একটি জাতীয় নদী চাই

সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১১

আজ ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস (ইন্টারন্যাশনাল ডে অব অ্যাকশন ফর রিভারস)। আজ নদীর প্রতি জবাবদিহি করার দিন। আমরা জানি, সারা বছর নদী তার পানি ও প্রতিবেশে আমাদের জীবন সচ্ছল রাখে। এর প্রতিদান আমরা কীভাবে দিই, আজ তার হিসাব-নিকাশের দিন।
১৯৯৭ সালে ব্রাজিলে কুরিতিবা শহরে এক সমাবেশ থেকে নদীর প্রতি দায়বদ্ধতা মনে করিয়ে দেওয়া এ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেখানে একত্র হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। তাইওয়ান, ব্রাজিল, চিলি, লেসোথো, আর্জেন্টিনা, থাইল্যান্ড, রাশিয়া, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরাই ১৪ মার্চকে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন। এবার পালিত হচ্ছে ১৪তম নদীকৃত্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘নদীর জন্য অনুপ্রাণিত হোন, সৃষ্টিশীল হোন, সক্রিয় হোন’।
বস্তুত, নদী নিয়ে আমাদের অনেক কিছুই করার আছে। বাংলাদেশের মতো দেশে, যে দেশ নদীর আশীর্বাদে গড়ে উঠেছে অথচ যেখানে নদীই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, সেখানে এমন দিবস আরও তাৎপর্যপূর্ণ। নদীর ব্যাপারে সক্রিয় হওয়া আমাদের কর্তব্য। মুমূর্ষু নদীগুলোকে বাঁচাতে সৃষ্টিশীল আয়োজন ও উদ্যোগের বিকল্পও নেই। আমরা রিভারাইন পিপলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস পালন করছি। এ উপলক্ষে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে সেমিনার ও বই প্রকাশনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে নদীর বিষয়ে রিভারাইন পিপলের বর্ষপত্র নদী প্রকাশ পাবে।
একই সঙ্গে নদীকৃত্য দিবস সামনে রেখে আমরা দাবি জানাই একটি জাতীয় নদী ঘোষণার। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে বহুল আলোচিত গঙ্গাকে ভারত জাতীয় নদী ঘোষণা করেছে। গঙ্গাকে জাতীয় নদী ঘোষণা করেই ভারত সরকার খালাস হয়নি। এর মর্যাদা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে প্রধান এবং যেসব রাজ্যের ওপর দিয়ে গঙ্গা বয়ে গেছে, সেগুলোর মুখ্যমন্ত্রীকে সদস্য করে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটিও গঠিত হয়েছে।
পাকিস্তানও সিন্ধু নদীকে ‘কওমি দরিয়া’ বা জাতীয় নদী ঘোষণা এবং প্রতিবছর ২৪ জানুয়ারি সিন্ধু দিবস ঘোষণা করেছে। নদীবহুল যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন বিবেচনায় পাঁচটি প্রবাহকে জাতীয় নদী ঘোষণা করা হয়েছে। কোনোটি সবচেয়ে দূষণমুক্ত, কোনোটি সবচেয়ে প্রাকৃতিক, কোনোটি সুদৃশ্যতম, কোনোটি আবার প্রবাহিত হয়েছে ঐতিহাসিক সব স্থানের মধ্য দিয়ে। আবার বাফেলো ছাড়া বাকি চারটি নদীর পুরো অংশ ‘জাতীয়’ ঘোষণা করা হয়নি। যে অংশ নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে পড়েছে, শুধু সেটুকু।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে, শত শত নদীর দেশে একটি নদীকে আলাদা করে চিহ্নিত করার আদৌ প্রয়োজন আছে কী না? এও বলা যেতে পারে, একটি নদীকে জাতীয় ঘোষণা করে বাকিগুলোর ব্যাপারে কী হবে? কোনো কিছুকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার সাধারণ কারণ হচ্ছে, সেটার প্রতি বিশেষ মনোযোগী হওয়া। একটি নদীকে জাতীয় ঘোষণা করার অর্থ বাকি নদীগুলোর ব্যাপারে কম মনোযোগী হওয়া নয়।
আমাদের দেশে তো জাতীয় ফুল, জাতীয় ফল, জাতীয় বৃক্ষ ও জাতীয় পাখি ঘোষণা করা হয়েছে। এর অর্থ অন্যান্য ফুল, ফল, বৃক্ষ ও পাখিকে অবহেলা করা হয়নি। আমরা মনে করি, জাতীয় নদী ঘোষণা করা হলে সেটি নদী সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনার জাতীয় মডেল হয়ে উঠতে পারে। এর আদলে অন্য নদীগুলোকেও প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
আমরা যখন নদীকৃত্য দিবস পালন করছি, তখন সারা দেশের নদীগুলোর অবস্থা কী? বুড়িগঙ্গা, বালু, শীতলক্ষ্যা তুরাগসহ বহু নদী দূষিত ও দখল হয়ে যাচ্ছে নদীদস্যুদের কবলে পড়ে। নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় অনেক নৌপথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বন্যার প্রকোপ বাড়ছে। নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে যেমন জাতীয় পর্যায়ে তেমনি আঞ্চলিক পর্যায়েও সমন্বিত নীতি গ্রহণ করতে হবে। কেননা, বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীর উৎস ভারত, নেপাল ও চীন। নদী, মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো উন্নয়ন নীতি নেওয়া যাবে না।
সন্দেহ নেই, আমাদের নদীগুলোকে সচল ও স্বাস্থ্যবান করতে হলে কেবল জাতীয় নদী ঘোষণা নয়, আরও অনেক কাজ করা দরকার। কিন্তু এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতারও প্রয়োজন আছে। তাতে করে নদীবিষয়ক চিন্তা ও তৎপরতায় নিঃসন্দেহে উৎসাহ বাড়বে।

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য