ফতোয়ার শাস্তি নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশের আদালত

রবিবার, ২০ মার্চ, ২০১১

গ্রামাঞ্চলে ফতোয়া জারী করার পর যে শাস্তি কার্যকর করা হয় তা নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশের এক আদালত। বিগত কিছুদিনের মধ্যে গ্রাম্য আদালতে হুজুরদের মাধ্যমে ফতোয়া জারীর পর বেশ কিছু নারীকে বেত্রাঘাত, চাবুক দিয়ে আঘাতের মাধ্যমে শাস্তি কার্যকর করা হয়েছে এবং গ্রামের বখাটেদের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হওয়াই ছিল তাদের অপরাধ। এ ধরনের বেশকিছু ঘটনা ঘটার পর এ ধরনের আইন জারী করা হয়েছে।

http://rtnn.net/newsimage/sec_9/subsec_25/128465337420100916.jpg

অনেকের মতে এটা ছিল বাংলাদেশের মানবাধিকার আইনের জন্য এক মাইলফলক, উচ্চ আদালতের দুইটি বেঞ্চের রীটে বলা হয়, “যে ব্যক্তিই এ ধরনের কাজ করে থাকুক না কেন, তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে”।

তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মেয়েদের কেমন নৃশংসভাবে শাস্তি দেয়া হয় এসব বিষয় তুলে ধরেছিল বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। পরকিয়ায় জড়িয়ে হয়ে পড়লে অথবা বিয়ের পূর্বেই সন্তান ধারণ করার কারণে, এছাড়াও কিছু নারীর শাস্তি হয়েছিল কারণ তারা মানুষের কাছে অন্য ধর্মের বিশ্বাসের ব্যাপারে কথা বলেছিল।

এর মধ্যে সবচাইতে নৃশংস ঘটনা হচ্ছে, ধর্ষণের পর অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়া ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ১০১ বার চাবুকের আঘাত করা হয়, অথচ ২০ বছর বয়সী ধর্ষককে মাফ করে দেয়া হয়।

গবেষকদের মতে, গ্রাম্য আদালতে ঘটতে থাকা এ ধরনের গতানুগতিক বিচার বহুদিন ধরে হয়ে আসছে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এবং এই সমস্যাটা এখন বাংলাদেশের সমাজে গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। নিজের অধিকারের ব্যাপারে মানুষের জ্ঞান ও শিক্ষার অভাব, স্থানীয় সুযোগসন্ধানী ও প্রভাবশালী নেতাদের প্রভাব এবং নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠীর উপর ব্যক্তিগত অথবা সামষ্টিক রেষারেষির জের ধরে তাদের বিরুদ্ধে ইসলামের ভুলব্যাখ্যা দিয়ে ফতোয়া জারী করা, মূল কারণ এগুলোই ।

শাহদীন মালিক, যিনি একজন মানবাধিকার কর্মী এবং ঢাকার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ডিরেক্টর, তিনি বার্তাসংস্থা এএফপি কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত এবং সমাজের নির্দিষ্ট কোন শ্রেণীর মানুষের উপর অবহেলা, এ ধরনের বিষয়গুলো অনেক কমে যাবে এই আইনের কারণে। এ আইনে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ধর্মের নামে কোন ব্যক্তির উপর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করার কোন ক্ষমতা কাউকেই দেয়া হয়নি”।

গত জানুয়ারী মাসে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ঘটে যাওয়া ঘটনা সারা বাংলাদেশবাসীকে হতবাক করে দেয়। সেখানে এক কিশোরীকে চাবুক দিয়ে শাস্তি দেয়া হয় এবং সে ঘটনায় গ্রামের মোড়লরাই ছিল উন্মুক্ত দর্শক! ঘটনার বর্ণনায় যা জানা যায়- প্রায় সময়ই স্কুলে যাওয়ার পথে সে কিশোরীকে গ্রামের এক বখাটে ছেলে উত্যক্ত করতো এবং একদিন সে জোরপূর্বক সেই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। কিন্তু মেয়েটি এ ঘটনা তার অভিভাবকদের কাছে গোপন রাখে।

তার বেশ কিছুদিন পর তার অভিভাবক তার বিয়ের আয়োজন করে পাশের গ্রামেরই এক ছেলের সাথে। কিন্তু বিয়ের পর মেডিকেল টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে যে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা, যার ফলশ্রুতিতে তার স্বামী তাকে তালাক দেয়। এরপর তাকে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করা হয় এবং তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু গ্রামের মোড়লরা সিদ্ধান্ত নেয়, যতদিন পর্যন্ত না এই কিশোরীর শাস্তি না হবে, ততদিন পর্যন্ত তারা সমাজ থেকে বহিস্কৃত থাকবে। পরবর্তীতে গ্রামের নেতার উপস্থিতিতে কিশোরীর বাড়ির উঠানেই তাকে চাবুক মেরে শাস্তি প্রদান করা হয়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

ধর্মীয় আইন অনুযায়ী এ ধরনের শাস্তির বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে যে আইন পাশ করা হয়, একে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, যারা ইতিপূর্বে বিভিন্ন ধর্মীয় আইন বা ফতোয়ার অপব্যবহারের ব্যাপারে সোচ্চার ছিল। এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকাস্থ পত্রিকা দ্যা ডেইলি স্টার বলে, “সালিসের নামে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ঘটে আসা এ ধরনের অসুস্থ কার্যকলাপ বন্ধ করতে হয়তো কিছুটা সময় লাগবে, কিন্তু এই আইন বন্ধ করতে পারবে সালিসের নামে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে চালিয়ে যাওয়া গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতন।"

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য