প্রবাসীদের দৃষ্টিতে গণতান্ত্রিক সরকারের দেড় বছরঃ পররাষ্ট্র নীতি এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ভাল করলেও আইন শৃঙ্খলায় ব্যর্থ

সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১১

৬ জুলাই বর্তমান সরকারের দেড় বছর পূর্তি হয়েছে। এ সময়ে সরকারের কর্মকান্ড কেমন ছিল সে ব্যাপারে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার লোকজনের মতামত চাওয়া হয় বার্তা সংস্থা এনার পক্ষ থেকে। সুধীজনের সকলেই সমালোচনা করেছেন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যর্থতার জন্যে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত না হবার ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন কৌশলের প্রশংসা করেছেন কেউ কেউ। এছাড়া পররাষ্ট্র নীতি এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যবস্থাপনারও প্রশংসা করা হয়েছে। তবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড অব্যাহত থাকা এবং ছাত্রলীগের মাস্তানী বন্ধ না হওয়ায় প্রায় সকলেই সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রশ্নে কাজের চেয়ে গলাবাজি বেশী হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

http://www.samakal.com.bd/admin/news_images/198/image_198_35934.jpg

উইসকনসিন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্র বিজ্ঞানের রোজবুশ প্রফেসর অব এমিরেটাস ড. জিল্নুর রহমান খান সরকারের ১৮ মাসের কর্মকান্ডের মূল্যায়ন করতে গিয়ে পররাষ্ট্র নীতি ‘এ মায়নাস’, , ম্যাক্রো ইকনোমির স্থিতি ‘এ মায়নাস’ এবং শিক্ষা সংস্কার ‘এ’, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ‘বি মায়নাস’, মানবাধিকার ‘বি’, রাজনৈতিক সংস্কার ‘সি’, বিচার বিভাগীয় সংস্কার ‘সি’, প্রশাসনিক সংস্কার ‘সি’, দারিদ্র্য বিমোচন ‘সি প্নাস’ এবং বিকেন্দ্রীকরণকে ‘ডি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

সারাবিশ্বে কর্মরত সাংবাদিকদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে লড়াইরত নিউইয়র্কভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এর এশিয়া প্রোগ্রাম পরিচালক বব ডায়াজ বলেছেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মুক্ত সাংবাদিকতার ব্যাপারে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। খুব কমই অবদান রয়েছে তাদের। সিপিজে সারাবিশ্বে স্বাধীন সাংবাদিকতার অবস্থান নিয়ে যে ইনডেক্স তৈরী করেছে বাংলাদেশের অবস্থান সেখানে ১১। বেশ কয়েকজন সাংবাদিক খুন হয়েছেন অনেক আগে, নতুন সরকার এসে সে সবের বিচার শুরু করতে পারেনি। গত এক দশকে খুন হয়েছেন ৭ সাংবাদিক। একটি খুনেরও বিচার হয়নি অথবা কারো দন্ড হয়নি। অধিকন্তু সরকারের সমালোচনাকারী সাংবাদিকরা হুমকি-ধামকির সম্মুখীন হচ্ছেন। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা এবং পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে জেলে নেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মীরা সাংবাদিকদের উপর চড়াও হচ্ছে। সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। অবাধ, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ তৈরীর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই নিতে হবে।

ওয়াল স্ট্রীট জার্ণালে অর্থনৈতিক বিষয়ক বিশ্লেষক এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে স্ট্রেয়ার ইউনিভার্সিটির এডজাঙ্কট অধ্যাপক ড. ফাইজুল ইসলাম বলেন, জ্বালানী সংকট নিয়ে দেড় বছরে আশাপদ কিছু হবে সেটি আমি বলতে চাই না। তবে এ সংকট মোকাবেলায় যেভাবে এগুনো দরকার তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ’র কনসেপ্ট ব্যক্তি বিশেষের নাকি জাতীয়-সে ব্যাপারটি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। জাতীয় সংসদে ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনা যথাযথভাবে উপস্থাপিত হওয়া দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সংস্কার বিল নিয়েও এ ধরনের লুকোচুরি করা হয়েছিল। অবশেষে তা কংগ্রেসে উত্থাপন করতে হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে প্রবাসীদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর কোন ব্যবস্থা রয়েছে বলেও শুনিনি। তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ড ঠেকাতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে-এটা স্বীকার করা দরকার।

ফ্লোরিডাস্থ বাই ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট আতিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি এবং সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি তৈরী হয়নি। অধিকন্তু ছাত্রলীগের মাস্তানী রোধেও সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তবে একাত্তরের ঘাতকদের বিচার এবং মিডিয়ার স্বাধীনতায় সরকার উদারতা অবলম্বন করে চলেছে-এটা স্বীকার করতেই হবে। মানবাধিকার কমিশন গঠনের মাধ্যমে সরকার তার নির্বাচনী অঙ্গিকারের পরিপূরক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে আমি মনে করছি। সরকারের মন্ত্রী-এমপি-পদস্থ কর্মকর্তাদের সহায়-সম্পদের হিসাব প্রকাশের অঙ্গিকার এখনও পূরণ হয়নি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব কমরউদ্দিন বলেছেন, এ সরকার বিদেশীদের এজেন্ডা বাস্তায়নের অঙ্গিকার নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। সেভাবেই তারা কাজ করছে। বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গতি সঞ্চার এবং গণতন্ত্র বিকাশের স্বার্থে তারা কাজ করবে-এটা আশা করা উচিত নয়। শেখ হাসিনা সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কাজে অতীতের সকল স্বৈরাচারকে হার মানিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে ধ্বংসের লীলাখেলায় লিপ্ত থেকে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা কী সম্ভব?

