শাকিব খান বনাম সাকিব আল হাসান

মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০১১

দুজনের নামে আছে মিল। তবে একজনের নামের শুরু ‘শ’ দিয়ে, অন্যজনের ‘স’ দিয়ে। এ মুহূর্তে দুজনই নিজ নিজ অঙ্গনে বসে আছেন এক নম্বর আসনে। একজন রুপালি পর্দায়, অন্যজন খেলার মাঠে। একজন শাকিব খান, অন্যজন সাকিব আল হাসান। ব্যস্ততাও পাহাড়প্রমাণ। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একসঙ্গে পাওয়া গেল দুই তারকাকে। তারপর...। তাঁদের স্বপ্ন, প্রেম-ভালোবাসা, মিল-অমিলের অজানা গল্প উঠে এল এই আনন্দ আড্ডায়।

শাকিব  বনাম সাকিব

তাঁদের মধ্যে অনেক মিল। দুজনই মেষ রাশির জাতক। দুজনের বাড়িই ঢাকার বাইরে। এখনো বিয়ে করেননি কেউ। করবেন পাঁচ বছর পর। দুজনেরই ইচ্ছা মানবসেবায় নামার।
অমিলও আছে। ছোটবেলায় খেলোয়াড় সাকিব ফুটবল খেলতেন, আর নায়ক শাকিব খেলতেন ক্রিকেট। শাকিবের দলের নাম ছিল বাকের ভাই একাদশ।
শাকিব খান এখন রুপালি পর্দার জনপ্রিয় নায়ক। আর সাকিব আল হাসান ব্যাট আর বল হাতে নিজের কৃতিত্ব ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। অলরাউন্ডার হিসেবে আইসিসির ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম স্থান ও ওয়ানডেতে বোলার হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে নিজের নাম লিখিয়েছেন।
‘আনন্দ’র আয়োজনে এই দুই তারকা মুখোমুখি বসেছিলেন আড্ডায়, এক দুপুরে।
অনেক চলচ্চিত্র তারকাদের খ্যাতি (!) রয়েছেন, তাঁরা নাকি সময়সচেতন নন। তবে সেই অপবাদ ঘোচালেন নায়ক শাকিব। তিনি নির্দিষ্ট সময়ই এসে হাজির হলেন; প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে। তারপর অপেক্ষা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের জন্য। অপেক্ষার প্রহর কাটে। সাকিব আসেন একটু দেরিতে। সে জন্য এসেই দুঃখ প্রকাশ করলেন নায়ক শাকিবের কাছে। বিনয়ের কাছে পরাজিত বিলম্ব।
শুরু করলেন কবির বকুল, আপনারা দুজনই এ মুহূর্তে দুই অঙ্গনের ব্যস্ত দুই তারকা। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুজনই সবচেয়ে দামি তারকাও। ব্যস্ততা ছাপিয়ে প্রথম আলোকে সময় দেওয়ার জন্য শুরুতে আপনাদের ধন্যবাদ। এরপর সূত্রধর হবেন কামরুজ্জামান।
দুই তারকার উদ্দেশে প্রথম প্রশ্ন, এখানে আসার আগে আপনারা কোনো প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কি?
শুরু করলেন খেলোয়াড় সাকিব। তাঁর কথায় মাগুরার আঞ্চলিক টান। বললেন, ‘আসলে... ভাবছিলাম, কী বলব। তারপর ভেবে দেখলাম, শাকিব ভাই সম্পর্কে কিছু তথ্য তো জানি। আর কিছুটা শুনে তারপর বলব।’
নায়ক শাকিব জানালেন, খেলোয়াড় সাকিবের সঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়ার বিষয়টি তিনি উপভোগ করবেন, এটা বুঝেই তিনি এসেছেন। কিছুটা সংশয় কাটাবেন, নানা কিছু জানবেন। শাকিব বলেন, ‘যখন টিভির পর্দায় সাকিব আল হাসানের সাফল্য দেখি, তখন মনে করি, আমার নামেরই আরেকজন এ কাজটা করছে। যেন আমিই করছি।’
দুজন দুজনার সম্পর্কে কী জানেন?
