সরকারের পরিবর্তন হয়েছে ছয়টি। মাঝে পেরিয়ে গেছে ১৭ বছর। প্রকল্পটির কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে তিনবার। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি মাত্র ১৫২ মিটার দৈর্ঘ্যের বরিশাল নগরসংলগ্ন তালতলী সেতুর কাজ।
বরিশালের শায়েস্তাবাদে নদীর ওপর অসমাপ্ত তালতলী সেতু
সেতুসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘কত বছর আগে কাজ শুরু হইছে কইতে পারমু না। তয় ওই সময় শায়েস্তাবাদের বাসিন্দা রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি ঘটা করে উদ্বোধন করেন।’ আরেক বাসিন্দা দুলাল খান বলেন, ‘মনে হয় ১৬-১৭ বছর আগে কাজ শুরু হইছিল।’সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল নগরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী শায়েস্তাবাদ, মুলাদী ও হিজলার যোগাযোগ উন্নত করার লক্ষ্যে ১৫২ দশমিক ৪০ মিটার দীর্ঘ বেইলি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৩৫৬ দিন সময় নির্ধারণ করে ইস্টার্ন লিমিটেডের অনুকূলে ১৯৯৪ সালের ২৯ জুন কার্যাদেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় কাজ সমাপ্ত না করায় ১৯৯৫ সালের ২২ নভেম্বর ১০ ভাগ জরিমানা আদায়সহ ওই কার্যাদেশ বাতিল করা হয়।
১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে এক কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৪ টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধার্য করে মেসার্স মৈত্রী ইন্টারন্যাশনালকে ১৫ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা দিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ১৯৯৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তৎ কালীন রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস সেতুর কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দরপত্র অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ৮ জুলাই কাজ শেষ না হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় কাজ। ২০০৪ সাল পর্যন্ত নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের টালবাহানায় সেতুটির কাজ বন্ধ থাকে। পুনরায় দেড় কোটি টাকার বাজেট সম্প্রসারণ করে চার কোটি ৭৮ লাখ ১৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়। এ সময় নকশা পরিবর্তন করে পিসি গার্ডার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সওজ।
২০০৬ সলের ১৬ অক্টোবর বরিশাল সিটি করপোরেশনের তৎ কালীন মেয়র ও স্থানীয় সাংসদ মজিবর রহমান সরোয়ার আবারও কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় কাজের গতি বাড়লেও একটি কংক্রিট স্তম্ভ (গাডার) বাঁকা হয়ে গেলে আবারও অনিশ্চয়তায় পড়ে নির্মাণকাজ। ৩০ জুন ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও সেতু অসম্পূর্ণই থেকে যায়। ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর পুনঃ দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ সময় সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় চার কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৪৩৯ টাকা। গত বছরের ১৫ মার্চ ১৮ মাসের সময়সীমা দিয়ে নতুন করে কার্যাদেশ দেওয়া হয় মো. মাহফুজ খানকে। এবার কাজের উদ্বোধন করেন বর্তমান সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। আগামী আগস্টে ওই কাজ শেষ হওয়ার কথা।
সেতুর বর্তমান ব্যবস্থাপক মো. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে জানান, সেতুর কাজ প্রায় শেষ। রেলিং ও সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। সওজ বিভাগের বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম শামছউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরে অসমাপ্ত সেতু সমাপ্তকরণের আওতায় তালতলী সেতুর জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া গেলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।