আওয়ামী লীগের সমাবেশসহ প্রতিটি গ্রেনেড হামলার বিচার কবে হবে- এখন এই প্রশ্ন সকলের৷ ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ গ্রেনেড হামলায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিয়েছে৷ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত ও প্রায় এক হাজার আহত হয়৷
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র ৬ নেতাকে ফাঁসি দেয়ার পর এখন সকলের কাছে প্রশ্ন কবে শুরম্ন হবে গ্রেনেড হামলাগুলোর বিচার৷ এই প্রশ্নের উত্তর এখনো দিতে পারেনি সংশিস্নষ্টরা৷ চাঞ্চল্যকর গ্রেনেড হামলার এখনো কোন চার্জশিট হয়নি৷ ইতিমধ্যে হরকাতুলের অন্যতম নেতা মুফতি আবদুল হান্নান গ্রেনেডসহ কয়েকটি বোমা হামলার ব্যাপারে আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করতে গত বছরের শেষ দিকে রাজি হয়েছিল৷ তবে স্বীকারোক্তি আদায়ের পরিবর্তে তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে৷
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা তদনত্মের মোড় ঘুরে যায় তদনত্মকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনে৷ তদনত্মের ব্যর্থতা আড়াল করতেই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা গ্রেনেড হামলা করেছে বলে নোয়াখালীর সেনবাগের জনৈক জজ মিয়াকে দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি করানো হয়েছিল৷ পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে হরকাতের যে ক’জন জঙ্গি আদালতে স্বীকারেক্তি প্রদান করেছে তাদের বক্তব্যে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়েছে৷
আওয়ামী লীগের সমাবেশে কারা গ্রেনেড হামলা করেছিল এ প্রশ্নে রিমান্ডে থাকা মুফতি হান্নানকে দিনের পর দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে৷ হরকাতের যেসব জঙ্গি স্বীকারোক্তি করেছে তাদের বক্তব্যের সূত্র ধরে হান্নানকে প্রশ্ন করে পুলিশ ও গোয়েন্দারা অনেক তথ্য পেয়েছে৷ আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর সমাবেশস্থল এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যনত্মরে যে গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিল তা একই ধরনের৷ এছাড়া সিলেট এবং সুনামগঞ্জেও একই ধরনের গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল৷
সূত্র আরো জানায়, ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার তদনত্মকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনের পরই পুলিশ ও গোয়েন্দারা প্রতিটি গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে অনুসন্ধানে নামে৷ সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহঃ) মাজার মসজিদের সামনে বৃটিশ হাইকমিশনার মোঃ আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করার পর এক এক করে অপরাপর গ্রেনেড হামলার জট খুলতে শুরম্ন করে৷ সিলেটে বিপুল ও সুনামগঞ্জের আদালতে নাইমুর স্বীকারোক্তিতে বলেছে, ২০০৪ সালে বাড্ডায় তাদের নেতা মুফতী হান্নান গোপন বৈঠক করে নয়টি গ্রেনেড দিয়েছিল৷ তারা গ্রেনেড নিয়ে সিলেটে যাওয়ার পর হবিগঞ্জের মাজারের ইমাম তাজুলকে (পলাতক) মাজারে বিস্ফোরণ ঘটাতে দু’টি, নাজিউর রহমান নাজুকে (পলাতক) সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জনসভায় বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্যে দু’টি গ্রেনেড দেয়া হয়৷ আর একটি গ্রেনেড ছিল মিজানের (পলাতক) নিকট৷ অপর চারটি গ্রেনেডের মধ্যে বিপুল একটি শাহজালালের (রহঃ) মাজার মসজিদের সামনে বৃটিশ হাইকমিশনার, গুলশান সেন্টারে সিলেট সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাবেক মহিলা এমপি ও আওয়ামী লীগ নেত্রী জেবুন্নেছা হককে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা করেছিল৷ কিন্তু এসব হামলায় তিনজনই বেঁচে যান৷ সিলেটের মেয়রকে হত্যার মিশন নিয়ে দ্বিতীয় দফায় চার নম্বর গ্রেনেড টিলাগড়ে নিৰেপ করার পর সেটি বিস্ফোরিত হয়নি৷
হরকাতুলের মুফতী হান্নান কেন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যার টার্গেট করেছিল? সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে আদালত ফতোয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল৷ উত্তরাঞ্চলের একটি ফতোয়ার ব্যাপারে আদালতে মামলা হলে এ রায় দেয়া হয়৷ ঐ সময় ৰমতায় ছিল আওয়ামী লীগ৷ মুফতী হান্নান ২০০০ সালে গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে হরকাতের নেতা ও কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধানত্ম নিয়েছিল যে, আওয়ামী লীগ ইসলাম বিরোধী ও ভারতের দালাল৷ তারা ফতোয়া নিষিদ্ধ করার বিরম্নদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি৷ শেখ হাসিনাসহ বড় বড় নেতাদের হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের মেরম্নদণ্ড ভেঙ্গে ফেলতে হবে৷ ঐ বৈঠকের পরই রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দৰিণ গেট থেকে হরকাতুল মিছিল বের করেছিল৷ মালিবাগ মোড়ে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়৷ আর মিছিলের শেস্নাগান ছিল ‘আমরা সবাই হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগান’৷
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গ্রেনেড ছাড়াও যশোরে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সম্মেলনে, গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর জলিরপাড় ক্যাথলিক গীর্জা, রমনার বটমূল, পুরানা পল্টনে সিপিবি’র সমাবেশে, নারায়ণগঞ্জের চাষড়ায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে, সিলেট হযরত শাহাজালাল (রহঃ) মাজারে বার্ষিক ওরস চলাকালে, বাগেরহাটে শেখ হেলালের জনসভায় মুফতী হান্নানের পরিকল্পনা ও নির্দেশে জঙ্গিরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল৷ শেখ হাসিনাকে হত্যার মিশন নিয়ে ২০০০ সালের জুলাই মাসে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া হেলিপ্যাড ও জনসভাস্থলের নিকট ৭৬ কেজি ওজনের দু’টি বোমা পুঁতে রেখেছিল মুফতী হান্নান৷ কিন্তু ২০ জুলাই বোমা দু’টি উদ্ধার করা হলে প্রথম মিশনটি ব্যর্থ হয়ে যায়৷ কিন্তু মুফতী হান্নান থেমে থাকেনি৷ ২০০১ সালে সিলেটে নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনাকে হত্যার দ্বিতীয় চেষ্টা ব্যর্থ হলে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তৃতীয় দফা গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল হরকাতুলে জঙ্গিরা৷ পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, হরকাতুলের যে’কজন জঙ্গি আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে তাতে এসব তথ্য রয়েছে৷ দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে মুফতী হান্নান গ্রেনেড ও বোমা হামলার ব্যাপারে তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে৷
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।