প্রকৃতিই হলো আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল আধার। সৃষ্টিকর্তা অপরূপ সৌন্দর্যে নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছেন এই প্রকৃতি। প্রকৃতিকে যিনি যত বেশি ভালোভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন, যিনি প্রকৃতিকে বোঝার জন্য যত বেশি চেষ্টা করেছেন তিনিই নিজেকে একজন আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অসাধারণ আবিষ্কার। আর এই আবিষ্কারের পেছনেও রয়েছে প্রকৃতির দেয়া তথ্য অনুধাবন করা। পেনিসিলিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের ইতিহাস আমরা সবাই জানি। বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং গবেষণাগারে ছোট ছোট কাচের পাত্রে ব্যাকটেরিয়ার কালচার (চাষ বা বংশ বৃদ্ধি) করতেন। একদিন তিনি দেখলেন যে, তার কালচার করা একটি পাত্রের এক পাশে এক প্রকার ছত্রাক জন্ম দিয়েছে, যা এর আশপাশের সব ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলেছে। তিনি প্রকৃতির এই ভাষা বোঝার জন্য আত্মনিয়োগ করলেন। তিনি গবেষণা করে বুঝতে পারলেন যে,্ এটি ছিল পেনিসিলিয়ান জাতীয় ছত্রাক এবং এর রয়েছে ব্যাকটেলিয়া ধ্বংসকারী ক্ষমতা। আর এই ছত্রাক থেকে তিনি প্রস্তুত করেন পেনিসিলিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক। প্রকৃতির না বলা নিশ্চুপ ভাষা বুঝতে পারার ফলে তিনি সফল হয়েছিলেন পেনিসিলিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করতে।
ওপরের এই ঘটনা প্রকৃতির ভাষা অনুধাবন করা ও নিজেকে সফল বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার এক আদর্শ উদাহরণ। বর্তমানে আমাদের মাঝে প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপক প্রচেষ্টা চলছে। আমাদের মাঝে শীতের সবজি (যেমন-টমেটো) গ্রীষ্মে এবং গ্রীষ্মের ফল (আম, তরমুজ) শীতে ফলানোর এক অসুস্থ প্রবণতা জন্ম নিয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমরা ভেবে দেখি না, গ্রীষ্মের ফলগুলো আমাদের শীতের দিনে গ্রহণের কোনো প্রয়োজন নেই। গরমের দিন আমরা সাধারণত একটু বেশি ঘামি। ফলে দেহ থেকে বেশি পরিমাণ লবণ ও পানি বের হয়ে যায়। আর এই লবণপানির ঘাটতি পূরণ ও ভারসাম্য রক্ষার জন্য সৃষ্টিকর্তা তখন প্রকৃতিতে ফলান অসংখ্য রসাল ফল। শীতের দিনে যেগুলো গ্রহণ বিলাসিতা ও অপচয় ছাড়া কিছু নয়। কারণ গ্রীষ্মের ফলের সে টাকায় আমরা প্রায় তিন গুণ পরিমাণ শীতের সবজি কিনতে পারব, যা নিশ্চিত করবে আমাদের সুস্বাস্থ্য, মেটাবে পুষ্টি ঘাটতি। শীতের দিনের কিছু শাকসবজি ও ফলমূলের ঔষধি গুণ নিয়েই তৈরি করা হয়েছে এই প্রবন্ধ।
টমেটোঃ টমেটো শীতের দিনের এক অসাধারণ সবজি, যা সবার নজর কাড়ে এবং স্বাদেও অতুলনীয়। টমেটোর এত সুন্দর বর্ণ তাতে থাকা লাইকোপেনের জন্য হয়ে থাকে। লাইকোপেন টমেটোর মূল কার্যকর রাসায়নিক উপাদান এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণসম্পন্ন। তাই টমেটো ক্ষতিকর এলডিএল’র অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে আমাদের হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ ও সবল রাখে। তা ছাড়া টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণেও টমেটো সহায়তা করে।
বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি ও মুলাঃ সবই শীতের খুবই সুস্বাদু সবজি। এ সবজিগুলোতে রয়েছে সালফোর্যাফেন ও ইনডোল-৩ কার্বিনল, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে এবং ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে কার্যকর। এ সবজিগুলোর মধ্যে মুলাকে আমরা অনেকেই হেয় করে থাকি এবং নিুমানের সবজি মনে করি। অথচ এই মুলা ক্যান্সার প্রতিরোধের পাশাপাশি পেটের সমস্যা ও প্রস্রাবের সমস্যা নিরসনে সহায়তা করে। তাই শীতে এই সবজিগুলো আমাদের বেশি বেশি গ্রহণ করা উচিত।
গাজরঃ গাজর শীতের আরেক আকর্ষণীয় সবজি। এর রঙ আমাদের সবাইকে আকর্ষণ করে। আর এই সুন্দর বর্ণের মধ্যে রয়েছে এর ঔষধি গুণ। গাজরের এই রঙের কারণ হলো এতে থাকা বিটাক্যারোটিন। বিটাক্যারোটিন আমাদের দেহের ভেতরে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে রেটিনল বা ভিটামিন-এ তে পরিণত হয়। আর এই ভিটামিন-এ আমাদের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, চোখের পাশাপাশি গাজর আমাদের ত্বকের সুরক্ষাও প্রদান করে। গাজরের বিটাক্যারোটিন আমাদের ত্বককে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে সুরক্ষা দেয় এবং ত্বককে ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে।
পালংশাকঃ শীতের সবজিগুলোর মধ্যে আরেকটি পুষ্টিকর সবজি হলো পালংশাক। এতে রয়েছে ভিটামিন, এ, সি, ই-সহ আরো অনেক ভিটামিন ও খনিজ। তাই আমাদের দেহের পরিপূর্ণ পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পালংশাক খুবই প্রয়োজনীয়।
আঙুরঃ শীতের ফলের মধ্যে আঙুর অন্যতম। আঙুরে রয়েছে রেসভেরাট্রল ও প্রোএন্থোসায়ানিডিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তাই আঙুর ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। এ ছাড়া অকালবার্ধক্য প্রতিরোধে আঙুর অদ্বিতীয়।
আমলকীঃ শীতের ফলগুলোর মধ্যে আমলকী আরেকটি সুস্বাদু ফল। আমলকীকে বল হয় ভিটামিন ‘সি’ এর রাজা। আর এই ভিটামিন ‘সি’ আমাদের ত্বকের সুরক্ষা, মাঢ়ি মজবুত করতে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
কমলালেবুঃ কমলালেবু ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ এক অনন্য ফল। কমলালেবু আমাদের ত্বককে সুরক্ষা করতে সহায়তা করে। আমরা সবাই কমলালেবুর শুধু ভেতরের রসাল অংশ খেয়ে থাকি এবং এর বাকল ফেলে দিই। অথচ এই বাকলে রয়েছে প্রচুর পেকটিন, যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই কমলা বাকলসহ জুস করে খাওয়া অধিক স্বাস্থ্যসম্মত, পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণসম্পন্ন।
আমাদের সবারই সব ঋতুর সব ফল ও সবজি অন্তত একবার গ্রহণ করা উচিত। কারণ প্রতিটি ফল ও সবজির রয়েছে আলাদা আলাদা ঔষধি ও পুষ্টিগুণ। তাই আসুন আমরা আমাদের চার পাশের শাকসবজি ও ফলমূলের ঔষধি পুষ্টিগুণ জানি এবং এগুলো গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর জীবন লাভ করি।
বিষয় সমুহ...
বিভাগীও শহর তথ্য কনিকা

আরো কিছু গুরুত্তপূর্ণ বিষয়...
শীতের শাকসবজি ও ফলমূলের ঔষধি গুণ
শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১১অন্তরভুক্ত বিষয় সাস্থ সমস্যা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।