এমন প্রশ্ন করতেই সাকিব আল হাসান যা বললেন, তাতে নায়ক শাকিব অনেকটাই অবাক।
সাকিব বললেন, ‘এ মুহূর্তে শাকিব ভাই সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন। গত ঈদে তাঁর পাঁচটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ঈদের দিনও তাঁকে শুটিং করতে হয়। আর রোমান্স নিয়ে তো অনেক কথাই আছে...।’
শাকিব পাল্টা বললেন, ‘এত কিছু জানলেন কী করে?’
সাকিব হাসতে থাকেন, ‘কেন, পত্রিকাতে তো প্রায়ই এসব খবর পড়ি!’
এবার শুরু করেন শাকিব খান, ‘সাকিব সম্পর্কে তো খোঁজখবর না রাখার কোনো কারণ নেই। কারণ তিনি আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ে অলরাউন্ডার হিসেবে সেরা অবস্থানে আছেন। কদিন হলো, তিনি ওয়ানডেতে দ্বিতীয় বোলারের তালিকায় আছেন। বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।’
সাকিব জানতে চাইলেন, ‘শাকিব ভাই, খেলা দেখার সময় পান?’
‘যখন বাংলাদেশের খেলা থাকে, তখন অনেক সময় শুটিং-ফ্লোরেই টিভি বসানো হয়। আবার কখনো শিল্পী সমিতিতে বসে খেলা দেখি।’ উত্তরে শাকিব বললেন।
একই নামের দুই তারকা দীর্ঘদিন কাজ করলেও তাঁরা এর আগে সামনাসামনি কেউ কাউকে দেখেননি, কথাও হয়নি। তবে শাকিব খান জানালেন, প্রায়ই তাঁকে একটি কথা শুনতে হয়—সাকিব ফাটায়া ফেলছে। ‘একদিন আমি ডাবিং থিয়েটারে বসে আছি। হঠাত্ শুনি, একজন এসে বলছে, ফাটায়া ফেলছে সাকিব। আমি মনে মনে ভাবলাম, কী ফাটালাম। আর একজন এসে বলছে, সাকিব বাপের বেটা। এত প্রশংসা কেন, বুঝতে পারছিলাম না। একটু পর প্রোডাকশনের একজনকে ডেকে বললাম, কী হয়েছে রে? কী ফাটালাম? ও বলল, না ভাই। ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। সাকিব ব্যাটিং কইরা ধসাইয়া দিছে। আমি তখন আনন্দিত হলাম যে আমার নামেরই একজন এ সাফল্য পাচ্ছে।’
সাকিব আল হাসান অবশ্য টিভিতে দেখেছেন পর্দার শাকিব খানকে; কখনো নাচতে, কখনো অভিনয় করতে। ‘টিভির কল্যাণেই ভাইকে দেখেছি, তিনি যে ভালো কাজ করছেন, সেটাও তাঁর কাজ দেখে বুঝেছি।’
শাকিব কখনো মাঠে গিয়ে সাকিবের খেলা দেখেছেন?
‘না। তবে বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা টিভির পর্দায় দেখেছি। ওই ম্যাচে সাকিব দারুণ খেলেছেন। বেশ আনন্দও লেগেছিল।’
সাকিব কখনোই সিনেমা হলে যাননি। তবে রুপালি জগত্টা যে অনেক আকর্ষণের, সেটা মনে করেন তিনি। ‘বাংলা সিনেমার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের দেশের যে প্রেক্ষাপট, তারই ভিত্তিতে ছবিগুলো হয়। তবে শুধু অন্য দেশের ছবির সঙ্গে তুলনা না করে আমাদের ছবিকে উত্সাহিত করা উচিত। আমি তো শুনি, শাকিব ভাইয়েরা চেষ্টা করছেন। আমার ধারণা, তাঁরা এ জায়গাটাতে আরও অনেক ভালো করবেন।’ বলছিলেন সাকিব।
অভিনয় করতে ইচ্ছা করে না?
সাকিবের সাবলীল উত্তর, ‘একটা নাটকে কাজ করছি। নাটকে আমার সঙ্গে থাকবেন তিশা। অবশ্য এরপর আর নিয়মিত করব না। দেখি কেমন লাগে। আর সিনেমায় অভিনয়টা আসলে করা হবে না। যদি করিও, তাহলে বলতে হবে, সেটা অস্বাভাবিক ঘটনা।’
শাকিবের প্রশ্ন, ‘নিয়মিত করবেন না কেন? আর এটাই বা করছেন কেন?’
