লিফশুলজ) কর্নেল তাহের হত্যাকাণ্ডকে একটি গুপ্তহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের মধ্যে একজনের নাম বলতে বললে কার নাম বলবেন?
জবাবে লিফশুলজ বলেন, জিয়া।
আদালত বলেন, তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার আগে জিয়াসহ ৪৬ জন সামরিক কর্মকর্তার বৈঠক হয়। এ বৈঠক সম্পর্কে কী জানেন? জবাবে লিফশুলজ বলেন, জেনারেল মঞ্জুরের কাছে শুনেছি, কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্তের কথা ওই বৈঠকে জিয়াউর রহমান জানিয়ে দেন।
আপনি পত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ওই বিচার দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন কি না_প্রশ্নের জবাবে লিফশুলজ বলেন, চেষ্টা করেছি। তবে পাইনি।
বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে লিফশুলজের বক্তব্য শেষ হয়। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল বক্তব্য দিতে গেলে আদালত বলেন, অ্যামিকাস কিউরির বক্তব্য শুনব আমরা। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তাহলে এরপর আমি বলব। এরপর আদালত অ্যাডভোকেট এম আই ফারুকীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কাল (আজ মঙ্গলবার) তাঁর বক্তব্য পেশ করার জন্য দিন নির্ধারণ করেন।
গতকাল আদালতে লিফশুলজের বক্তব্যের সময় হাসানুল হক ইনু এমপি, অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনসহ কর্নেল তাহেরের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
লিফশুলজের ব্রিফিং : আদালত থেকে বের হয়ে লিফশুলজ অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনি আদালতে কী বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
কর্নেল তাহেরের বিচারকে কিভাবে দেখেন_প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন, অসাংবিধানিক ও বেআইনি বিচার ছিল।
৩৫ বছর আগের বিচারব্যবস্থা এবং এখনকার বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী_প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেশ অগ্রগতি হয়েছে।
এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, কর্নেল তাহেরকে পরিকল্পিতভাবে সামরিক আদালতের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিল। লিফশুলজ এ গোপন বিচার সম্পর্কে বিদেশে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ পাঠাতেন।
সামরিক আদালতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল (অব.) তাহের এবং তাঁর সঙ্গীদের বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা পৃথক চারটি রিট মামলা বিচারাধীন। ইতিমধ্যে এ মামলায় হাসানুল হক ইনু এমপি, মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ এম এম শওকত আলী, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, জাসদ নেতা বদরুল আলমের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন আদালত।
কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের, অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন ও একই বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তাঁর আরেক ভাই প্রয়াত ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ, হাসানুল হক ইনু ও রবিউল আলম, মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিনসহ ৯ জন মোট চারটি রিট আবেদন করেন।
তাহেরের বিচারের বৈধতা নিয়ে প্রথম রিট আবেদনের পর গোপন বিচারের নথি তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাহেরের বিচারের জন্য সামরিক আইনের মাধ্যমে জারি করা আদেশ এবং এর আওতায় গোপন বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানাতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার বিচারের কোনো নথি আদালতে দাখিল করতে পারেনি।
১৯৭৬ সালে সামরিক আদালতে কর্নেল তাহের, হাসানুল হক ইনু এমপির সঙ্গে মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিনসহ অপরাপর ব্যক্তির বিচার করা হয়। কর্নেল তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক আদালতের গোপন বিচারে ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই সাজা দেওয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই ভোররাতে কর্নেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
রিটে ১৯৭৬ সালের ১৬ নম্বর সামরিক ফরমানের আওতায় আদালত গঠন ও বিচারকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা, দণ্ড বাতিল ও তাঁদের হারিয়ে যাওয়া সামাজিক মর্যাদা ফিরে পাওয়ার আবেদন জানানো হয়।

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য