ডিএনসি মেম্বার খোরশেদ খন্দকার সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন একাত্তরের ঘাতকদের বিচার প্রক্রিয়া অবলম্বনের জন্য। তবে মানুষ এখনও আশাহত সামাজিক সন্ত্রাস নির্মূলে সরকারের রহস্যজনক নিরবতায়। ছাত্রলীগের গুন্ডামী সামাল দিতে না পারলে সামনের নির্বাচনে এর জের পড়বে-এতে কোন সন্দেহ নেই। একইভাবে মন্ত্রী এবং এমপিসহ শীর্ষ আমলাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশের ক্ষেত্রেও সরকারের নিরবতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেড় বছরের কর্মকান্ডে একটি সরকারের মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়, তবে তাদের শুরুটা আরো বেগবান হওয়া দরকার।

নিউইয়র্কের সেরা রেস্টুরেন্ট ডাউন টাউন ম্যানহাটানে ‘বাঞ্জারা’র মালিক এবং কমুøনিটি লিডার আবু সুফিয়ান বলেন, সরকারের পররাষ্ট্র নীতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারকে ভালো মনে হচ্ছে। তবে আইন শৃঙ্কলা পরিস্থিতির উন্নয়নে তারা প্রশংসা পাবার মত কাজ এখনও করতে পারেনি। বিশেষ করে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণে যে ব্যর্থতার পরিচয় তারা দিচ্ছে, দেশবাসীর হতাশা সে কারণে বেড়েই চলেছে। প্রবাসীরাও স্বস্তি পাচ্ছেন না তাদের আতীয়-স্বজনের নিরাপত্তা নিয়ে। গণতন্ত্রকে ফলপ্রসূ করতে প্রধান বিরোধী দলকেও সংযমী হতে হবে। আশা করছি সকলে এসব ব্যাপারে সজাগ হবেন।

বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী দিনাজ খান বলেন, দেড় বছরের পর্যালোচনা করলে মহাজোট সরকারের প্রায় প্রতিটি কর্মকান্ডেই বিএনপিকে আক্রমণের ছাপ স্পষ্ট হয়। মোট কথা বিএনপিকে ধ্বংসের মহাপরিকল্পনা নিয়ে এ সরকার এগুচ্ছে বলে আমার মনে হয়েছে। সরকারকে এহেন মনোভাব থেকে সরে আসতে হবে গণতন্ত্রের স্বার্থে। তারুণ্যের প্রতিক তারেক রহমানকে নিয়ে যে ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এ সরকার, তা দেশবাসীর অজানা নেই।

ফার্মাসিস্ট এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউইয়র্কের সাবেক সভাপতি আকতার হোসেন বলেন, সরকারের পররাষ্ট্র নীতি এবং নারী ক্ষমতায়নের প্রশংসা করতেই হয়। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর হতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতি বজায় রাখতে সরকারকে আরো ছাড় দিতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করায় আমরা খুশী হয়েছি। আশা করছি অন্য সকল হত্যাকান্ডের বিচারে সরকার সক্রিয় হবে।

ফ্লোরিডাস্থ ব্যবসায়ী আলহাজ্ব শওকত হোসেন বলেন, সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ প্রশংসাযোগ্য। তবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ঘুষ-দুর্নীতি রোধে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। দলবাজি অব্যাহত থাকলে মানুষ আশাহত হতেই থাকবে। মানুষ অনেক আশা নিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে, সে আশা যেন অটুট থাকে সে ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে সজাগ থাকতে হবে। ভোট আবার আসবে-এটা ভুলে গেলে চলবে না।

নিউইয়র্কের ক্ষুদে ব্যবসায়ী জামাল ভূইয়া বলেন, হরতালের মাধ্যমে কখনোই বাংলাদেশের মানুষের মনোভাব জানা সম্ভব হয় না। হরতাল পালিত হয় ভয়-ভীতির কারণে। গাড়ি ভাঙ্গলে মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হন, একইভাবে রিক্সা ভাঙ্গলে রিক্সাওয়ালা পথে বসেন। দোকান খুললে লুটের আশংকা অথবা ভাঙ্গচুরের শিকার হওয়ার আশংকা থেকে ব্যবসায়ীরা তা বন্ধ রাখেন। বাস-ট্রাকও একই কারণে রাস্তায় নামে না। গত দু’দশকে যতগুলো হরতাল-অবরোধ হয়েছে তার সবগুলোই এহেন ভীতির কারণে হয়। তাই হরতালে জনমতের প্রতিফলন ঘটে না। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে এমন ভয়ংকর খেলা থেকে বিরত হওয়া।

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য