‘আসলে এই নাটকের যে গল্প, সেটা ক্রিকেট নিয়ে। আমি নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কাজটা করব। নিয়মিত কাজ করা হবে না; কারণ, আমি পেশাদার অভিনেতা নই। ওটা আমার কাজও নয়। এ ছাড়া একটু একটু নার্ভাস লাগে।’
‘সেটা কি নায়িকার সঙ্গে সংলাপ বলতে?’
সাকিব হাসতে থাকেন। বেশ কিছুক্ষণ পর... ‘একটু একটু।’
আনন্দর প্রশ্ন, তাহলে যদি এমন দৃশ্য আসে, নায়িকার হাত ধরতে হচ্ছে, তখন কী করবেন?
সাকিবের উত্তর, ‘সেটা শাকিব খান করবেন।’ এরপর বললেন, ‘না... নাটকের পাণ্ডুলিপিতে তেমন কোনো দৃশ্য নেই। এ রকম দৃশ্য এলে কী করব, তা বুঝতে পারছি না এ মুহূর্তে।’ সাকিব আবার হাসতে থাকেন। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখা গেল, সাকিব সত্যি সত্যি বেশ লাজুক হয়ে উঠেছেন। চোখ, নাক, মুখ যেন অনেকটা লাল হয়ে উঠেছে। জানালেন, তিনি আসলে এর আগে স্কুলজীবনেও কোনো দিন অভিনয় করেননি।
শাকিব খানের কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘যদি এমন হয় যে আপনাকে ব্যাট হাতে মাঠে পাঠানো হলো, আর বল করবেন সাকিব, তখন কী করবেন?’
‘অনেক দিন খেলাধুলা করি না। তবে মাঠে নামার আগে সাকিবকে চুপি চুপি বলব, ভাই, বলটা এমনভাবে কোরেন, যেন আমার শরীরে না লাগে।’ বললেন শাকিব খান।
দুজনই দুই মাধ্যমে জনপ্রিয় এবং গুণী তারকা। এর পরও আপনারা বলেন, কে বেশি জনপ্রিয়?
শাকিব খান প্রথমেই বললেন, ‘আমাকে যদি বলতে বলেন, তবে আমি বলব—সাকিব আল হাসান। আমি তাঁকে ১০-এ ১০ দেব।’ সাকিব বললেন, ‘আসলে এটা বলা কঠিন। কেননা শাকিব ভাই যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই ভিড় হচ্ছে। আবার আমি যেখানে যাচ্ছি, সেখানেই অটোগ্রাফ নিতে আসছে লোকজন। ভদ্রতার খাতিরে আমার বলা উচিত; না না, শাকিব ভাই বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু আমি মনে করি, আসলে দুজনের মাধ্যম আলাদা। তবে দুজনের কাজের সরাসরি বিচারক হচ্ছেন দর্শক। আমি দুজনের মধ্যে তুলনা করার পক্ষপাতী নই। আমি বলব, শাকিব ভাই অবশ্যই তাঁর স্থানে ভালো এবং সেরা।’
দুজনই আস্তে আস্তে দুজনের অঙ্গনে বড় হয়েছেন। ঢাকা শহরের বাইরে থেকে এসে অনেক চেষ্টা করে আজ এ অবস্থানে এসেছেন। দুজনই কি বলবেন, আজকের এ অবস্থানে আসার পেছনে প্রধান তিনটি মন্ত্র কী?
