খেলোয়াড় হিসেবে আমি একেবারে যাচ্ছেতাই। তা সে ক্রিকেট অথবা ফুটবল, যে খেলাই হোক না কেন। সবার মতো শৈশবে আমারও একটা ফুটবল ছিল। আর ছিল বাসায় কাঠমিস্ত্রি দিয়ে বানানো একটা ক্রিকেট ব্যাট। দুপুর থেকেই অপেক্ষা করতাম, কখন বিকেল হবে; আর কখন মাঠে যাব! বাসার পাশের জমিগুলো ছিল আমাদের মাঠ। জায়গাটির ঘাস পরিষ্কার করে আমরা ক্রিকেট পিচ বানাতাম। খেলা পারি আর না-ই পারি, বিকেল হলেই ব্যাট হাতে হাজির হতাম মাঠে। সর্বশেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে নামতাম খেলতে এবং অধিকাংশ দিনই শূন্য রানে আউট হয়ে বোলারকে গালি দিতে দিতে বিষণ্ন মনে ফিল্ডিং করতাম। ফিল্ডার হিসেবেও আমাকে এমন জায়গায় দাঁড়াতে দেওয়া হতো, যেখানে ক্যাচ ওঠার অথবা বল আসার সম্ভাবনা একেবারেই কম। তবে বিপক্ষ দল ছক্কা হাঁকালে সেই বলটা আনার দায়িত্ব অবশ্য আমার ওপরই বেশির ভাগ সময় পড়ত। বিপক্ষ দলের বিপক্ষে আমাকে কখনোই বল করতে দেওয়া হতো না। তবে খেলা শুরুর আগে ওয়ার্মআপ হিসেবে কেউ ব্যাট করতে চাইলে আমার হাতে বল দেওয়া হতো, যাকে সীমানাছাড়া করতে ব্যাট হাতে ধরা মানুষটার খুব একটা কষ্ট হতো না। তবে এত কিছুর পরও আমি কখনোই দমে যাইনি। শৈশবের এই পারফরম্যান্স আমার কলেজ ও ইউনিভার্সিটি লাইফেও অক্ষুণ্ন রেখেছি।
খেলার দর্শক হিসেবেও আমার কোনো সুনাম নেই। সবাই একত্র হলেই যখন খেলা বিষয়ে আলোচনা শুরু করে, আমি পারতপক্ষে সযত্নে এমন আলোচনা এড়িয়ে চলি। টেস্ট ম্যাচ, ওয়ানডে ম্যাচ, এমনকি টোয়েন্টি-টোয়েন্টির কোনো ম্যাচ পুরোটা দেখার রেকর্ড আমার নেই। বড়জোর পত্রিকায় খেলার পাতায় চোখ বুলিয়ে খেলার সংক্ষিপ্ত ফলাফল দেখা পর্যন্তই আমার দৌড়।
তবে একটা ব্যতিক্রম আছে। সেটা হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা। বিশেষ করে, যদি সেটা হয় বিশ্বকাপে, তাহলে তো কথাই নেই। খেলা বিষয়ে বিজ্ঞ এবং নিয়মিত খেলোয়াড় ও খেলার দর্শক হিসেবে পরিচিত আমার রুমমেট যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলার সময় আমাকে তার পাশে এসে বসতে দেখে এবং মনের ভুলে আমার মুখ থেকে দু-একটা মন্তব্য শোনে, তখন স্বাভাবিকভাবেই একটু অস্বস্তিভরে নড়েচড়ে বসে।
আমি খেলতে পারি না, খেলা দেখিও না। শুধু একটা জিনিস বুঝি, তা হলো ১১ জন তরুণ বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকার জার্সি পরে ব্যাট-বল হাতে মাঠে নামেন, তাঁরা শুধু ক্রিকেট নামের খেলাটা খেলতে মাঠে নামেন না। বরং ১৬ কোটি বাঙালির প্রাণের দেশকে গোটা বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করতে এই ১১ জন যুবক ব্যাট-বল হাতে নেন। তাঁরা জানেন, ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন, সমর্থন ও শুভ কামনা তাঁদের সঙ্গে আছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাবিনা ইয়াসমীনের গাওয়া ‘একটি বাংলাদেশ, তুমি জাগ্রত জনতার, সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার’ কথাগুলো আর সবার মতো রয়েল বেঙ্গল টাইগার-খচিত এই ১১ যুবকের হূদয়েও অসীম সাহস জোগায়। দেশে ও প্রবাসের সব বাংলাদেশি আজ তাকিয়ে আছে এই কয়েকজন যুবকের দিকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য শুভ কামনা। গর্জে ওঠো বাংলাদেশ!
মো. জিয়াউর রহমান
এডমন্টন, আলবার্টা, কানাডা।
সুত্রঃ প্রথম আলো
তারিখঃ বুধবার, ৯ মার্চ ২০১১,
তারিখঃ বুধবার, ৯ মার্চ ২০১১,
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।