প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন হয়। আর বিরোধী দল ক্ষমতায় এলে উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যায়। চারদলীয় জোট অর্থাৎ বিএনপি ক্ষমতায় থাকা মানেই সারা দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, আতঙ্ক, দুর্নীতি ও লুটপাট। এ ছাড়া তারা আর কিছুই দিতে পারেনি।
বাগেরহাটে খানজাহান আলী কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় গতকাল মঙ্গলবার প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা বলেন, চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল। সে জন্য জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন তারা দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ক্ষমতায় আসতে না পেরে এবং লুটপাট আর দুর্নীতি করতে না পেরে তারা অন্তর্জ্বালায় ভুগছে।
বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) বলে থাকেন, আমরা যা করছি, তা নাকি সবই অবৈধ। তিনি ক্ষমতায় এলে আমাদের সব কাজ অবৈধ ঘোষণা করবেন, বাতিল করে দেবেন।’ খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমরা এই যে সব রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করলাম, তা কি তিনি ভেঙে ফেলবেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষকদের ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সারের দাম তিন দফা কমানো হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ২৩ কোটি ২২ লাখ বই বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গৃহহীনদের জন্য গৃহায়ণ তহবিল গঠন করে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। বয়স্ক, বিধবা ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো হয়েছে। মংলা বন্দর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন্দরটি অচল হয়ে গিয়েছিল, সচল করা হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাগেরহাট-৪ আসনের সাংসদ মোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক, সাংসদ শেখ হেলাল উদ্দিন, সাংসদ মীর শওকত আলী, সাংসদ সৈয়দা হাবিবুন নাহার, সাংসদ মোল্লা জালাল উদ্দিন, সাংসদ এম এ আউয়াল, সাংসদ নূর আফরোজ আলী, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান প্রমুখ।
উন্নয়নের কুড়ি দফা দাবি
সভামঞ্চ থেকে বাগেরহাটের উন্নয়নে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কুড়ি দফা দাবি পেশ করা হয়। এসব দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মংলা বন্দরের আধুনিকায়ন, বাগেরহাট-রূপসা রেল চালুসহ মাওয়া-গোপালগঞ্জ রেললাইনের সঙ্গে বাগেরহাট ও মংলাকে সংযুক্তীকরণ, বাগেরহাটে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ প্রভৃতি।
বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণাকেন্দ্র উদ্বোধন
এর আগে দুপুর আড়াইটায় বাগেরহাট স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টার থেকে অবতরণের পর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সড়কপথে বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণাকেন্দ্রে যান। কেন্দ্রটির উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী গবেষণাগার চত্বরে একটি বকুলগাছের চারা রোপণ করেন। পরে গবেষণাকেন্দ্রের মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আইনজীবী সমিতির বর্ধিত ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
চিংড়ি গবেষণাকেন্দ্র থেকে প্রধানমন্ত্রী সড়কপথে বাগেরহাট আদালত চত্বরে আইনজীবী সমিতি ভবনে যান। সেখানে তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির পাঁচতলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেখান থেকে যান বাগেরহাট সার্কিট হাউসে।
খান জাহান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত
প্রধানমন্ত্রী বিকেল তিনটা ৫০ মিনিটে হজরত খান জাহান (রহ.)-এর মাজারে যান এবং মাজার জিয়ারত করেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে তিনি খান জাহান আলী কলেজ মাঠে দলীয় জনসভায় যোগ দেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে বাগেরহাট ছেড়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।