‘সিনসিয়ারিটি, সিরিয়াসনেস আর সততার সঙ্গে নিজের কাজটা করা। এই তিনটি বিষয় যদি থাকে, তবে অবশ্যই সাফল্য আসবে।’ বললেন সাকিব।
শাকিব খান মনে করেন, ‘সাফল্য পেতে প্রথমে একজন মানুষের একটা বড় লক্ষ্য থাকতে হবে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাঁকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সেই সঙ্গে কাজের মধ্যে সততা থাকতে হবে। তবেই সাফল্য আসবে।’
ছোটবেলায় সাকিব আল হাসানের জীবনের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না। একেক সময় একেকটা হতে চেয়েছেন। যেমন, একবার মনে হলো যে তিনি চিকিত্সক হবেন। পরের বছর মনে হলো, না, তাঁকে প্রকৌশলী হতে হবে। পরের বার মনে হলো, না, সিএ পড়তে হবে। এরপর ঝোঁক গেল ফুটবলের দিকে। মনে হলো, তিনি ফুটবলার হবেন। কিন্তু শেষমেশ তিনি হলেন ক্রিকেটার। অবশ্য ফুটবলটা তিনি এখনো খেলেন।
অন্যদিকে শাকিবের ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল চিকিত্সক হবেন। পড়াশোনাও সেভাবেই করছিলেন। একসময় ক্রিকেট খেলার দিকে মনোযোগ বাড়ল। এভাবেই একদিন এফডিসিতে এসে বিপত্তি বাধল। একজন আলোকচিত্রী তাঁকে দেখেই ছবি তুললেন। সেই ছবির সূত্র ধরেই তাঁর কাছে এলেন নির্মাতারা। এরপর রুপালি জগতের হাতছানি। এবং সত্যি সত্যি তিনি আজ রুপালি পর্দার মানুষ।
এত কিছুর পরও শাকিবের একটা সাধ অপূর্ণ ছিল। খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন। সেটিও তাঁর পূর্ণ হতে চলেছে। ‘আমি ক্রিকেটের ওপর একটি ছবিতে অভিনয় করছি। ছবির নাম টিম বাংলাদেশ। ব্যাংকক ও ভারতে এ ছবির শুটিং হবে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট সামনে রেখেই ছবিটি তৈরি হচ্ছে।
দুই তারকাই জীবনে ঘটনাবহুল দিন পার করেছেন। এর পরও তাঁদের জীবনের স্মরণীয় দিন কোনটি?
সাকিব জানালেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করতে গিয়ে মাশরাফি ইনজুরিতে পড়েন। তখন দলের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর ওপর। ‘সিরিজ জিতলাম যেদিন, সেই দিনটা ছিল আমার জীবনের অন্য রকম একটা দিন। সেই দিনটার কথা সত্যি আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না।’ বললেন সাকিব।
শাকিব খানের জীবনের অনেকগুলো আনন্দদায়ক দিনের মধ্যে গত রোজার ঈদের দিনটি ছিল সেরা। ‘এই ঈদেই আমার পাঁচটি ছবি মুক্তি পায়। ঈদটি ছিল আমার জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। কারণ আমার বিরোধী শিবিরের লোকজন চারদিক থেকে আওয়াজ তুলেছিল, এবার আমার ছবিগুলো ধরাশায়ী হবে, ভিডিও পাইরেসি হবে। আর সেই ঈদের দিনই আমাকে দুপুরে যেতে হচ্ছে ব্যাংককে। সন্ধ্যায় ব্যাংকক বিমানবন্দরে নেমেই মোবাইলের সিমকার্ড নিলাম। ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম। শুনলাম, পাঁচটি ছবিই সুপারহিট। বিদেশের মাটিতে বসে সেই আনন্দের সংবাদ যখন গভীর রাত পর্যন্ত পাচ্ছিলাম, সেটা কত আনন্দের ছিল, বলে বোঝাতে পারব না’ বললেন শাকিব খান।
কাজের ব্যস্ততার মধ্যে দুজনই আড্ডা পছন্দ করেন। দুজনেরই আছে বেশ কিছু বন্ধু। শাকিব খান শুটিং শেষে মাঝেমধ্যে তাঁর সহকর্মীদের কাউকে কাউকে বন্ধু হিসেবে বেছে নেন। তাঁদের সঙ্গেই শেয়ার করেন বিভিন্ন সমস্যার কথা। আর সাকিবের আছে স্কুলজীবনের কয়েকজন বন্ধু। তবে এখন তাঁর বন্ধু বলতে দলের খেলোয়াড়েরা। সারাক্ষণই তাঁরা মজা করেন, আড্ডা দেন।
বন্ধু যখন আছে, বান্ধবী তো আছে নিশ্চয়ই?
