ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ঢাকা ওয়াসা?

সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১১

নগরবাসীকে পানি সরবরাহ ও নগরের পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্বে আছে ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)। প্রায় পাঁচ দশক বয়সের এই সংস্থা যে নগরের শ্রীবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না, তা গ্রাহকদের ভোগান্তি দেখেই আঁচ করা যায়। তবে সেবার মান বাড়াতে ঢাকা ওয়াসা দুই বছর মেয়াদি একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ২০১০ সালের জুলাই মাসে চালু হওয়া ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ নামের সেই কর্মসূচির আট মাস পর কতটুকু ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা, সেই খোঁজ নিয়েছেন আলী আসিফ

কর্মসূচিতে যা আছে
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঢাকা ওয়াসা যে রীতিতে এর কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল, সেই ঘরানা থেকে বের হয়ে আসার জন্যই ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা কর্মসূচিটি হাতে নেওয়া হয় বলে জানান ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। ২০১০ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে প্রধানত পাঁচটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমরা যাদের জন্য কাজ করি, সেই নগরবাসীর কাছে আমাদের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা। তৃতীয়ত, পানির অপচয় রোধ করা। চতুর্থত, নাগরিক সেবার মান বাড়ানো এবং সর্বশেষ ওয়াসাকে একটি সেবামূলক, বাণিজ্যিক ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।’



কেমন আছেন গ্রাহকেরা?
প্রতিবছরই শুকনো মৌসুমে পানিসংকট দেখা দেয় ঢাকার বেশ কিছু এলাকায়। এবারও এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে কল্যাণপুর, বৃহত্তর মিরপুরের বেশ কিছু এলাকা, যাত্রাবাড়ীর একাংশ ও পুরান ঢাকার কিছু এলাকায় পানিসংকট দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কল্যাণপুরের বাসিন্দা ইলিয়াস উদ্দিন বলছিলেন, ‘আজ সকালে বাসায় কোনো পানি ছিল না। এক বালতি পানি দিয়েই গোসল শেষ করতে হয়েছে।’
নগরে গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিতে দুর্গন্ধ বাড়ছে। সায়েদাবাদ প্ল্যান্টের পানি যেসব এলাকায় যায়, সেখানকার পানিতে দুর্গন্ধ থাকে। বিষয়টি স্বীকার করেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে তাঁদের অজুহাত হচ্ছে, দিনে দিনে নদীর পানির স্তর নেমে যাওয়া আর নদীর দূষণ বাড়ার মতো কারণে পানি পরিশোধনের কাজটি কঠিন হয়ে পড়ছে।
এদিকে ২০১০ সালের গ্রীষ্মে পানিসংকট যখন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যায়, তখন সম্ভাব্য জনবিক্ষোভ সামাল দিতে সশস্ত্র বাহিনীর সাহায্য নিতে হয়েছে ঢাকা ওয়াসাকে। এবারও তেমন প্রস্তুতি আছে বলে ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়।
২০০৯ সালের জুলাই মাসের শেষ দিনগুলোর মুষলবৃষ্টিতে ঢাকার কয়েকটি এলাকা জেগে থাকে; বাকি সব ডুবে যায় জলে। ঢাকা ওয়াসার পানিনিষ্কাশন অবকাঠামোর কঙ্কালসার অবস্থা ফুটে ওঠে স্মরণকালের ভয়াবহ ওই দুর্যোগে। এরপর ২০১০ সালে পানিনিষ্কাশন অবকাঠামো উন্নয়নে কোমর বেঁধে নামার কথা ছিল তাদের। কিন্তু বছরজুড়ে তার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। পানিনিষ্কাশন অবকাঠামো উন্নয়নে তারা শুধু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আগারগাঁও হয়ে কল্যাণপুর খাল পর্যন্ত বড় একটি কাজ করছে। এর বাইরে মিরপুর ১ নম্বর সেকশন এলাকা ও উত্তর বাড্ডায় বড় আকারের পানিনিষ্কাশন নালা বসিয়েছে তারা। ২০১০ সালে দেরিতে আসা খানিক মাঝারি বৃষ্টি ঢাকা ওয়াসার নাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত রোকেয়া সরণিতে এবং মালিবাগের মৌচাক মোড়ের মতো বেশ কয়েকটি এলাকায় পানিনিষ্কাশন অবকাঠামোর উন্নয়ন জরুরি ছিল। আবার মিরপুর, গুলশান, উত্তরা প্রভৃতি এলাকায় শৌচাগার থেকে উদ্ভূত বর্জ্যের স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে নিষ্কাশনের অবকাঠামো তৈরি করতে পারেনি তারা। আগের মতোই নথিপত্র আর আলোচনার টেবিলেই আটকে আছে এই অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগটি। এতে ওয়াসার সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে গ্রাহকদের মনে।

যা কিছু অর্জন
পানির উৎ পাদন বাড়াতে ২০১০-এর প্রথমার্ধে কাজ শুরু হয়েছিল সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের। তিন বছরের মধ্যে কাজটি শেষ হবে বলে দাবি করেছেন ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে তাকসিম এ খান আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজটি শেষ হলে আমরা সেখানে একটি প্রি-ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসাব, যাতে পানিতে আর দুর্গন্ধ না থাকে।’
ঢাকা ওয়াসার সূত্রমতে, নগরের ৫৭২টি গভীর নলকূপ ও চারটি পানি শোধনাগারের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসার উৎ পাদন প্রতিদিন গড়ে ২০৬ কোটি লিটার। আর প্রতিদিন চাহিদা ২৩০ কোটি লিটার। ঘাটতি মেটাতে ঘুরে দাঁড়াও কর্মসূচির আওতায় গত এক বছরে ২৬টি গভীর নলকূপ বসিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। পানিসংকট মেটাতে আরও ১৬টি গভীর নলকূপ বসানোর কাজ চলছে বলে জানান ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তারা।
ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তারা আরও জানান, পানি ও পয়োনিষ্কাশন অবকাঠামো উন্নয়নে ঢাকা ওয়াসা একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পানি ও পয়োনিষ্কাশনে আর কোনো বাধা থাকবে না বলে তাঁরা দাবি করেন।
এদিকে ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা কর্মসূচির অর্জন সম্পর্কে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, বিগত এক বছরে তাঁরা অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছেন। সিস্টেম লস ৩৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৯ শতাংশে আনা হয়েছে। ওয়াসার পানির উৎ পাদন বেড়েছে ১২ থেকে ১৫ কোটি লিটার।
তাকসিম এ খান আরও জানান, ওয়াসার গ্রাহকেরা এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করতে পারছেন। তাঁরা যেকোনো ব্যাংকের যেকোনো শাখায়ও বিল পরিশোধ করতে পারছেন। ঘুরে দাঁড়াও কর্মসূচির সব সুফল পেতে নগরবাসীকে ২০১২ সালের জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে তিনি জানান।

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য