জাপানে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ছে। এতে জাপানেও চেরনোবিল দুর্ঘটনার মতো মহা বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরমাণু বিশেষজ্ঞরা।
জাপানের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় এমনই ধ্বংসযজ্ঞ দেখা যাচ্ছে এখন।
ছবিটি গতকাল কেসেনলুমা শহর থেকে তোলা।
গত শুক্রবারের ভূমিকম্প ও সুনামিতে জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলের ফুকুশিমা-১ ও ফুকুশিমা-২ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র দুটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুই কেন্দ্রের কমপক্ষে পাঁচটি পারমাণবিক চুল্লি আংশিক বা পুরোপুরে গলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ফুকুশিমা-১ কেন্দ্রে গত শনিবার বড় ধরনের বিক্ষোরণ ঘটে। ভেঙে পড়েছে ওই কেন্দ্রের শীতলীকরণ ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞ ও কর্মীরা ওই কেন্দ্রে সাগরের পানি ঢুকিয়ে চুল্লি ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছেন। সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করে ওই এলাকা থেকে প্রায় দুই লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ওই দুর্ঘটনায় ৭ মাত্রা পর্যন্ত পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার সতর্কতা জারি করেছে। অতিরিক্ত তাপে পারমাণবিক চুল্লি সম্পূর্ণ গলে গেলেই কেবল ৬ বা ৭ মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়। ৪ বা ৫ মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয় চুল্লি আংশিক গলে গেলে।
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮৬ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউক্রেনের চেরনোবিলে। এর আগে কেবল ওই সময় ৭ মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। ওই দুর্ঘটনায় প্রথমেই সরাসরি মারা যায় ৫৬ জন। পরে তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হয়ে ক্যানসার ও আন্যান্য রোগে মারা যায় কয়েক হাজার মানুষ।
এ ছাড়া আর একটি ঘটনায় ৬ মাত্রার সতর্কতা জরি করা হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের খিস্তাম শহরে মায়াক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর তেজস্ক্রিয়তার মেঘ ছড়িয়ে পড়েছিল কয়েক শ মাইল এলাকাজুড়ে।
জাপানের দুই কেন্দ্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো সুনির্দিষ্টভাবে নিরুপণ করা যায়নি। তবে ফুকুশিমা-১ কেন্দ্রটি পর্যবেক্ষণ করছেন এমন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে তেজস্ক্রিয় উপজাত সেসিয়াম শনাক্ত করা গেছে। এ থেকে এটা নিশ্চিত যে সেখানে পারমাণবিক চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অন্তত আংশিক গলে গেছে।
ওয়াশিংটনে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে কয়েকজন পরমাণু বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেন, জাপানে চেরনোবিলের মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ রবার্ট আলভারেজ বলেন, পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পারমাণবিক চুল্লি শীতল করার ব্যবস্থা তাদের নেই। না পেরে এখন তারা সাগরের লোনা পানি ব্যবহার করছে।
মার্কিন পরমাণু নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সাবেক সদস্য পিটার ব্রাডফোর্ড বলেন, পরমাণবিক চুল্লি যদি ঠান্ডা করা না যায় তাহলে পরিস্থিতি চেরনোবিলের আকার ধারণ করতে পারে।
এর আগে ১৯৯৯ সালে জাপানের আরেকটি বড় ধরনের পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে। টোকিওর কাছে একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে উচ্চামাত্রার ইউরেনিয়ামের ভুল ব্যবহারের কারণে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। এতে ওই কেন্দ্রের দুজন মারা যায় এবং আরও অনেক কর্মীসহ আশপাশের অনেক মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এএফপি, নিউইয়র্ক টাইমস।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।