বিএনপি মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুতে এক বর্ষীয়ান রাজনীতিককে হারিয়েছে বাংলাদেশ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ণাঢ্য রাজনীতিক জীবনের অধিকারী এই ব্যক্তিত্ব।
১৯৩৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার পাচুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন খোন্দকার দেলোয়ার। বুধবার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ৭৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন প্রবীণ এই রাজনীতিক।

১৯৪৭ সালে মানিকগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে মেট্রিক এবং ১৯৪৯ সালে দেবেন্দ্র কলেজ থেকে আইনে ডিগ্রি লাভ করেন খোন্দকার দেলোয়ার।
খোন্দকার দেলোয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে অর্থনীতিতে বিএ অনার্সসহ এমএ পাশ করেন। ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।
মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর হাত ধরেই রাজনীতিতে প্রবেশ খোন্দকার দেলোয়ারের। ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগদানের মাধ্যমে তার সক্রিয় রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানের সামনের সারির নেতা দেলোয়ার ন্যাপ প্রার্থী হিসেবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জীবনের বাকি রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে দেন জাতীয়তাবাদী এই দলটিতে।
মানিকগঞ্জের ঘিওর-দৌলতপুর সংসদীয় আসন থেকে খোন্দকার দেলোয়ার ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ, ’৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ ও ’৯৬ সালের জুনে সপ্তম সংসদ এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তিনি অষ্টম সংসদে সরকারি দলের চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংসদেও তিনি একই দায়িত্ব পালন করেন। আর সপ্তম সংসদে তিনি ছিলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ।
নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭ দলের লিয়াঁজো কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। বিগত তত্ত্ববধায়ক সরকারের ১/১১এর সময় দেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে দ্বিধাবিভক্ত বিএনপির হাল ধরেন তিনি।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা পালনের জন্য খোন্দকার দেলোয়ারকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
শিক্ষকতা দিয়ে দেলোয়ারের কর্মজীবন শুরু। সিলেটের মুরারী চাঁদ কলেজ (এমসি)সহ বিভিন্ন কলেজে তিনি অর্থনীতির শিক্ষক ছিলেন। মানিকগঞ্জ খোন্দকার নুরুল হোসেন ল’ একাডেমির তিনি প্রতিষ্ঠা অধ্যক্ষ ছিলেন।
বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হলে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ওই পদে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যক্তি জীবনে তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক খোন্দাকার দেলোয়ার হোসেন। এছাড়া তিনি অসংখ্য গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।