বাংলাদেশ
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলা বিষয়ের ‘বাংলাদেশ’ কবিতা থেকে সৃজনশীল পদ্ধতির একটি নমুনা প্রশ্নোত্তর আলোচনা করব। এ ধরনের অন্য প্রশ্নোত্তরের জন্য বিষয়বস্তুটি ভালভাবে পড়বে।
# নিচের উদ্ধৃতিটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর, অন্ধকারে জেগে ওঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দোয়েল পাখি।/ — — — — — —
বাংলার নগর বন্দর গঞ্জ বাষট্টি হাজার গ্রাম
ধ্বংসস্তূপের থেকে সাত কোটি ফুল / হয়ে ফোটে।
প্রশ্ন: ক. ‘বাংলাদেশ’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?
প্রশ্ন: খ. ‘বহু মিশ্র প্রাণের সংসারে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
প্রশ্ন: গ. অনুচ্ছেদটিতে প্রথম স্তবকের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ’ কবিতার প্রথম স্তবকের কোন বিষয়ের মিল আছে, তা ব্যাখ্যা করো।
প্রশ্ন: ঘ. অনুচ্ছেদটিতে ‘বাংলাদেশ’ কবিতার অনেকটাই প্রতিফলন—এ বক্তব্যটি কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ক. বাংলাদেশ কবিতাটি ‘অক্ষরবৃত্ত’ ছন্দে রচিত।
উত্তর: খ. ‘বহু মিশ্র প্রাণের সংসারে’ বলতে বহুকাল ধরে বহু জাতির বিভিন্ন ও বিচিত্র জনস্রোতের মিশ্রণে গড়ে ওঠা বাঙালি জাতির কথা বলা হয়েছে। ইন্দো-ভূমধ্য নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন জাতির লোকেরা এসে এখানে প্রথম বসতি গড়েছে। তাদের সঙ্গে মিশেছে দ্রাবিড়, অস্ট্রিক ও মঙ্গোলীয় রক্ত। এই জনগোষ্ঠীর প্রভাব পড়েছে আমাদের ভাষায়, সংস্কৃতিতে, আচার-আচরণে ধর্মবোধ ও বিশ্বাসে। এ জন্যই বাংলাকে বহুমিশ্র প্রাণের সংসার বলা হয়েছে।
উত্তর: গ. অনুচ্ছেদের প্রথম স্তবকের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ’ কবিতার প্রথম স্তবকের বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপময় প্রকৃতির মিল আছে। একই সঙ্গে আবহমান বাংলার প্রকৃতি ও মানুষের সংহতিও এখানে লক্ষণীয়।
অনুচ্ছেদের প্রথম স্তবকের কবি পৃথিবী ঘুরে দেখেননি—দেখেননি পৃথক রূপ ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্য। তিনি দেখেছেন বাংলাকে, বাংলার বৈচিত্র্যময় রূপ ও সৌন্দর্যকে। দেখে মুগ্ধ হয়েছেন, অভিভূত হয়েছেন, চমৎকৃত হয়েছেন। সারা পৃথিবীর রূপকে তিনি ‘বাংলার মুখ’-এ খুঁজে পেয়েছেন। যে রূপ সারা পৃথিবীর সৌন্দর্য বিভাগের আবার অন্ধকারে জেগে উঠে কবি দেখেন, ডুমুরের গাছে ছাতার মতো বড় পাতাটির নিচে বসে আছে ভোরের দোয়েল পাখি। পৃথিবীর সর্বত্র এ রূপে দৃশ্যমান কি না কবি জানেন না। আর দৃশ্যমান হলেও যেহেতু তা বাংলায়ই আছে, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজে দেখার প্রয়োজন অনুভূত হয় না। কেননা, বাংলায়ই তার ভালোবাসার শেষ আশ্রয়স্থল।
‘বাংলাদেশ’ কবিতার প্রথম স্তবকেও যমুনা, পদ্মার তীরে তীরে রুপালি জলের ধারে গড়ে ওঠা যে আবহমান বাংলাকে কবি দেখেছেন, তা অপরূপ অতুলনীয়। এ বাংলায় প্রতিটি বাড়িঘর, গ্রাম আম-জাম-নারকেলসহ অসংখ্য গাছে ঘেরা। মাঠের পর মাঠ সবুজ সোনালি ধানে দ্যুতিময়। এই বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির মধ্যে অন্তর্লীন হয়ে আছে বাংলার রূপ ও সৌন্দর্যের প্রতি এ দেশের মানুষের আবহমান অনুরাগ ও প্রেম। এ দেশের প্রকৃতির কোলে লালিত মানুষ এর রূপকে ভালোবেসেই এতে একাকার হয়ে গেছে।
উত্তর: ঘ. অনুচ্ছেদটি কবি অমিয় চক্রবর্তী রচিত ‘বাংলাদেশ’ কবিতার অনেকটাই ‘প্রতিফলন’-এ বক্তব্যটি নিঃসন্দেহে যুক্তিযুক্ত। কেননা, প্রকৃতির রূপ ও সৌন্দর্যের কারণে বাংলার প্রতি মানুষের ভালোবাসা এবং হানাদার বাহিনীর আকস্মিক আক্রমণে বিপর্যস্ত বাংলার আবার ফুল হয়ে ফুটে ওঠার কথা এতে বিধৃত হয়েছে, যা ‘বাংলাদেশ’ কবিতার অনেকাংশ জুড়ে বর্ণিত হয়েছে।
অমিয় চক্রবর্তীর ‘বাংলাদেশ’ কবিতায় রুপালি নদীবিধৌত বাংলাদেশের প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্যস্নিগ্ধ অজস্র পল্লি এ দেশের প্রাণ। আম-জাম-নারকেল ঘেরা এসব পল্লির চারদিকে দিগন্তবিস্তৃত আমন ধানের খেতে বাংলার রূপ অন্তর্লীন হয়ে আছে। অথচ সেই অকৃত্রিম রূপময় অতর্কিতে ঢুকেছে বুনোদল।
নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে বাংলার শান্ত-সংহত জীবন। এ দেশের মানুষের মধ্যকার অভিন্ন সত্তাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামী মানুষ তাদের পরাজিত করে অর্জন করেছে স্বাধীনতা। জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল অনন্ত অক্ষয় মূর্তি।
প্রদত্ত অনুচ্ছেদের দুটি স্তবকে ‘বাংলাদেশ’ কবিতার পুরো বক্তব্য আসেনি। তবে অনেকটাই এসেছে। প্রথম স্তবকে কবি বাংলার রূপের মধ্যে পৃথিবীর রূপ-বৈচিত্র্যকে অনুভব করেছেন। তাই পৃথিবীর রূপের প্রতি কোনো আকর্ষণ তাঁর নেই। তিনি বাংলাদেশকে ভালোবেসেছেন একান্ত ও অকৃত্রিমভাবে। দ্বিতীয় স্তবকে হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে বিধ্বস্ত বাংলার নগর-বন্দর-গঞ্জ বাষট্টি হাজার গ্রাম। তার পরও সংগ্রামী মানুষের প্রত্যক্ষ সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বুনোদলকে পরাজিত করেছেন। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ফুল হয়ে ফুটেছে সাত কোটি মানুষ অর্থাৎ স্বাধীনতা লাভ করেছে।
কাজেই উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে অনুচ্ছেদটি ‘বাংলাদেশ’ কবিতার অনেকটাই প্রতিফলন।
0 আপনার মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা রাজনীতিক বা সামাজিক ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।