সেদিনের এই ছোট্ট ছেলেটিই আজকের মুশফিকুর রহিম

বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০১১

সপ্তম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার দিন শ্রেণীর প্রায় শ খানেক শিক্ষার্থীর মধ্যে অধ্যক্ষ জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে প্রথম হবে বলে মনে কর?’ মাত্র ছোট্ট একটি হাত উঠে আসে শিক্ষক জিজ্ঞেস করেন, ‘কেন তুমি প্রথম হবে?’ উত্তরে ছেলেটি বলে, ‘আমার আত্মবিশ্বাস আছে’ ফলাফলে দেখা যায়, সত্যি সত্যি ছেলেটি প্রথম হয়েছে সেদিনের এই ছোট্ট ছেলেটিই আজকের মুশফিকুর রহিম

মুশফিক
মুশফিকুর রহিম

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই ছোট্ট ছেলেটির কাছে আজ অনেক প্রত্যাশা শুধু কি লেখাপড়া? খেলাধুলায়ও সে ছিল সেরা আর তাই তো সে সময়ই কোচদের মতামতসংক্রান্ত মিটিংয়ে তৎকালীন চিফ কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম অন্য কোচদের বলতেন, ‘ছেলেটির প্রতি নজর রেখো ও খুব ভালো খেলে ভবিষ্যতে ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে
‘বিকেএসপিতে থাকতেই তার লেখাপড়া, শৃঙ্খলা, ব্যবহার—সবই ছিল অনুকরণ করার মতো আর তাইতো বিকেএসপি থেকে প্রথম এ+ পাওয়ার গৌরবটা তারই ভালো খেলে যে আবার ভালো ছাত্র হওয়া যায়, তা মুশফিক প্রমাণ করেছে আর তাইতো ওকে আমরা বিকেএসপির মডেল বলি’, বলছিলেন শিক্ষক শামিমুুজ্জামান স্যার বলেন, ‘মুশফিকের হাতের লেখা ছিল মুক্তোর মতো ঝরঝরে
কোচ মাসুদ হাসান বলেন, ‘ও ক্লাসে যতটা নরম ছিল, খেলার মাঠে ছিল ঠিক ততটাই চঞ্চল প্রাকটিসের ফাঁকে আসর মাতাতেও ছিল সেরা শুধু লেখাপড়া আর খেলাধুলা নয়, বিকেএসপির অন্য প্রতিযোগিতা, এমনকি দেয়ালিকা প্রতিযোগিতার সব চিন্তাও তার মাথা থেকে আসত খেলাপাগল ছেলেটি একবার বিকেএসপির শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে মেডেল জিতে নেয়
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে খেলোয়াড়দের কোটা থাকলেও তা গ্রহণ করেননি বাংলাদেশ দলের এই উইকেট রক্ষক ‘যথারীতি ভর্তিপরীক্ষা দিয়েই স্থান করে নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও পড়াশোনায় তুখোড় মেধাবী ছেলেটি’ বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান লুৎফুল হাই জামী তিনি বলেন, ‘ও যে মেধাবী, ১ম, ২য়, ৩য় বর্ষের পরীক্ষাই তার প্রমাণ সব পরীক্ষার রেজাল্ট ৩+ (১ম শ্রেণী) বিশ্বকাপের মাত্র কদিন আগেই ওর চতুর্থ বর্ষের সমাপনী পরীক্ষা শেষ হলো এবারও ভালো করবে হয়তো বা
২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই মুশফিকের সঙ্গে বিভাগে পরিচয় বেলাল হোসাইন সৌরভের সেদিন থেকেই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে বেলাল বলেন, ‘মুশফিক যেমন বিনয়ী, তেমনি বুদ্ধিমান আর তাই ক্লাসের সবার সঙ্গেই তার বন্ধুত্ব ভালো দেশের একজন বড় ক্রিকেটতারকা হলেও ক্লাসে বা আমাদের কাছে ও শুধু একজন বন্ধু মুশফিক হিসেবেই থাকতে পছন্দ করে
খেলার সময় শুধু কি শিক্ষকেরা, বন্ধুরাও সাহায্য করে তাঁর পড়াশোনায় টিভির সামনে বসেও সমর্থন দিয়ে যায় বন্ধুর খেলা দেখে যা বোঝা গেল বেলালের কথা থেকে ‘২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে মুশফিকুরের ব্যাট থেকে একের পর এক রান আসে তাই একটি মুহূর্তও মিস যেন না হয় সে জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে খেলা দেখি আমার মনে হয়, আমি উঠলেই মুশফিক আর পারবে না শেষে অর্ধশত, ৭০, ৮০, ৯০ পেরিয়ে মুশফিক যখন ৯৮-এর ঘরে, তখন মনে হলো, যাক, শতরান তো হয়েই যাচ্ছে বলতে বলতেই আমি উঠে দাঁড়ালাম আর আমার বন্ধু আউট হয়ে গেল! নিজের মধ্যে একটা অপরাধবোধ তৈরি হলো ইস! কেন যে উঠলাম! পরে এ কথা শুনে ডিপার্টমেন্টে মুশফিক তো অবাক সঙ্গে সঙ্গে আমার দিকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ, “আমার খেলার সময় ফের যদি দাঁড়াস, তাহলে...”’ এভাবেই বলছিলেন বেলাল
এবারের বিশ্বকাপে তাই ক্যাম্পাসের সহপাঠী বন্ধু নিলয়, মুজাহিদ, কায়েস, সানজিদারা বসেই খেলা দেখছেন হিমেল বলেন, ‘গত ম্যাচে (আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে) বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুহূর্তে আমাদের মুশফিকুর যেভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে এগোল, ক্লাসের পরীক্ষাতেও মুশফিক থাকে এমনই ঠান্ডা আর তাই তো ওর ফলাফলও দারুণ

0 আপনার মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

Avro Keyboard - Unicode Compliant FREE Bangla Typing Softwareবাংলা লিখার সপ্টওয়্যার আভ্র ডাউনলোড করতে খানে ক্লিক করুন
 
 
 

বিশাল বাংলা

কম্পিউটার প্রতিদিন

রাজনীতি...

বিনোদন

খেলার খবর

অর্থ ও বাণিজ্য