শুধুমাত্র একজন নারীকে ধরে-বেঁধে শারীরিক নির্যাতনের নামই নারী নির্যাতন নয়; ধর্ষণ, প্রহার, যৌতুক সহ যে কোনো অন্যায় দাবীতে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, রাস্তায় চলাচলে হেনস্থা, জোরপূর্বক বিয়ে, নারী পাচার, সন্তানদের মধ্যে ছেলে সন্তানকে মেয়ে সন্তানের উপর প্রাধান্য দেয়া সহ এ ধরনের সমস্ত অপরাধকেই নারী নির্যাতন বলা হয়। আতংকজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে নারী নির্যাতন ব্যাপারটি খুবই সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং এ ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থা বেশ নাজুক; তারা না পারে বিচার চাইতে, না পারে সেটা সয়ে যেতে। দেশের পুলিশ বিচারে সহায়তা করার চাইতে বরং ভিকটিমকেই হেনস্থা করে বেশী, যার কারনে নারীরা প্রশাসনের কাছে বিচারের জন্য যেতে আগ্রহী নয়।

জাতিসংঘের অধীনস্থ একটি সংস্থার ২০০৫ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী শুধুমাত্র ঢাকার ২২টি থানার তিন বছরের রিপোর্ট জরিপ করে দেখা যায়, তিন বছরে ধর্ষিতা হয়েছে ৮০০ জন, অপহৃত হয়েছে ১০৬৭ জন, যৌতুকের দাবীতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১১০৬ জন, পাচার হয়েছে ১২১ জন, এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৩৭ জন, আগুনে পুড়িয়ে নির্যাতন করা হয়েছে ৫৮ জনকে। মনে রাখা যেতে পারে, এ পরিসংখ্যান শুধুমাত্র ২২টি থানার । এ থেকেই বোঝা যায়, নারী নির্যাতন পুরো দেশে কতটা ব্যাপক এবং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
নারী নির্যাতনের সাথে ইদানীং যুক্ত হয়েছে শিশু বা কিশোরীদের হেনস্থাকরণ, যে কারনে বেড়েছে মেয়েদের আত্মহত্যার সংখ্যা। সিমি, রুমি, তৃষা, পূর্ণিমা, মাহিমা, তিথি, পিংকি এদের মত অগণিত মেয়ে সমাজ থেকে নিরাপত্তা পেতে ব্যর্থ হয়ে বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ। এ বছরের শুরুতে ১৪ বছরের বৃষ্টি আত্মহত্যা করে পাবনায়। এর কিছুদিন পরেই বগুড়ায় আত্মহত্যা করে রেশমা। এর পর দু’সপ্তাহও যায়নি, কিশোরগঞ্জে আত্মহত্যা করে পনের বছর বয়সী চাঁদমনি। গত এপ্রিলে ঢাকায় আত্মহত্যা করা কিশোরী ইলোরার হাসিখুশী নিষ্পাপ চেহারা কাঁদিয়েছে অনেককেই। এরা সবাই স্থানীয় মাস্তানদের হাতে হেনস্থা হয়ে নিজেদের নিরাপত্তার অভাবে বাধ্য হয়ে বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ।
নারী নির্যাতনের এই ব্যাপক চিত্র আশংকাজনক। সামাজিক সচেতনতাই পারে একে নিয়ন্ত্রণে আনতে। সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার এক্ষেত্রে কোনো বিকল্প নেই।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।