ইতালি নেয়ার কথা বলে সিলেটে একে একে অনেক তরুণীর সর্বনাশ করেছে একটি চক্র। তারা প্রতারণার জাল বিছিয়ে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করে টাকা-পয়সাও লুটে নিতো।
আর এতে সর্বস্বান্ত হয়েছে কয়েকটি পরিবার। সম্প্রতি র্যাবের হাতে প্রতারক ২ ভাই গ্রেপ্তার হওয়ায় এসব ঘটনা প্রকাশ হয়েছে। এ ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সিলেটে তোলপাড় হচ্ছে। ধিক্কার দিচ্ছে মানুষজন। গোলাপগঞ্জ উপজেলার পানিআগা গ্রামের রইছ আলীর তিন পুত্রই হচ্ছে নাটকীয় এসব ঘটনার মূল হোতা। ইতালি প্রবাসী আবদুল আজিজ এবং দেশে থাকা তার দু’ভাইয়ের বিরুদ্ধে এরইমধ্যে কয়েকটি মামলাও হয়েছে থানায়। রইছ আলীর পুত্র আবদুল আজিজ, আবদুল হাফিজ এবং আবদুল মুকিত। আজিজ ইতালি থাকলেও দেশে অবস্থানরত হাফিজ ও মুকিত সুন্দরী মেয়েদের পছন্দ করে এনে ভাই আজিজের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করতো। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে বা আবাসিক হোটেলে আজিজ স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। ২/৩ মাস পর আজিজ কাউকে কিছু না বলে পাড়ি জমান ইতালিতে। এভাবে বিভিন্ন সময় আজিজ দেশে এসে বিয়ে করেন এবং তিনি চলে যাওয়ার পর তার স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে চালানো হতো নির্যাতন। বালাগঞ্জ উপজেলার চক দৌলতপুর গ্রামের নুনু মিয়ার কন্যা লিপি বেগম (১৮) তিন ভাইয়ের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ বছরের ১২ই ফেব্রুয়ারি আবদুল আজিজ ৬ লাখ টাকার দেন মোহরে বিয়ে করেন লিপি বেগমকে। বিয়ের আকদ হয় ইতালি থেকে টেলিফোনে। আগের স্ত্রীর কথা গোপন রাখেন এ বিয়ের সময়। ২৬ শে ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন আবদুল আজিজ। আগের দিন আজিজের ভাই মুকিত ও মা বেগুননেছা লিপিকে নিয়ে যান ঢাকায়। উঠেন রাজধানীর মিরপুরে রমনা হোটেলে। তিন মাস লিপি এবং আজিজ এ হোটেলে কাটান। এরই মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যান লিপি। একদিন হঠাৎ মোবাইলের সিম বন্ধ- উধাও আবদুল আজিজ। শাশুড়ি বেগুননেছা ফোন করে লিপিকে জানান, তিনি মারাত্মক অসুস্থ। পুত্রবধূ হিসেবে লিপিকে দেখতে চান। ফোন পেয়ে লিপি বেগম কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই ছুটে যান শ্বশুরালয়ে। সেখানে যাওয়ার পর তার উপর শুরু হয় নির্যাতন। এক পর্যায়ে জোর করে লিপির গর্ভপাতও ঘটানো হয়। গর্ভপাত ঘটানোর পর লিপিকে তাড়িয়ে দেয়া হয় শ্বশুরবাড়ি থেকে। লিপি বেগম জানান, র্যাবের হাতে আবদুল মুকিত এবং আবদুল হাফিজ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি র্যাব অফিসে গিয়ে চরম প্রতারণা এবং তার উপর চালানো নির্যাতনের বিবরণ দেন। ২০০৮ সালের ১২ই মে আবদুল আজিজ ৭ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন কুলাউড়া উপজেলার বাটত্ব গ্রামের বাতির মিয়ার কন্যা নুসরাত জাহান ঝর্নাকে। এই স্ত্রীকে নিয়ে ২-১ মাস কাটানোর পর আবদুল আজিজ চলে যান ইতালি। পরে আবদুল আজিজের মা বেগুননেছা একই পথ অবলম্বন করে ঝর্নাকে গোলাপগঞ্জের বাড়িতে আনেন। শ্বশুরালয়ে আসার পর একই কায়দায় ঝর্নার উপর নির্যাতন চালান আবদুল আজিজের ভাই আবদুল হাফিজ এবং আবদুল মুকিত। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ঝর্না বেগম একদিন বাধ্য হয়ে চলে যান পিতার বাড়িতে। এ ব্যাপারে একটি মামলাও হয়েছে। ২০০৯ সালে জাল কাবিনের মাধ্যমে আবদুল আজিজ একই ধরনের বিয়ে করেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাগলা গ্রামের মৃত এনাম উদ্দিনের কন্যা জামিলা আক্তার প্রমিকে। ফেঞ্চুগঞ্জের একটি বাসায় জামিলাকে নিয়ে বসবাসের পর আবদুল আজিজ চলে যান ইতালি। বেগুননেছার ফোনে জামিলাও শ্বশুরালয়ে গিয়েছিলেন। তার উপরও চালানো হয় নির্যাতন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি ফিরে যান পিত্রালয়ে। ওখান থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। চলতি বছর ১ লাখ ৮ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন গোয়াইনঘাট উপজেলার হাদারপার গ্রামের ফয়জুর রহমানের কন্যা হোসনে আরাকে। এ বিয়ের সময় আজিজ প্রকৃত নাম গোপন করে কাবিননামায় লেখান তরিকুর রহমান। হোসনে আরাকে নিয়ে আজিজ কয়েক দিন ঢাকায় অবস্থান করে হঠাৎ করে চলে যান ইতালি। দেশে অবস্থানরত আবদুল আজিজের ভাই আবদুল হাফিজ এবং আবদুল মুকিত হোসনে আরার পিতার কাছে যৌতুক দাবি করেন। একদিনের মধ্যে যৌতুকের টাকা না দিলে হোসনে আরার লাশ পাওয়া যাবে বলে হুমকি দেন তারা। পরে ফয়জুর রহমান বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করেন র্যাব-৯ এর অফিসে। র্যাবের দেয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী ফয়জুর রহমান প্রতারক আজিজের দু’ভাইকে যৌতুকের টাকা দেয়ার সময় নির্ধারণ করেন। অবশেষে দক্ষিণ সুরমার কদমতলির একটি হোটেলে ফয়জুর রহমান যৌতুকের টাকা হস্তান্তরের সময় র্যাব হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে আবদুল হাফিজ ও আবদুল মুকিতকে। গ্রেপ্তারের পর তারা স্বীকার করেছে তাদের অপকর্মের কথা।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।