ইংল্যান্ডের স্কুলগুলো সম্পর্কে সম্প্রতি অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, এসব স্কুলগুলোতে ছাত্রদের এমন সব বই পড়ানো হচ্ছে, যেখানে অর্গাজম এবং রতিক্রিয়ার মতো বিষয়গুলো খোলামেলাভাবে উঠে এসেছে। ‘ক্রিস্টিয়ান ইনস্টিটিউট’ নামের একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে করা এক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে, পাঁচ বছর বয়সীদের উপযোগী একটি বইয়ে এমন একটি কার্টুন ছাপা হয়েছে যেখানে দু’জন নর-নারী যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত এবং একই বইয়ের অন্যত্র যৌনতাকে ‘স্কিপিং’ এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শেষদিকের এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শুরুর দিকের ছাত্রদের উপযোগী একটি বইয়ে এমন একটি কার্ড গেইম শেখানো হয়েছে যেখানে ছাত্ররা ‘অ্যানাল সেক্স এবং ‘ওরাল সেক্স’-এর মতো পরিভাষাগুলো রপ্ত করছে।
ক্রিস্টিয়ান ইনস্টিটিউট নামের ওই চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানটি বাইবেলের শিক্ষা প্রচার করে থাকে। তারা বলেছে, যৌন শিক্ষার নামে ছাত্রদের কী শেখানো হচ্ছে সেসম্পর্কে বাবা-মায়েদেরকে এতদিন অন্ধকারে রাখা হয়েছে। অবিলম্বে এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে পাঠ্যক্রম পুননিরীক্ষার দাবি তুলেছে তারা। সাথে সাথে ক্লাসরুমে কী পড়ানো হয়ে থাকে সে ব্যাপারে বাবা-মায়েদেরকে ভেটো প্রদানের ক্ষমতা দেবার দাবিও তারা করেছে। বর্তমানে অবশ্য বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের যৌনশিক্ষা প্রদান থেকে বিরত রাখার অধিকার রাখেন।
প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র মাইক জাজ বলেন, অধিকাংশ বাবা-মা-ই পাঠ্যক্রমে এধরনের যৌনতার কথা জানতে পারলে কষ্ট পাবেন। তিনি আরো বলেন, এসব পাঠ্যসূচির নিরীক্ষণে এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে ভেটো দেবার ব্যাপারে বাবা মায়েদের অবশ্যই পূর্ণ অধিকার থাকা উচিত।
উল্লেখ্য, পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সীদের জন্যে বর্তমানে যৌনশিক্ষা বাধ্যতামূলক নয়। এব্যাপারে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতিমালা আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্কুলগুলোতে এটিকে ব্যক্তিগত, সামাজিক, স্বাস্থ্যগত এবং অর্থনৈতিক শিক্ষার ক্লাসগুলোতে ‘বাধ্যতামূলক নয়’ এই মর্মে পড়ানো হয়ে থাকে।
সবশেষে গবেষণায় ক্রিস্টিয়ান ইনস্টিটিউট দেখতে পেরেছে যে, প্রাথমিক স্তরের যৌনশিক্ষার বইগুলোর পাঠ্যবিষয় সম্পর্কে স্থানীয় কাউন্সিলগুলো থেকে সুপারিশ করা হয়।
ইনস্টিটিউট থেকে দেখানো হয়েছে যে, ডেভন এবং উইলথশায়ার এলাকায় ‘কিভাবে আমি শুরু করব’ এই নামের পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের উপযোগী একটি বইয়ে একটি স্কেচ আঁকা হয়েছে যেখানে বাবা-মা যৌনকর্মে লিপ্ত। নিচে লেখা হয়েছে, তারে এভাবেই নিজেদের আলিঙ্গন করেছেন, তোমার বাবার পেনিস হালকাভাবে তোমার মায়ের যোনিতে প্রবেশ করেছে এবং তার স্পার্ম সেখানে প্রবাহিত হয়েছে।
‘আমি কোত্থেকে এলাম’ নামের সাত বছর বয়সীদের জন্যে আরেকটি বইয়ে ছাত্রদেরকে ব্রেস্টএর নানারকম অশ্লীল নাম শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
সাত বছরের বেশি বালকদের জন্যে সুপারিশকৃত ‘আমার ক্ষেত্রে কী ঘটছে?’ নামের আরেকটি বইয়ে ‘একটি নোংরা সত্য’ নামের শিরোনামে ছাত্রদেরকে রতিক্রিয়া এবং হস্তমৈথুন সম্পর্কে শেখানো হয়েছে যেখানে একটি লাইনে বলা হয়েছে, “বালকেরা তাদের পেনিসকে উপরে নিচে ঘর্ষণ করে পুলক লাভ করতে পারে।
এসো যৌনতা নিয়ে আলোচনা করি’ নামের দশোর্ধ্বদের জন্যে একটি বইয়ে ‘সমকামিতা’ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলা হয়েছে, বাচ্চারা বড় হতে শুরু করলে বালকেরা অন্য বালকদের প্রতি এবং বালিকারা অন্য বালিকাদের প্রতি কৌতূহলী হয়ে ওঠে। তারা একে অন্যের অঙ্গগুলো দেখে এবং স্পর্শও করে। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
কতগুলো স্কুল এসব বইকে জাতীয়ভাবে ব্যবহার করছে এবং কোন কোন এলাকায় এগুলো পড়ানো হচ্ছে সেসম্পর্কে কিছু জানা যায় নি। দেখা গেছে, স্কুলভেদে বইয়ের আলোচ্যসূচি ভিন্নতর হয়েছে।
এদিকে শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, স্কুলগুলোর প্রতি সরকার কোনো শিক্ষা উপকরণ চাপিয়ে দেয় নি। আইন অনুসারে, স্কুলগুলো নিজেরাই তাদের শিক্ষার্থীদের বয়স এবং বোধগম্যতার ওপর ভিত্তি করে যৌন শিক্ষার মতো বিষয়গুলোর পাঠ্যসূচি নির্ধারণ করে থাকে। এগুলোর নির্ধারণে শিক্ষকরা তাদের পেশাগত দক্ষতাকে কাজে লাগাবেন এবং বাবা-মায়েরাও এতে অংশ নেবেন। শিক্ষার এসব উপকরণ সম্পর্কে বাবা-মায়েরা উদ্বিগ্ন হলে তারা তাদের সন্তানদেরকে এসব ক্লাস থেকে উঠিয়ে নিতে পারেন।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।