সংবিধান নিয়ে বিতর্ক হঠাত্ করেই যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্তমান সংবিধানের পরিবর্তে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবিও তোলা হচ্ছে কোনো কোনো মহল থেকে। অন্যদিকে আদালতের রায়ের নামে সংবিধান কাটাছেঁড়া করে হাজির করা ‘খসড়া’ সংবিধান প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি সংবিধানের অবৈধ কাটাছেঁড়া করেছে যারা তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন। আর সাবেক মন্ত্রী ও দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এমকে আনোয়ার অবৈধভাবে সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল উল্লেখ করে দেশে এখন কোনো সংবিধান নেই, জাতীয় সংসদের কর্তৃত্বও নেই বলেছেন। বিরোধী রাজনীতিকদের এমন কথাবার্তা হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না। বিভিন্ন আলোচনা সভায় বিরোধী নেতাদের রাখা বক্তব্যে বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার না হলেও এর গুরুত্ব মোটেই খাটো হয়ে যায় না।
নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাষ্ট্র হচ্ছে সমাজের রাজনৈতিক সংগঠন যা সংবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সংবিধান সংরক্ষণ করা এবং সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার শপথ নিয়েই সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিদেরও নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একই ধরনের শপথ নিতে হয়। বর্তমানে উচ্চ আদালতের রায়ের নামে সরকার যেভাবে সংবিধান পরিবর্তন করেছে তার সঠিকতা নিশ্চিত করার গুরুত্ব এখানেই। বর্তমান সরকার ’৭২-এর আদি সংবিধান প্রতিষ্ঠার কথা বলে অনেকটা ইচ্ছামত রদবদলের পদক্ষেপ নেয়াতেই এখন চারদিকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের সিদ্ধান্ত ছাড়া সংবিধানের যে কোনো ধরনের সংশোধন বেআইনি হতে বাধ্য। সংবিধানে বিষয়টি পরিষ্কারভাবেই উল্লেখ করা আছে। সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতিরও বিধান রাখা হয়েছে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে। উচ্চ আদালত যদি কোনো সংশোধনী বা আইন সংবিধান পরিপন্থী মনে করেন তবে তা বাতিল করতে পারেন। তবে সংবিধানে কি যুক্ত করা হবে সেটা ঠিক করে দেয়ার ক্ষমতা সংসদের, আদালতের নয়। তাই আদালতের রায়ের আলোকে সরকার যদি সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করে থাকে তবে তা নিঃসন্দেহে আইনসিদ্ধ হবে বলে মনে হয় না। তারপরও কথা রয়েছে। আদালত সংবিধানের আটটি অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের কথা বলেছেন অথচ বাস্তবে ৮০ জায়গায় পরিবর্তন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এসব নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির শেষ নেই। আমরা জেনেছি, বহুলালোচিত পঞ্চম সংশোধনীর ৪১টি ধারার বেশিরভাগই, প্রায় ৩১টি উচ্চ আদালতের রায়ে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তাহলে সংবিধানের আরও কোথায় কী কী পরিবর্তন করা হয়েছে সেটা পরিষ্কার জানা না গেলেও বিষয়টি নিয়ে মানুষ সন্দিহান হয়ে ওঠায় কাউকে দোষ দেয়া যাবে না।
বিষয়টি নিয়ে সরকারের যদি কোন বিশেষ উদ্দেশ্য থেকে থাকে তবে সেটা জনগণের সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব রয়েছে বিরোধী দলের। বিরোধীদলীয় নেতারা এখানে ওখানে বিভিন্ন আলোচনা সভায় সংবিধান পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে নানা কথা বলছেন বটে, তবে এ থেকে সব কিছু সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠছে একথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। দেশে আইন বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞ আইনজীবীর সংখ্যা কম নয়। বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যেও এমন অনেকেই আছেন। তাদের উচিত হবে বিষয়টির ওপর একটা বিস্তারিত ব্যাখ্যা হাজির করা। সংবিধান নিয়ে সরকার কোন কোন বিষয়ে বেআইনি কাজ করেছে, কোথায় কী ধরনের রদবদল করেছে সেগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়েও তারা বিস্তারিত বিবৃতি দিয়ে জনমনে সৃষ্ট অস্পষ্টতা বা বিভ্রান্তি অনেকাংশেই দূর করতে পারেন বলে আমাদের বিশ্বাস। বিষয়টি নিয়ে তারা সংসদে গিয়েও শক্ত ভূমিকা পালন করতে পারেন। জনগণ বিরোধী দলের কাছ থেকে এমনই দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করে।
বিষয় সমুহ...
বিভাগীও শহর তথ্য কনিকা
আরো কিছু গুরুত্তপূর্ণ বিষয়...
সংবিধান নিয়ে বিতর্ক : বিরোধী দলের দায়িত্বশীল ভূমিকা কাম্য
মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০১১অন্তরভুক্ত বিষয় লেখকের কলাম
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।