প্রশ্ন শুনে দুজনই একটু নড়েচড়ে বসেন। শাকিব খান বান্ধবীর কথা বলতে গিয়ে শোনালেন এক করুণ কাহিনী। “আমার বন্ধুত্ব হয় ‘র’ আদ্যক্ষরের এক মেয়ের সঙ্গে। দেখতে-শুনতে বেশ ভালো। তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়। একটা সময় আমার কাজের ব্যস্ততার জন্য তার সঙ্গে দেখা করা তো দূরের কথা, ফোনেও কথা বলতে পারি না। দেখা গেল, ঈদের দিন আমি চলে যাচ্ছি বিদেশে শুটিং করতে। বিষয়টি সে ভালোভাবে নিতে পারল না। দেশে যখন ফিরে এলাম, তখন সে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাকে সে তার সিদ্ধান্তের কথা জানাল। আমি তাকে কিছুতেই বোঝাতে পারিনি। এর পর থেকে তার সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। পরে আমি ভেবে দেখেছি, আসলে আমার মতো মানুষের জীবনে বান্ধবী আর আসবে না। কারণ, যে মানুষ সকাল সাতটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তার কাছে আর কে আসে?”
সাকিব আল হাসানের ব্যাপারটা অবশ্য অন্য রকম। ‘আমাকে ফোন করেন মেয়েভক্তরা। এরপর যাঁদের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে, তাঁদের সঙ্গেই কথা বলি। কখনো অনেক সময় নিয়ে কথা বলি, আবার কখনো অল্পেই সেরে নিই। তারপর কথা বলতে বলতে একসময় কেউ যদি দেখা করতে চায়, তবে তার সঙ্গে দেখা করি। তবে বিশেষ কেউ এখনো আমার জীবনে আসেনি। এমনিতেই বান্ধবী আছে, এটা সত্য। বিশেষ কোনো সম্পর্ক এখনো কারও সঙ্গে হয়ে ওঠেনি।’ বলছিলেন সাকিব।
এবার দুজনকেই সরাসরি প্রশ্ন করি, দুজনেই অবিবাহিত। কবে বিয়ে করছেন?
দুজনেই মিল রেখে উত্তর দিলেন, ‘পাঁচ বছর পর।’
কেন, বিয়ে করলে কি ক্যারিয়ারে ধস নামে?
নায়ক শাকিব বললেন, ‘তাহলে তো সালমান শাহ টিকতে পারতেন না। তিনি তো বিয়ে করেই এসেছিলেন। আসলে বিয়ের সঙ্গে ক্যারিয়ারের কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। বরং আমি বলব, মাঝেমধ্যে ভীষণ একা মনে হয় নিজেকে। তখন মনে মনে ভাবি, যদি কেউ একজন থাকত, তবে তার সঙ্গে কথা বলতে পারতাম।’
সাকিব আল হাসান বললেন, ‘মাঝেমধ্যে একাকীত্ব বোধ করি। তখন মনে মনে ভাবি, একজন থাকলে ভালোই হতো। তার সঙ্গে এই সময়টা কাটাতে পারতাম। আর ওই যে বললেন না, বিয়ে করলে ক্যারিয়ারে কোনো সমস্যা হয় কি না? আমি বলব, ক্রিকেটে এর কোনো নজির নেই।’
শাকিব খান ও সাকিব আল হাসান দুজনেই সাফল্যের সিঁড়িতে পৌঁছেছেন। অভিনয় এবং খেলোয়াড়ি জীবনের যখন ইতি টানবেন তাঁরা, তখন কে কী করবেন?
শাকিব খান বললেন, ‘আমি আমার গ্রামে একটি বৃদ্ধনিবাস গড়ে তুলতে চাই। যাঁরা অসহায়, তাঁরা যেন নিজেদের সহায় মনে করতে পারেন—এমন একটি আবাস গড়ে তুলব আমি।’
সাকিব আল হাসান বললেন, ‘নিজ গ্রামে একটি ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তুলব। যেখানে বাইরে থেকে ছেলেরা এসে থাকতে পারবে, পড়াশোনা করতে পারবে এবং এখান থেকেই তারা ক্রিকেট খেলাটা শিখতে পারবে।’
শাকিব খানের ফোন বেজে উঠেছে। শুটিং ইউনিট অপেক্ষা করছে। শাকিব উঠে পড়লেন। ক্রিকেটার সাকিবকেও উঠতে হবে। দুজনার বিদায় নেওয়ার পালা। দুজনকে ক্যামেরাবন্দী করতে ব্যস্ত হলেন আলোকচিত্রী কবির হোসেন। তারপর যে যার পথে পা বাড়ালেন।

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য