গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের জেনারেটরটি দীর্ঘ আট বছর ধরে অকেজো পড়ে আছে। জ্বালানি তেলের বরাদ্দ না থাকায় এটি চালু করা যাচ্ছে না। ব্যবহার না হওয়ায় জেনারেটরের ব্যাটারিসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে গরমের সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীদের কষ্টের সীমা থাকে না। রাতে লোডশেডিং চলাকালে রোগীরা নিজেদের কেনা মোমবাতি দিয়ে আঁধার তাড়ান।
গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের জেনারেটর এটি। তেল বরাদ্দ না থাকায় আট বছর ধরে পড়ে আছে যন্ত্রটি
গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে ডিজেল ইঞ্জিনচালিত ৪০ কিলো ভোল্টের (কেভি) জেনারেটরটি বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এতে ব্যয় হয় সাত লাখ টাকা। জেনারেটর রাখার জন্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। বৈদ্যুতিক সামগ্রীসহ জেনারেটরের পেছনে মোট ব্যয় হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এত টাকা খরচের পরও সরকারিভাবে জ্বালানি বরাদ্দ না থাকায় এটি হাসপাতালের কোনো কাজেই আসছে না। এমনকি জেনারেটর চালানোর জন্য লোকবলও নেই।
গাইবান্ধা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, এটি চালু থাকলে অস্ত্রোপচার, এক্স-রে মেশিন ও শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র চালানো যেত। পাশাপাশি হাসপাতাল এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হতো। জেনারেটরটি আনার পর এক দিনের জন্যও চালু হয়নি। ব্যবহার না হওয়ায় এর ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। যন্ত্রাংশও বিকল হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে জেলার অন্যতম চিকিৎসাকেন্দ্র ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় আলোর ব্যবস্থা নেই। গাইবান্ধা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান কবীর বলেন, ৪০ কিলো ভোল্টের এই জেনারেটর থেকে ৩২ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। যা দিয়ে শুধু হাসপাতালই নয়, বড় একটি শিল্পকারখানাও চালানো যাবে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তেল বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখতে লিখতে আমরা নিরাশ হয়ে গেছি। কবে নাগাদ তেল বরাদ্দ পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাই বেসরকারিভাবে পাওয়া ছোট একটি জেনারেটর দিয়ে ১৫-২০টি বাতি জ্বালিয়ে জরুরি বিভাগের কাজ চালিয়ে নিচ্ছি।’
সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ না থাকলে রোগীদের ওয়ার্ডসহ অন্যান্য বিভাগে ভুতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন রোগীরা নিজেদের টাকায় কেনা মোমবাতি বা কুপি জ্বালান।
হাসপাতালের ৩৩ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন ফুলছড়ি উপজেলার আলগারচর গ্রামের আবদুল খালেক (১৯) আক্ষেপ করে বলেন, ‘সনদেত (সন্ধ্যা) থাকি কারেন থাকে না। কারেন না থাকলে পায়খানাত যাওয়া যায় না। সোরকারি হাসপাতালোত চিকিতসা করব্যার আসি আনদরোত (অন্ধকারে) থাকান নাগে। বাড়িত থাকি কুপিকোনা (কুপি) না আনলে বিপদ হলো হয়।’
গাইবান্ধার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জেনারেটর দেওয়া হলেও জ্বালানি তেলের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। জেনারেটরটি চালাতে প্রতি ঘণ্টায় ১৩ লিটার ডিজেল প্রয়োজন। কিন্তু সিভিল সার্জন কার্যালয়ে তেল কেনার কোনো তহবিল নেই।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।