সময় বেঁধে দেওয়ার চিন্তা। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ নিয়েও আলোচনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারে পরিবর্তন আসছে

বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১১

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় বড় ধরনের সংশোধনী আনার কথা ভাবা হচ্ছে। সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বেঁধে দিতে চায়। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অব্যাহত রাখার প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।
এ ছাড়া কমিটি রাষ্ট্রপতির মেয়াদের বিষয়েও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে চায়। কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী নতুন সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরপরই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। সংসদের মধ্যবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে ওই সময় নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে পরবর্তী সংসদের শুরুতে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত। অর্থাৎ সংসদের মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন না।
বিশেষ কমিটি কোনো সাংসদের লাগাতার ৯০ দিন পর্যন্ত সংসদ বর্জনের সুযোগ কমিয়ে আনারও চিন্তাভাবনা করছে। কমিটি আজ, কাল ও পরশুর বৈঠকে অমীমাংসিত আরও কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ড. এম জহির প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির মেয়াদে যে সংশোধনী আনার কথা বলা হচ্ছে, সেটা যৌক্তিক। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধতাসংক্রান্ত মামলা খুব দ্রুত নিষ্পত্তি করবেন বলে আশা করা যায়।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা: সংবিধানের ৫৮(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ ভেঙে গেলে বা মেয়াদ শেষ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। এ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে পরবর্তী সংসদের অধীনে নির্বাচিত নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বভার গ্রহণের আগ পর্যন্ত বহাল থাকবে।
বিশেষ কমিটি মনে করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কত দিনের মধ্যে তাদের দায়িত্ব শেষ করবে, তা সুনির্দিষ্ট না থাকায় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছরেরও বেশি সময় দায়িত্বে ছিল। সে জন্য কমিটি সংবিধানের নির্বাচনসংক্রান্ত বিধানের (১২৩ অনুচ্ছেদ) সঙ্গে সংগতি রেখে ৫৮(খ) অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনতে চায়। ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ ভেঙে যাওয়া ব্যতীত অন্য কোনো কারণে আসন শূন্য হলে সেই আসনটি পূরণের জন্য ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়সীমা ৯০ দিন নাকি তার কিছু বেশি হবে, সে বিষয়ে কমিটি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা করছে কমিটি। সূত্র জানিয়েছে, কমিটির অধিকাংশ সদস্যই আগামী এক বা দুই মেয়াদের পর এ ব্যবস্থা বিলোপ করার পক্ষে।
জানতে চাইলে বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে কমিটিতে আলোচনার সুযোগ আছে। কারণ এটি একটি ‘মিড নাইট ল’। ১৯৯৬ সালের ১১ দিনের একটি বিতর্কিত সংসদে আইনটি পাস হয়েছে। সে সংসদে আমরা ছিলাম না। বিএনপি এককভাবে আইনটি পাস করেছে। তাই আইনটিকে আরও বিশ্লেষণ করে ত্রুটিমুক্ত করার সময় এসেছে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু সবই প্রস্তাবিত, তাই এখনই কোনো বিষয়ে মন্তব্য করব না। তবে তাঁদের সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়াটি সঠিক নয়। সংবিধান সংশোধনের নামে তাঁরা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে। তাঁরা আদালতের নির্দেশনা যথাযথ অনুসরণ না করেই সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করেছে।’
রাষ্ট্রপতির মেয়াদসংক্রান্ত বিধান: সংবিধানের বিদ্যমান বিধান (৫০ অনুচ্ছেদ) অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি দায়িত্বভার গ্রহণের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর বহাল থাকবেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও উত্তরাধিকারী পাওয়া না গেলে রাষ্ট্রপতি এ পদে বহাল থাকবেন।
কিন্তু বিশেষ সংসদীয় কমিটি এই অনুচ্ছেদটি সংশোধনের পক্ষে। সূত্র জানায়, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের এক বছরের মাথায় রাষ্ট্রপতির পদ থেকে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিদায় এবং এরপর নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সাত বছর রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকার অভিজ্ঞতা থেকে কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটির সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির মতে, এক সরকারের সময় নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি পরবর্তী সরকারের সময় বহাল থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। সে জন্যই কমিটি সংসদের মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পরবর্তী সংসদের আগ পর্যন্ত সীমিত রাখার পক্ষে।
৯০ কার্যদিবস সংসদ বর্জনের সুযোগ: সংবিধানের ৬৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো সদস্য টানা ৯০ বৈঠক দিবস অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলে তাঁর সদস্যপদ শূন্য হয়ে যাবে। আইনের এই সুযোগ নিয়েই বিএনপি ১০ মাসের বেশি সময় সংসদ বর্জন করার পর ১৫ মার্চ অধিবেশনে যোগ দেয়। কমিটির সদস্যদের অনেকেই টানা সংসদ বর্জনের সুযোগ বাতিল করার পক্ষে। ২৪ মার্চ সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদের কাছেও একই দাবি করেন। তিনি ‘৯০ বৈঠক’-এর পরিবর্তে ‘৯০ দিন’ করার সুপারিশ করেন।
এ বিষয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আইনটি সংশোধনের প্রয়োজন আছে। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় যে প্রেক্ষাপট ছিল, তার সঙ্গে এখনকার বাস্তবতার মিল নেই।’
সূত্র জানিয়েছে, আজ-কাল-পরশু তিন দিনের বৈঠকে কমিটি সংবিধানের আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা, নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগের কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয় রয়েছে।

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য