গত ২ ফেব্রুয়ারি পালিত হইয়াছে বিশ্ব জলাভূমি দিবস। জাতিসংঘের আয়োজনে ১৯৯৭ সাল হইতে দিবসটি বিশ্ব জুড়িয়া পালিত হইতেছে। এ বছর বিশ্ব জলাভূমি দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল 'বনের জন্য পানি ও জলাভূমি।' দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশেও বেসরকারি উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হইয়াছে বিশেষ সেমিনার। বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে জলাভূমি সংরক্ষণে শুধু সেমিনার বা সচেতনতা বিস্তারই যথেষ্ট নহে। সময় আসিয়াছে এ ক্ষেত্রে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের।
বাংলাদেশ আক্ষরিক অর্থেই খাল-বিল-নদী-নালা-হাওর-বাঁওড় জলাভূমির দেশ। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের লীলাভূমি এ দেশের নানা জায়গাতেই রহিয়াছে হাওর, বিল ও জলাভূমি। আবহমানকাল হইতেই মানুষের জীবনের সঙ্গে এইসব জলাভূমির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। জীববৈচিত্র্যের আবাস এইসব জলাধার। কিন্তু দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিজমি কমিয়া যাইতেছে। বৃদ্ধি পাইতেছে জমির দাম। অন্যদিকে পতিত ও অনাবশ্যক জমি হিসাবে বিবেচিত হইয়াছে বহু জলাভূমি। ফলে জলাভূমি দখল বা ভরাট করিয়া গড়িয়া উঠিয়াছে নানা প্রকার স্থাপনা। একশ্রেণীর দখলদারের আগ্রাসন হইতে দেশের নদ-নদীও রক্ষা পাইতেছে না। রাজধানী ঢাকাকে ঘিরিয়া বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা নদী-সংযুক্ত বহু খাল ইতিমধ্যে ভরাট ও নিশ্চিহ্ন হইয়াছে। ইহার ফলে বিপর্যয়ের মুখে পড়িয়াছে এই শহর। গুলশান লেকও বেদখল হইয়া যাইবার খবর দীর্ঘদিন ধরিয়া সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইতেছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হইল, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়ক জলাধারগুলিকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করিয়া উহার নিরাপত্তা ও সংরক্ষণে এখন পর্যন্ত দেশে নির্ভরযোগ্য কার্যকর ব্যবস্থাদি গড়িয়া উঠিতেছে না।
২০০০ সালে পরিবেশ রক্ষার্থে জলাধার সংরক্ষণ আইন প্রণীত হয়। এই আইনে রহিয়াছে, কোন অবস্থাতেই খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাইবে না। এমনকি সড়ক, মহাসড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণকালেও প্রাকৃতিক জলাশয়, জলাধার, খাল, নদী ইত্যাদির স্বাভাবিকতা নষ্ট করা যাইবে না। জনস্বার্থে সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য একান্তই যদি করিতে হয় তাহা হইলে সরকারের অনুমতি গ্রহণ করিতে হইবে। কিন্তু কেহই সরকারি আদেশের তোয়াক্কা করিতেছে না বলিয়া জলাশয়গুলি দ্রুত ভরাট হইয়া যাইতেছে। নির্বিচারে জলাধার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শুধু জীববৈচিত্র্যই ধ্বংসের মুখে পড়ে নাই, কৃষি উৎপাদনও হ্রাস পাইতেছে। নষ্ট হইতেছে পরিবেশের ভারসাম্য। এই অবস্থায় দেশের জলাধারগুলি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নাই।
বর্তমান সরকার অবশ্য ইতিমধ্যে অবৈধ দখলদারের হাত হইতে নদী ও খাল-বিল পুনরুদ্ধারে দৃঢ় অবস্থানের কথা ব্যক্ত করিয়াছে। আদালতও দেশের নদী-নালা, খাল ও প্রাকৃতিক জলাধারের সীমানা নির্ধারণপূর্বক দখলদারমুক্ত করার জন্য সরকারকে নির্দেশনা দিয়াছে। সরকারের মনোভাব এক্ষেত্রে ইতিবাচক হওয়াটাই যথেষ্ট নয়। জলাধার সংরক্ষণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যাহাতে একে অন্যকে দোষারোপ করিয়া ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত বাড়াইতে না পারে, সেজন্য তাহাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় দরকার। পরিবেশ ও প্রকৃতি হত্যাকারীদের কোনো দলীয় পরিচয় বিবেচ্য হইতে পারে না। আমরা পরিবেশ নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করিতে পারি নাই বিধায় দিন দিন তাহারা বেপরোয়া হইয়া উঠিয়াছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের বৃহত্তর ও সুদূরপ্রসারি স্বার্থের কথা চিন্তা করিয়া জলাধারগুলি সংরক্ষণে সরকারকে যেমন কঠোর ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হইবে, নাগরিক সমাজকেও দিতে হইবে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয়।
বিষয় সমুহ...
বিভাগীও শহর তথ্য কনিকা
আরো কিছু গুরুত্তপূর্ণ বিষয়...
জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জলাভূমি সংরক্ষণে গুরুত্ব দিতে হইবে
মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০১১অন্তরভুক্ত বিষয় লেখকের কলাম
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।