ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন রাকিব। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের দেয়ালে ছোট একটা বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়ল তাঁর। বিজ্ঞপ্তিটা দিয়েছে ডিইউটিএস। ছোটবেলা থেকেই ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে রাকিবের। তাই ওই বিজ্ঞপ্তি দেখে ও চলে এলেন শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্রের (টিএসসি) দোতলায় ডিইউটিএস কার্যালয়ে। প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে হয়ে গেলেন ডিইউটিএসের সদস্য। ডিইউটিএসে ভর্তির গল্পটি বলছিলেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রকিবুল হাসান।
পর্যটন নিছক নিসর্গ দর্শনই নয়, বরং যুগোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমও বটে, এ উপলব্ধি থেকেই ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ভ্রমণবিলাসী ও উদ্যোগী ছাত্রছাত্রীর চেষ্টায় ডিইউটিএসের জন্ম।
ভ্রমণপিয়াসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যুরিস্ট সোসাইটি (ডিইউটিএস)
জীবনে অন্তত দু-একবার ট্যুরে যায়নি, এমন মানুষ মেলা ভার। ভ্রমণবিলাসী মানুষেরা অর্থ আর অবসরের সন্ধি ঘটলেই চলে যায় ট্যুরে। ফ্যামিলি ট্যুর, ফেন্ডস ট্যুর, স্টাডি ট্যুর—হরেক রকম ট্যুরেই তো যাওয়া হয়। তবু ডিইউটিএস পরিবারের সদস্য সাদিয়া আফরিনের কাছে ট্যুরিস্ট সোসাইটির আয়োজিত ট্যুরগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ‘নিজের মতো করে ভ্রমণসূচি সাজিয়ে বেরিয়ে পড়া কিন্তু আসল ট্যুর নয়। ট্যুরিজম সোসাইটি আয়োজিত ট্যুরগুলোতে ট্যুরিজম ম্যানার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে যে স্থানে ভ্রমণে যাওয়া হয় এর ইতিহাস, ভূগোল, অধিবাসী প্রভৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়।’
ডিইউটিএস আয়োজিত অধিকাংশ ট্যুরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রী এবং গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে থাকে।
ট্যুর ব্যবস্থাপনায় অর্থসংস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিইউটিএসের অর্থ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সিয়াম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বার্ষিক আর্থিক অনুদান ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা (স্পন্সর) ও সদস্যদের চাঁদা ট্যুরিজম সোসাইটির অর্থের প্রধান উৎস।
নিয়মিতভাবে পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণের পাশাপাশি ডিইউটিএস মূলত অভ্যন্তরীণ পর্যটনশিল্প বিকাশে নানা ধরনের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ডিইউটিএসের সাধারণ সম্পাদক কানিজ ফাতেমা বলেন, সংগঠন কর্তৃক আলোকচিত্র ও ফিচার লেখার ওপর বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন উৎসব উদ্যাপন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পাখিমেলা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন করা হয়ে থাকে।
প্রতিবছর সদস্য নেওয়া হয়। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা এই সংগঠনের সদস্য হতে পারেন। প্রকাশনা (প্রেস) সম্পাদক মোজাহিদুল হক স্মৃতিচারণা করেন তাঁর প্রথম ট্যুরটির। ডিইউটিএস আয়োজিত তাঁদের নবীনবরণ ট্যুরটি ছিল কক্সবাজার, হিমছড়ি ও ইনানী বিচের উদ্দেশে। দুই রাত এক দিনের এ ট্যুরটি ছিল তাঁর জীবনের প্রথম সমুদ্র দর্শন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার স্মৃতিটি কখনোই ভুলবেন না মোজাহিদ।
ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী মৌসুম শীতকাল ছাড়াও বছরজুড়েই নানা ট্যুরের আয়োজন করে থাকে ট্যুরিজম সোসাইটি। প্রতি মাসেই দেশের নানা পর্যটক কেন্দ্র ঘুরতে একবার সফরে যান ডিইউটিএসের সদস্যরা। সেই সঙ্গে বছরে একবার হয়ে থাকে সার্ক ট্যুর। জানালেন ডিইউটিএসের সভাপতি সাইফুল হোসাইন ময়ুখ।
প্রকৃতির নিখুঁত সৌন্দর্য পরখ করে দেখার বাসনায় চোখ মেলে আছেন ডিইউটিএসের সদস্যরা। ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হইতে শুধু দুই পা ফেলিয়া...’। নাহ, এমন আফসোসটি করতে হবে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।