লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত পুরান ঢাকা

মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০১১

‘সকাল আটটায় বিদ্যুৎ গেছে, আসছে ১০টায়। আবার ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ নাই। এরপর একটায় বিদ্যুৎ গেছে। সেই বিদ্যুতের দেখা পাইছি দুইটার পর। গরম না পড়তেই বিদ্যুতের এমন লোডশেডিং শুরু হইছে। এরপর কী হইব? বাংলাদেশের খেলাটাও দেখবার পারি নাই। বিশ্বকাপের খেলা কি আমরা দেখব না?’
গ্রীষ্মকাল শুরু হতে না হতেই শুরু হয়েছে তীব্র লোডশেডিং। সেই লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ এলাকার কাশ্মেরীটোলা লেনের বাসিন্দা গোলাম ফারুখ গতকাল সোমবার এভাবেই ক্ষোভ ও অভিযোগ প্রকাশ করেন।

এটি একটি ভাসমান বার্জ। এর ভেতরে রাখা হয়েছে অনেকগুলো জেনারেটর। লোডশেডিংয়ের সময় এখান থেকে ব্যবসা�
এটি একটি ভাসমান বার্জ।এর ভেতরে রাখা হয়েছে অনেকগুলো জেনারেটর।
লোডশেডিংয়ের সময় এখান থেকে ব্যবসায়ীদের বিদ্যুত্ সরবরাহ করা হয়। ছবিটি গত রোববার জিঞ্জিরা এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তুলেছেন সাজিদ হোসেন

অবশ্য এই অভিযোগ শুধু তাঁর একার নয়। সমস্যাটিও শুধু কাশ্মেরীটোলা এলাকার নয়। পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ, আজিমপুর, নারিন্দা, কুমারটুলী, পোস্তগোলা, লক্ষ্মীবাজার, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, লালবাগ রোড, সুবল দাস রোড, শেখ সাহেব বাজার, পোস্তা, নিউ পল্টন লাইন, মনেশ্বর রোড, খাজে দেওয়ান প্রথম ও দ্বিতীয় লেন এবং উর্দু রোড—সর্বত্র একই অবস্থা। এসব এলাকার বাসিন্দারা গত দুই সপ্তাহ ধরে নিজ নিজ এলাকার বিদ্যুৎ অফিসে এই অভিযোগ জানাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের কয়েকজন বলেন, এসএসসি পরীক্ষার শুরু থেকেই পুরান ঢাকায় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এরপর গরমের তীব্রতা একটু একটু করে বাড়ছে আর লোডশেডিংও অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুতের যাওয়া-আসা চলছে। এর সঙ্গে যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো বিভ্রাট সৃষ্টি হয় তাহলে তো কথাই নেই। একটানা কয়েক ঘণ্টা বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। লালবাগ রোডের বাসিন্দা মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দিন বিদ্যুৎ যায় বুঝলাম, কিন্তু রাইতে দুইটার পরও বিদ্যুৎ যাওয়ার কারণটা বুঝবার পারি না।’
নবাবগঞ্জের এক ক্রিকেটপ্রেমী বলেন, ‘বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড খেলার দিন শেষ মুহূর্তে যখন খেলাটা জইমা উঠল তখনই গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ নাই। এটা কেমন ব্যবহার? এইটা তো সহ্য করা যায় না।’
পুরান ঢাকার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে গ্রাহকদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে চানতে চাইলে লালবাগ, কামরাঙ্গিরচর, কুমারটুলী, বংশাল ও নারিন্দা উপকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলীরা বলেন, কয়েক দিন ধরে বিদ্যুতের যে চাহিদা রয়েছে, সরবরাহ সেই তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে প্রত্যেকটি এলাকায় ভাগ করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তাঁরা বিদ্যুৎ ব্যবহারে গ্রাহকদের সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন। একইসঙ্গে লোডশেডিংয়ের তথ্য জানিয়ে মাইকিং এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার সীমিত করার জন্য প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
কাঁটাবন বিদ্যুৎ সরবরাহকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মুজিবুর রহমান জানান, একটি লাইনের সংযোগ বন্ধ করে আরেকটি চলু রাখতে হচ্ছে। বিদ্যুতের উৎপাদন এবং সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আসবে।
লালবাগ উপকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম তারিক তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণ হিসেবে জানান, সেচের জন্য এখন গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে শহরে সরবরাহ কমে গেছে। গতকাল তাঁর উপকেন্দ্রে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪০ থেকে ৪২ মেগাওয়াট। সরবরাহ ছিল মাত্র ১৮ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য