কিনা মল্লিক ছিলেন মাদারীপুরের শিবচরের দুর্ধর্ষ ডাকাতসর্দার। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি লুটতরাজ ও নারীদের ওপর নির্যাতন চালাতেন; সেই অপরাধে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে হত্যা করেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সেই ডাকাতসর্দারের নামই স্থান পেয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায়। অন্যদিকে একই উপজেলার আবদুল মালেক একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যিনি রাজাকার ও হানাদারদের নির্যাতনে শহীদ হন। তাঁর নাম আজও স্থান পায়নি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়।
জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম স্মৃতিফলকে উৎকীর্ণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয় বছরখানেক আগে। শিবচরের তালিকা ঠিক আছে কি না, তা তদন্ত করে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়। তদন্তে দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ হওয়া শিবচরের ২০ জন মুক্তিযোদ্ধার নামের মধ্যে ডাকাতসর্দার কিনা মল্লিকের নাম পাওয়া যায়।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের চরদত্তপাড়া গ্রামের রেবুলা মল্লিকের ছেলে কিনা মল্লিক ছিলেন ডাকাতদলের সর্দার। যুদ্ধের সময় মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগে তাঁর বর্বরতা আরও বেড়ে যায়। ডাকাতির সঙ্গে সঙ্গে তিনি নারী নির্যাতনও চালাতেন। মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষিপ্ত হয়ে একাত্তরের সেপ্টেম্বরে উৎরাইল নামক স্থানে কিনা মল্লিককে হত্যা করেন।
মুক্তিযোদ্ধারা আরও জানান, গ্রেনেড ছুড়ে রাজাকারদের হত্যা করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মালেক। লোকমুখে শোনা যায়, রাজাকারেরা তাঁকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
শহীদ এই মুক্তিযোদ্ধার মা সবুরা বিবি বলেন, ‘ওরা আমার পোলার লাশটাও দেয় নাই। আমরা অনেক খোঁজার পর লাশ না পাইয়া ওই নদীতে গায়েবানা জানাজা দিছি।’ ছেলের স্মৃতি রক্ষার্থে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সবুরা বিবি।
কিনা মল্লিকের এলাকার বাসিন্দা সোনা মিয়া, রমজান, জহির চৌধুরীসহ অনেকে বলেন, কিনা ছিলেন দুর্ধর্ষ ডাকাত ও দুশ্চরিত্রের লোক। যুদ্ধের সময় তাঁর বর্বরতা বেড়ে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে মেরে ফেলেছিলেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘চারদলীয় জোটের আমলে কিনা মল্লিকের নাম তাঁর কোনো এক স্বজন মন্ত্রণালয়ে চাকরির সূত্র ধরে তালিকায় দিয়েছেন। তাঁর মতো দুর্ধর্ষ ডাকাতের নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় থাকাটা চরম ঘৃণার ও অপমানের। আর শহীদ মালেকের নাম না থাকাটা দুঃখজনক।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলার স্বাধীনতা-স্তম্ভে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা করতে গিয়ে তদন্তে জানতে পারি, কিনা মল্লিক ছিলেন দুর্ধর্ষ ডাকাত। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে হত্যা করেছিলেন। তালিকাটি সংশোধন করে কিনা মল্লিকের নাম বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছি।’
বিষয় সমুহ...
বিভাগীও শহর তথ্য কনিকা
আরো কিছু গুরুত্তপূর্ণ বিষয়...
মুক্তিযোদ্ধার ঠাঁই মেলেনি তালিকায় ডাকাতের নাম!
সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১১অন্তরভুক্ত বিষয় লেখকের কলাম
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।